ছাতনা-মুকুটমণিপুর রেলপথের কাজে শিলান্যাস হয়েছিল ভেদুয়াশোলে। —নিজস্ব চিত্র।
ছাতনা-মুকুটমণিপুর রেলপথ চালু হোক, চেয়েছিলেন রেলের স্থায়ী কমিটির প্রাক্তন চেয়ারম্যান বাসুদেব আচারিয়া। তাই তাঁর মৃত্যুতে ফের চর্চায় ফিরে এসেছে ওই অসম্পূর্ণ রেলপথের প্রসঙ্গ। তাঁর স্বপ্ন পূরণ করতে আন্দোলনে নামতে আজ, শনিবার খাতড়ার এবিটিএ হলে গণ কনভেনশনের ডাক দিয়েছে বাঁকুড়া-মুকুটমণিপুর (ভায়া ছাতনা) রেলপথ স্থাপন আন্দোলন কমিটি।
বিভিন্ন সূত্রের দাবি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন বাঁকুড়া জেলার দুই পর্যটন কেন্দ্র শুশুনিয়া ও মুকুটমণিপুরকে জুড়ে ট্রেন চালাতে উদ্যোগী হয় রেল। পরে ছাতনার দিক থেকে জমি অধিগ্রহণ করে শুরু হয় রেলপথ তৈরির প্রাথমিক কাজ। লালুপ্রসাদ যাদব যখন রেলমন্ত্রী, তখন রেলের স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান বাসুদেব আচারিয়ার উদ্যোগে ২০০৯ সালে ইঁদপুরের ভেদুয়াশোলে নিউ ভেদুয়াশোল স্টেশনের শিলান্যাস করা হয়। সেখানে ও ছাতনার কাছে লাইন পাতার জন্য মাটি খোঁড়া হলেও কাজ বেশি এগোয়নি।
সূত্রের দাবি, ছাতনা থেকে মুকুটমণিপুর পর্যন্ত ৪৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রেলপথ নির্মাণে প্রয়োজন ৮০০ একরের কিছুটা বেশি জমি। প্রাথমিক ভাবে তার অনেকখানি অধিগ্রহণ করা হলেও কিছুটা নানা জটিলতায় আটকে রয়েছে।
মাসখানেক আগে রেল মন্ত্রক অসমাপ্ত রেল প্রকল্পগুলির কাজে অগ্রগতি আনতে জমি অধিগ্রহণের জন্য চিঠি দেয় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে। সেই তালিকায় নাম রয়েছে ছাতনা-মুকুটমণিপুর রেলপথের। জানাজানি হতেই আবার নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন এই দুই পর্যটন কেন্দ্রের ব্যবসায়ী ও স্থানীয় বাসিন্দারা।
মুকুটমণিপুর হোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুদীপকুমার সাহু বলেন, ‘‘বহুদিন ধরেই মুকুটমণিপুর রেল প্রকল্পের কাজ বন্ধ। ওই রেলপথ চালু হলে আগামী দিনে রাজ্যের পর্যটন মানচিত্রে মুকুটমণিপুর বিশেষ জায়গা করে নেবে। শুধু মুকুটমণিপুরই নয়, জেলার বৃহৎ অংশের বহু বাসিন্দার কর্মসংস্থানের পথ খুলে যাবে।’’
ওই রেলপথ দ্রুত নির্মাণের দাবিতে পুজোর আগে খাতড়ায় গণ কনভেনশন করে বাঁকুড়া-মুকুটমণিপুর (ভায়া ছাতনা) রেলপথ স্থাপন কমিটি। সেখানে ছিলেন সিপিএমের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক অজিত পতি। তিনি বলেন, ‘‘রেলওয়ে স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান থাকাকালীন আমাদের দলের নেতা বাসুদেব আচারিয়া ছাতনা-মুকুটমণিপুর রেল প্রকল্পের কাজ ত্বরান্বিত করতে উঠেপড়ে লাগেন। সেই সময় জমি অধিগ্রহণের কাজও প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছিল। অল্প কিছু জায়গায় সমস্যা ছিল। তবে তা কাটিয়া ওঠা কোনও সমস্যা ছিল না। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকার সময়েই এই প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ওই সময় থেকেই কেন্দ্র ও রাজ্য কেউই এই রেলপথ নিয়ে আগ্রহ দেখায়নি।’’
বাঁকুড়া-মুকুটমণিপুর (ভায়া ছাতনা) রেলপথ স্থাপন আন্দোলন কমিটির আহ্বায়ক মধুসূদন মাহাতোর দাবি, ‘‘২০১৪ সালে বাসুদেববাবুর পরাজয়ের পর এই প্রকল্প লাল ফিতের ফাঁসে আটকে গিয়েছে। রেল প্রতি বছর এক হাজার টাকা করে বরাদ্দ করে প্রকল্পটিকে বাঁচিয়ে রেখেছে। কিন্তু জমি অধিগ্রহণের দায়িত্ব রাজ্য সরকারের। সেই কাজ প্রায় ৮০ শতাংশ হয়ে গেলেও বাকিটা হচ্ছে না।’’
কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী তথা বাঁকুড়ার সাংসদ সুভাষ সরকারের দাবি, ‘‘মুকুটমণিপুর রেলপথ আমাদের সবার কাছেই একটি স্বপ্নের প্রকল্প। দীর্ঘদিন হল এই প্রকল্পটি রেল বরাদ্দ করলেও কাজ এগোয়নি। আমাদের রাজ্য জুড়ে এমন অন্তত ৬১টি প্রকল্প রয়েছে, যেগুলি রেল বরাদ্দ করলেও রাজ্য সরকার জমি দিতে না পারায় কাজ এগোচ্ছে না।’’ স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের খাদ্য প্রতিমন্ত্রী জ্যোৎস্না মান্ডির দাবি, ‘‘মুকুটমণিপুর পর্যটন কেন্দ্র এবং এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে আমরাও এই প্রকল্পের পক্ষে রয়েছি। সঠিক জায়গায় এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দাবি জানাব।’’
বাঁকুড়া-মুকুটমণিপুর (ভায়া ছাতনা) রেলপথ স্থাপন কমিটির আহ্বায়ক মধুসূদনের দাবি, অবিলম্বে এলাকার মানুষের দাবি মেনে এই রেলপথ গড়ার দাবিতে বাসুদেববাবু নিজেই পুজোর আগে খাতড়ায় গণ কনভেনশনের ডাক দিয়েছিলেন। অসুস্থ হয়ে পড়ায় তিনি হাজির হতে পারেননি। জানিয়েছিলেন, পরের কর্মসূচিতে থাকবেন। মধুসূদন বলেন, ‘‘তিনি আজ নেই। এখন আন্দোলন গড়ে তোলা ছাড়া আমাদের কাছে দ্বিতীয় কোনও রাস্তা নেই। তাঁর স্বপ্নের বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আন্দোলনই একমাত্র পথ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy