চাষিদের অভিযোগ লিখে নিচ্ছেন কৃষিমন্ত্রী। —নিজস্ব চিত্র।
চাষিদের জন্য খাজনা ও জমির মিউটেশন ফি মুকুব করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বাঁকুড়ায় এসে কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মুখ্যমন্ত্রীর কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার টের পেলেন, সেই সুবিধা চাষিদের কাছে পুরোপুরি পৌঁছচ্ছে না। এখনও মিউটেশনের জন্য টাকা চাওয়া হচ্ছে বলে তাঁদের কাছে অভিযোগ করেন কিছু চাষি। বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্য মঞ্চে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রদীপবাবু। পরে তিনি বলেন, বলেন, “এক শ্রেণির দালালের জন্যই কিছু বিভ্রান্তি ছাড়াচ্ছে। আমি ভূমি সংস্কার দফতরের রাজ্য কর্তাকে মেসেজ করেছি। বলেছি, চাষিদের মিউটেশন ফি একেবারে বাতিল হয়েছে বলে প্রচার চালাতে।’’
বৃহস্পতিবার বাঁকুড়ার রবীন্দ্র ভবনে জেলার চাষিদের নিয়ে জন-সচেতনতাসভার আয়োজন করেছিল জেলা প্রশাসন। সেখানেই উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী ও কৃষি উপদেষ্টা। ওই সভায় নিজেদের সমস্যার কথা সরাসরি তুলে ধরেন চাষিরা। সিমলাপালের চাষি অপূর্ব সিংহমহাপাত্র বলেন, “দাদুর নামে চাষের জমি রয়ে গিয়েছে। সরকারি সুবিধা পেতে সমস্যা হচ্ছে। নাম পরিবর্তন করতে গেলে মিউটেশন ফি চাওয়া হচ্ছে। অনেক চাষিরই মিউটেশন ফি জোগাড় করার ক্ষমতা নেই।” অপূর্বর পরে আরও বেশ কয়েক জন চাষি একই সমস্যার কথা বলেন। শুনে অবাক হন কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপবাবু। তিনি বলেন, “রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী চাষিদের স্বার্থের কথা ভেবে দিনরাত পরিশ্রম করে চলেছেন। অনেক আগেই তিনি চাষিদের বকেয়া খাজনা মুকুব করেছেন। চাষিদের জমিতে নাম পরিবর্তনের মিউটেশন ফি নেওয়াও নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু তার পরেও এখানে এসে শুনছি মিউটেশন ফি নেওয়া হচ্ছে।”
সভায় উপস্থিত জেলা প্রশাসনের কর্তাদের প্রদীপবাবু প্রশ্ন করেন, “চাষিদের থেকে মিউটেশন ফি না নেওয়ার সিদ্ধান্ত ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরকে ফ্লেক্সে লিখে প্রচার করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। আদৌ সেটা কি করা হচ্ছে?” প্রশাসনের কর্তারা উত্তর দিতে পারেননি। মন্ত্রী বিশেষ শিবির করে চাষিদের জমির মিউটিশনের ব্যবস্থা করার জন্য জেলাশাসককে নির্দেশ দেন। বাঁকুড়ার জেলাশাসক উমাশঙ্কর এস মঞ্চেই ঘোষণা করেন, তাড়াতাড়ি এলাকায় এলাকায় ওই শিবির হবে। প্রদীপবাবু নির্দেশ দিয়েছেন, রাজ্যের সমস্ত ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর থেকে হোর্ডিং টাঙিয়ে, লিফলেট বিলি করে প্রচার চালাতে হবে। চাষিদের জানাতে হবে, খাজনা বা মিউটেশনের খরচ আর লাগবে না।
এ দিনের সভায় মন্ত্রীর সামনে চাষিরা নিজেদের এলাকার চাষ সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যার কথাও তুলে ধরেন। জেলার বেশির ভাগ প্রান্ত থেকেই জলের অভাবের কথা উঠে এসেছে। ব্লকে ব্লকে আনাজ রাখার জন্য মজুদ ঘর বানানোর দাবিও উঠেছে। চাষিদের স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের আওতায় আনা, সাপের কামড় থেকে বাঁচতে পা ঢাকা জুতো দেওয়া, বিভিন্ন এলাকায় জোড়বাঁধ নির্মাণের দাবিও তোলা হয়েছে। চাষিদের কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন, সরকারি কেন্দ্রে ধান বিক্রি করতে গেলে অনেকটা ছাঁট ধরে নিয়ে হিসেব থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে। মান অনুযায়ী দর পাওয়া যাচ্ছে না। মন্ত্রী বলেন, “ধান্য বিক্রয় কেন্দ্রগুলিতে ঝাড়াই মেশিন রাখার বিষয়টি নিয়ে আমরা চিন্তাভাবনা চালাচ্ছি। এতে ধান থেকে নোংরা আলাদা করা যাবে।”
মু্খ্যমন্ত্রীর কৃষি উপদেষ্টা বলেন, “জল বাঁচানো খুব জরুরি। তাই বিন্দু সেচের চল বাড়ানো আমাদের লক্ষ্য। শীঘ্রই মুখ্যমন্ত্রী চাষিদের বিন্দু সেচের জন্য বিশেষ ছাড় দেওয়ার প্রকল্প আনতে চলেছেন।” মন্ত্রী বলেন, “এই জেলায় সিড হাব গড়ার জন্য একটি বিশেষ কমিটি গড়েছি। ওই কমিটি খতিয়ে দেখবে পরিকাঠামো রয়েছে কি না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy