Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
corona virus

ঘরবন্দি থাকল পুরো পুরুলিয়া

‘আনলক’-পর্ব কাটিয়ে বৃহস্পতিবার যখন নতুন করে সাপ্তাহিক ‘লকডাউন’ শুরু হল, পুরুলিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় দেড়শোর কাছাকাছি পৌঁছেছে।

n চটি ফেলে দৌড়: পুরুলিয়া শহরের হাটমোড়ে। ছবি: সুজিত মাহাতো

n চটি ফেলে দৌড়: পুরুলিয়া শহরের হাটমোড়ে। ছবি: সুজিত মাহাতো

নিজস্ব প্রতিবেদন
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০২০ ০১:০৪
Share: Save:

আগের ‘লকডাউন’-এর পর্বের দীর্ঘ সময় জুড়ে পুরুলিয়া জেলা ছিল ‘গ্রিন জ়োন’-এ। মে-র একেবারে শেষে প্রথম আক্রান্তের হদিস মেলে। ‘আনলক’-পর্ব কাটিয়ে বৃহস্পতিবার যখন নতুন করে সাপ্তাহিক ‘লকডাউন’ শুরু হল, পুরুলিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় দেড়শোর কাছাকাছি পৌঁছেছে। এ দিন জেলার অধিকাংশ এলাকার রাস্তাঘাট কার্যত জনশূন্য ছিল। পুলিশ আধিকারিকদের একাংশের দাবি, আগে হাটেবাজারে ভিড় সরাতে অনেক ক্ষেত্রেই জোর খাটাতে হয়েছিল। বৃহস্পতিবার রাস্তায় পুলিশ থাকলেও তাদের কাজ অনেকটাই মসৃণ হয়েছে। পুলিশ ও প্রশাসনের আধিকারিকদের একাংশের মতে, প্রতিদিন বাড়তে থাকা আক্রান্তের সংখ্যা দেখে অধিকাংশ মানুষজন আতঙ্কে এ দিন ঘর থেকে বেরোননি।
গত বারের ‘লকডাউন’-এ আনাজ বাজার আর মুদির দোকান খোলা থাকলেও এ বার বন্ধ ছিল। বুধবার বিকালেই পুরুলিয়ার সমস্ত থানা মাইক নিয়ে ঘুরে-ঘুরে প্রচার করেছে। বৃহস্পতিবার ‘লকডাউন’-এ কোন কোন ক্ষেত্র খোলা থাকবে, জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ‘লকডাউন’ না মানলে যে সরাসরি আইনি পদক্ষেপ করা হবে, সে কথাও আগাম জানিয়ে দেওয়া হয়।
এ দিন সকাল থেকে বিভিন্ন থানার পুলিশ ছোট-ছোট দলে ভাগ হয়ে নানা এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। তবে লোকজন রাস্তায় না থাকায় সেই অর্থে ধরপাকড় করতে হয়নি। আগের বারের ‘লকডাউন’-এ গ্রামাঞ্চলে পাড়ায়, মন্দিরে আড্ডা বন্ধ করাটাই পুলিশের মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এ দিন পুরুলিয়ার প্রায় সমস্ত ব্লক এলাকা ছিল সুনসান। রাস্তা দিয়ে যাদের যেতে দেখা গিয়েছে, প্রায় সবাই সটান মাঠে চাষের কাজে চলে গিয়েছেন।
তবে বিক্ষিপ্ত কিছু অনিয়মের ছবি এ দিন দেখা গিয়েছে। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার এস সেলভামুরুগন জানিয়েছেন, বিকেল ৫টা পর্যন্ত জেলা জুড়ে ১২২ জনকে ‘লকডাউন’-এর বিধি ভাঙার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘কন্টেনমেন্টে জ়োনগুলিতে নজরদারি রাখতে সকালে ড্রোন ওড়ানো হয়েছিল।’’
পুরুলিয়া শহরে বিনা দরকারে কিছু লোক রাস্তায় বেরিয়েছিলেন। মোতায়েন থাকা পুলিশকর্মীরা তাঁদের আটকান। পুরুলিয়া শহরের হাটের মোড়ে ছিলেন ওসি (ট্রাফিক) শেখর মিত্র। এক ব্যক্তি মোটরবাইক নিয়ে যাচ্ছিলেন। পুলিশের কাছে দাবি করেন, বাবার ওষুধ কিনতে যাচ্ছেন। এ দিকে, সঙ্গে ছিল ছেলের ‘প্রেসক্রিপশন’। পুলিশ তাঁকে বেশ কিছুক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করে। বাইরে বেরিয়ে মোবাইলে ফাঁকা রাস্তার ভিডিয়ো তুলছিলেন এক যুবক। আটক করা হয় তাঁকে। মানবাজারে ধর্মশালায় পুলিশ লাঠি উঁচিয়ে তেড়ে গিয়ে তাসের আড্ডা তুলে দেয়। ঝালদার বাঁধাঘাট ও স্কুলমোড় এলাকায় পুলিশের টহলদারি গাড়ি গিয়ে আড্ডা বন্ধ করে।
এ দিন ভোর থেকেই আন্তঃজেলা ও আন্তঃরাজ্য সীমানায় পুলিশের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। নিতুড়িয়া, পাড়া, ঝালদা, বান্দোয়ান, বোরো, বরাবাজারের মতো ঝাড়খণ্ড সীমানার জায়গাগুলিতে পুলিশ ও সিভিক ভলান্টিয়ারেরা ছিলেন। চিকিৎসা সংক্রান্ত ও জরুরি পণ্য পরিবহণ করা গাড়ি ছাড়া, কিছুই ঢুকতে পারেনি। ঝালদা ও বান্দোয়ান এলাকায় কিছু মেঠো রাস্তা ঝাড়খণ্ড চলে গিয়েছে। সেগুলিতেও সিভিক ভলান্টিয়ারেরা মোতায়েন ছিলেন।
ওষুধ বিক্রেতাদের সংগঠন বিসিডিএ-র পুরুলিয়ার সভাপতি আনন্দ কেডিয়া বলেন, ‘‘লকডাউনে ওষুধের দোকান খোলা থাকলেও ক্রেতার সংখ্যা ছিল খুবই কম।” তাঁর মতে, সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া দেখে মানুষজন সচেতন ভাবেই ‘লকডাউন’-এ সাড়া দিয়েছেন। পুরুলিয়ার বিদায়ী কাউন্সিলর বিভাসরঞ্জন দাসও বলেন, ‘‘জেলায় করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার কারণেই বাসিন্দারা স্বেচ্ছায় ঘরবন্দি ছিলেন।”

অন্য বিষয়গুলি:

Corona Virus Lockdown Purulia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy