Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪

বৃষ্টির আঁচে আগুন আনাজ

জেলার আনাজ চাষিদের   আক্ষেপ, মাঠেই নষ্ট হয়েছে ফুলকপি, টম্যাটো, লঙ্কা, লাউ, ঢ্যাঁড়স, কুঁদরি, বেগুন, বড়বটি, মুলো, পালং শাক।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সিউড়ি শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৯ ০০:২০
Share: Save:

এ বার মরসুমের প্রথমে বর্ষা যতটা কৃপণ ছিল, শেষবেলায় ততই ছিল দরাজ। পুজোর আগে টানা এক সপ্তাহ, এমনকী দশমী-একাদশীতে লাগাতার বৃষ্টিতে আনাজ চাষে প্রচুর ক্ষতি হয়।

জেলার আনাজ চাষিদের আক্ষেপ, মাঠেই নষ্ট হয়েছে ফুলকপি, টম্যাটো, লঙ্কা, লাউ, ঢ্যাঁড়স, কুঁদরি, বেগুন, বড়বটি, মুলো, পালং শাক। তাঁদের কথায়, ‘‘ক্ষয়ক্ষতি কত হয়েছে, তা আগামী কয়েক দিন বাজারে উর্দ্ধমুখী দামেই তা টের পাওয়া যাবে। শেষবেলার বৃষ্টি ধানচাষে সুবিধা করলেও আনাজে যে যথেষ্ট ক্ষতি করেছে, তা মেনেছে জেলা কৃষি দফতরও। তবে ক্ষতির পরিমাণ কত তা জানা যায়নি।

কৃষি দফতর ও চাষিদের বক্তব্য, আনাজ চাষ কমবেশি জেলার সব জায়গায় হলেও খয়রাশোলের অজয় ও হিংলো নদীর মধ্যবর্তী চাপলা, মুক্তিনগর, পারুলবোনা, শাল বা ময়ূরাক্ষ্মীর মতো নদীঘেঁষা গ্রাম পলপাই, পাইগড়া, দুবরাজপুরের লোবা, ইলামবাজার, সিউড়ির খটঙ্গা, লাভপুরের ভোগপুর, ময়ূরেশ্বরের ভগবতীপুর, দুনা, কোটাসুর এবং নলহাটির পানিতার মতো বেশ কিছু জায়গায় তার রমরমা। এ সব অঞ্চল থেকে শুধু জেলা নয়, জেলার বাইরেও আনাজ সরবরাহ করা হয়ে থাকে।

খয়রাশোলের চাপলা গ্রামের বাপি প্রামাণিক, বালিতার চাষি ভুবন লাহা, পারুলবোনার মেঘলাল মণ্ডল, মুক্তিনগরের দিলীপ মণ্ডল বলছেন, ‘‘আমাদের গ্রাম থেকে শুধু খয়রাশোল বা দুবরাজপুর নয়, বর্ধমানের পাণ্ডবেশ্বর, হরিপুর, আসানসোল, দুর্গাপুর-সহ বিভিন্ন জায়গায় প্রতি দিন প্রচুর আনাজ সরবরাহ করা হয়। গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে অনেক খেতে জল দাঁড়ানোয় আনাজ চাষ ব্যাপক হারে মার খেয়েছে। দু’দিন ধরে রোদ উঠেছে। তাতে চারা বা আনাজ গাছ বেঁচে গেলেও নুইয়ে থাকবে।’’

নলহাটির পানিতা গ্রামেও প্রচুর আনাজ চাষ হয়। সে সব সরবরাহ করা হয় রামপুরহাট, আসানসোল এমনকী মুর্শিদাবাদেও। স্থানীয় চাষি সুকণ্ঠ কর্মকার, বীরেন লেট বলছেন, ‘‘একাধিক ফসলের ক্ষতি হয়েছে। নষ্ট হয়েছে ফুলকপির চারা।’’ পানিতার চাষি জয় মণ্ডল জানান, তাঁর জমিতে তুঁত গাছও বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলার অন্য চাষিদের মতো প্রায় একই বক্তব্য ময়ূরেশ্বর দুনা গ্রামের রওশন আলি, সুনীল দাসের। দু’জনেই জানান, বর্ষার জলে অন্য আনাজের সঙ্গে ফুলকপির চারা নষ্ট হয়েছে। লেগেছে পোকা। ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়তে হবে।

চাষিদের কথা যে মিথ্যা নয় তা জেলার যে কোনও বাজারে গেলেই টের পাওয়া যাবে। যে কোনও আনাজের দর ঘোরাফেরা করছে পঞ্চাশ টাকার এ দিকে ও দিকে। ক্রেতাদের কয়েক জন জানান, যে কাঁচালঙ্কা সপ্তাহ দু’য়েক আগে বিকিয়েছে ২০-৩০ টাকা কিলো দরে, সেটাই এখন ৫০-৮০ টাকার মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। আগে ১৫ টাকা দরে একটি ফুলকপি বিক্রি হলেও পুজোয় তা বিক্রি হয়েছে ৫০-৬০ টাকায়। দিন দুই ধরে কিছুটা কমলেও ছোট আকারের একটি ফুলকপি ২৫ টাকার নীচে মিলছে না। শীতকালীন বিন, ধনেপাতার দামও বেশি। লক্ষ্মীপুজোর আগে সবজির আগুন-দর দেখে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে গৃহস্থের।

জেলা উদ্যানপালন দফতরের এক আধিকারিক জানান, টানা বৃষ্টিতে আনাজ চাষের যথেষ্ট ক্ষতি হয়েছে। গরম কালে যে সব আনাজ (লঙ্কা, লাউ, বেগুন, ঢ্যাঁড়শ ইত্যাদি) চাষ করা হয়েছে, সেগুলি নতুন করে চাষ করা সম্ভব নয়। তবে শীতকালীন আনাজ (ফুলকপি, সিম, পালং ইত্যাদি) ফের চাষ করা যেতে পারে। তবে শর্ত একটাই, এর পরেও আবহাওয়া ভাল থাকতে হবে। তবে তাঁর কথায়, ‘‘রোদ উঠলেও বিপদ কিন্তু কাটছে না। কারণ, এই সময় খেতে রোগের আক্রমণ ঘটার সম্ভবনা খুবই বেশি।’’

আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস মানলে, বর্ষা বিদায় নেওয়ার সময় হয়েছে। গত দু’দিন রোদ ছিল ভালই। চাষিরা চাইছেন, এখন যেন দিন কয়েক আর বৃষ্টি না হয়। যদিও কৃষি দফতরের আধিকারিকেরা বলছেন, আনাজ চাষে ক্ষতি হয়েছে। তবে সেটা কিছু দিনের মধ্যেই সামলে উঠবেন চাষিরা। শেষবেলায় বৃষ্টিতে অবশ্য ধানচাষের খুব উপকার করেছে। দু-একটি মৌজার নিচু জমি ছাড়া। ভরেছে পুকুর, ডোবাও। তাতে রবি চাষে উপকার পাবেন চাষিরা।

অন্য বিষয়গুলি:

Rainfall Farmers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy