Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
COVID-19 vaccines

অ্যাপের গোলমালে প্রথম দিনে হোঁচট

বিষ্ণুপুর স্বাস্থ্যজেলায় খোঁজ নিতে গিয়ে দেখা গিয়েছে, প্রতিষেধক প্রাপক কিছু চিকিৎসকও এ দিন কোনও কোনও কেন্দ্রে গরহাজির ছিলেন। ওই চিকিৎসকদের না আসার কারণ অবশ্য জানা যায়নি। 

আয়োজন: বিষ্ণুপুর নগর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রতিষেধক দেওয়া চলছে। ছবি: শুভ্র মিত্র।

আয়োজন: বিষ্ণুপুর নগর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রতিষেধক দেওয়া চলছে। ছবি: শুভ্র মিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০২১ ০১:৩৮
Share: Save:

দু’টি জেলার তিনটি স্বাস্থ্যজেলা মিলিয়ে কেন্দ্র ছিল মোট চোদ্দোটি। কথা ছিল, প্রথম দিনে প্রতিটি কেন্দ্র থেকে একশো জনকে করোনার প্রতিষেধক দেওয়া হবে। শুধু পুরুলিয়ার ঝালদা ২ ব্লকের কোটশিলা গ্রামীণ হাসপাতালে নথিভুক্ত সবাই প্রতিষেধক নিয়েছেন। সব থেকে কম প্রতিষেধক দেওয়া হয়েছে বাঁকুড়া মেডিক্যালে। তিরিশ জনকে। তবে বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুর স্বাস্থ্যজেলার কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, ‘কো-উইন’ নামে একটি অ্যাপের মাধ্যমে প্রতিষেধক দেওয়ার পুরো প্রক্রিয়াটি পরিচালনা করা হচ্ছে। শুক্রবার থেকে ওই অ্যাপটি কাজ না করাতেই এ দিন সমস্যা হয়েছে।

স্বাস্থ্যকর্তারা জানাচ্ছেন, প্রতিষেধক প্রাপকদের নাম আগে থেকে তোলা হয়েছিল ওই অ্যাপে। সেখান থেকেই তাঁদের মেসেজ যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শুক্রবার থেকে অ্যাপটি কাজ করছে না বলে জানাচ্ছেন বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুর স্বাস্থ্যজেলার কর্তারা। ফলে, ফোন করে প্রাপকদের ডেকে পাঠাতে হয়েছে। তাঁদের তথ্য খাতা-কলমে নথিভুক্ত করতে হয়েছে। দুই স্বাস্থ্যজেলার কর্তাদের একাংশের দাবি, এই সমস্যার জন্যই প্রথম দিন খুব বেশি জনকে প্রতিষেধক দেওয়া যায়নি। পুরুলিয়া মেডিক্যাল ছাড়া অন্য পাঁচটি কেন্দ্রেও অ্যাপটি কাজ করেনি বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। জেলার উপমুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বুদ্ধদেব মণ্ডল বলেন, ‘‘অ্যাপ কাজ না করায় বিভিন্ন কেন্দ্রে খুবই সমস্যা হয়েছে।’’

পুরুলিয়ায় ছ’শো জনের প্রতিষেধক নেওয়ার কথা ছিল। নিয়েছেন মোট ৪২৮ জন। বাঁকুড়া স্বাস্থ্যজেলায় নথিভুক্ত পাঁচশো জনের মধ্যে প্রতিষেধক নিয়েছেন আড়াইশো জন। বিষ্ণুপুর স্বাস্থ্যজেলায় নথিভুক্ত তিনশো জনের মধ্যে নিয়েছেন ২১১ জন। প্রতিষেধক নেওয়ার পরে সবাইকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। কারও কোনও সমস্যা হয়নি বলেই স্বাস্থ্যকর্তাদের থেকে জানা গিয়েছে। অনেক স্বাস্থ্যকর্মী পর্যবেক্ষণে থাকার পরে আবার কাজে যোগ দিয়েছেন। পুরুলিয়ার মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক অনিলকুমার দত্ত বলেন, ‘‘এ দিন প্রতিষেধক নেওয়া কারও কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়নি।’’

কেন প্রতিষেধক দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা গেল না? পুরুলিয়ার এক ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, ‘‘আমরা অনেককে ফোন করে ডেকেছিলাম। দেখা গিয়েছে, স্বাস্থ্যকর্মীদের অধিকাংশই নিয়েছেন। কিন্তু অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী বা অন্য পেশায় থাকা কোভিড যোদ্ধাদের অনেকে পিছিয়ে যাচ্ছেন। তাঁদের বক্তব্য, কিছু দিন দেখে তার পরে নেবেন।’’ তবে বিষ্ণুপুর স্বাস্থ্যজেলায় খোঁজ নিতে গিয়ে দেখা গিয়েছে, প্রতিষেধক প্রাপক কিছু চিকিৎসকও এ দিন কোনও কোনও কেন্দ্রে গরহাজির ছিলেন। ওই চিকিৎসকদের না আসার কারণ অবশ্য জানা যায়নি।

এ দিন কেন্দ্রগুলিতে হাজির ছিলেন তিনটি স্বাস্থ্যজেলার কর্তারা। বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ বাঁকুড়া মেডিক্যালে প্রথম করোনার প্রতিষেধক দেওয়া হয় ওই হাসপাতালেরই এক চতুর্থ শ্রেণির কর্মীকে। বছর পঞ্চান্নর ওই ব্যক্তির ব্লাড সুগার ও উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘ইঞ্জেকশন নিতে আমার কোনও কালেই ভয় করে না। একটা ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে খুব ভাল লাগছে।’’ তাঁর পরেই প্রতিষেধক নেন মেডিক্যালের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের প্রধান। বিষ্ণুপুর জেলা হাসপাতালের বিদ্যুৎ বিভাগের এক কর্মী প্রতিষেধক নেওয়ার পরে বলেন, ‘‘প্রথমে একটু সংশয়ে ছিলাম। তবে নেওয়ার পরে কোনও রকমের সমস্যাই হয়নি।’’

পুরুলিয়ায় সকাল ৯টা থেকে প্রতিষেধক দেওয়া শুরু হওয়ার কথা ছিল। তবে কয়েকটি কেন্দ্রে প্রক্রিয়া শুরু হতে কিছু দেরি হয়। তালিকায় নাম পরে থাকলেও লোকজনের দ্বিধা কাটাতে প্রথমেই প্রতিষেধক নিয়েছেন হুড়া ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য আধিকারিক কালীপদ সোরেন। তিনি বলেন, ‘‘অনেকেই অনেক কিছু বলছিলেন। প্রতিষেধক নিয়ে দিনভর কাজ করেছি।’’ জেলার স্বাস্থ্য কর্তারা জানিয়েছেন, এ দিন তালিকায় নাম থাকা যাঁরা এ দিন আসেননি, তাঁদের প্রতিষেধক দেওয়ার ব্যাপারে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশ মতো পদক্ষেপ করা হবে।

অন্য বিষয়গুলি:

COVID-19 vaccines Coronavirus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE