Advertisement
১৮ অক্টোবর ২০২৪
Cyclone Remal

বৃষ্টিতে স্বস্তি ধান, আনাজ ও ফলে

বৃষ্টিপাতের হিসাব অনুযায়ী জেলার কৃষি ও উদ্যানপালন দফতরের বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, আগামী আমন মরসুমের ধানের বীজতলা তৈরিতে এই বৃষ্টি সহায়ক হবে।

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায় 
রামপুরহাট  শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০২৪ ০৯:২৬
Share: Save:

ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে দক্ষিণবঙ্গ জুড়েই বৃষ্টি হয়েছে। ব্যতিক্রম হয়নি বীরভূমও। তবে এতে আবহাওয়ার যা পরিস্থিতি, তা চাষের পক্ষে স্বস্তিদায়ক বলেই বলে মনে করছেন কৃষি ও উদ্যান পালন বিশেষজ্ঞরা।

রবিবার বিকেল থেকেই জেলায় ছিল মেঘলা আকাশ। সন্ধ্যায় জেলার বিভিন্ন জায়গায় ঝোড়ো হাওয়া এবং বিক্ষিপ্ত বৃষ্টিপাত হয়। সোমবারও তার রেশ চলে। এ দিন সকাল থেকেই জেলার সর্বত্রই হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত চলেছে। তবে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়া ছিল না। জেলা কৃষি দফতর সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত জেলায় গড় ১২.০৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।

জেলায় নলহাটিতে সব থেকে বেশি, ২৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। বোলপুরে ২০ মিলিমিটার, ইলামবাজারে ২২ মিলিমিটার, লাভপুরে ১৫ মিলিমিটার, নানুরে ১৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।বৃষ্টিপাতের সার্বিক হিসাব অনুযায়ী বোলপুর মহকুমায় সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ১৯ থেকে ২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।

তুলনামূলক ভাবে জেলার সিউড়ি এবং রামপুরহাট মহকুমায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম। রাজনগরে ৪ মিলিমিটার, দুবরাজপুরে ৭.২ মিলিমিটার, মহম্মদবাজারে ৯.৬ মিলিমিটার, সিউড়িতে ১০.৮ মিলিমিটার, রামপুরহাট ১ ব্লকে ৪ মিলিমিটার, রামপুরহাট ২ ব্লকে ৮ মিলিমিটার, মুরারই ১৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।

বৃষ্টিপাতের হিসাব অনুযায়ী জেলার কৃষি ও উদ্যানপালন দফতরের বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, আগামী আমন মরসুমের ধানের বীজতলা তৈরিতে এই বৃষ্টি সহায়ক হবে। জমিতে থাকা ভুট্টা, তিল, কচু-সহ বিভিন্ন ধরণের আনাজ চাষের পক্ষেও এই বৃষ্টিতে খুবই উপকার হল। কৃষি বিজ্ঞানীদের মতে, বৃষ্টিটা যেহেতু বেশিদিন থাকছে না সেই কারণে চাষের জমিতে মাটি ভিজে থাকবে। এর ফলে ফসলের উপকার হবে। ফলচাষিদের ক্ষেত্রে আম, লিচু ও লেবু চাষিরাও এই বৃষ্টিতে উপকৃত হবেন।

বীরভূম জেলা কৃষি দফতরের উপ কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) শিবনাথ ঘোষ জানান, জেলাতে আমন ধান রোপণ সাধারণত জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে শুরু হয়। তাঁর কথায়, ‘‘তার আগে জুন মাসে বীজতলা তৈরিতে এই বৃষ্টি চাষিদের খুব উপকার হল। চাষিরা ধুলো বীজতলা তৈরি করতে পারবেন, আবার জমিতে জল ধরে রেখে বাতান দিয়েও বীজতলা তৈরি করতে পারবে।’’ তিনি জানান, দু’ধরনের বীজতলা তৈরিতেই এই বৃষ্টিতে চাষিদের পক্ষে উপকার হল। যেহেতু খুব বেশি ঝড় হয়নি, সে কারণে এই বৃষ্টিতে ভুট্টা গাছ বড় হবে ও তিল গাছও জল পেয়ে ভাল হবে বলে তিনি জানান।

রামপুরহাট থানার আয়াস অঞ্চলের বসুইপাড়া গ্রামের চাষি নবকুমার মণ্ডল, নলহাটি থানার পানিটা গ্রামের চাষি সুভাষ মণ্ডলরা জানান, প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে কচুর পাতা লাল হয়ে মরে যাচ্ছিল। বৃষ্টিতে কচু চাষিরা উপকৃত হবেন। পাশাপাশি ঝিঙে, উচ্ছে, ঢেঁড়স, পটল, কুঁদরি, বেগুন, লঙ্কা সমস্ত ধরনের আনাজ চাষিরাই উপকৃত হবেন। চাষিরা জানান, জলের অভাবে জমিতে অনেকে সেচ দিতে পারেননি। গাছের ফুল শুকিয়ে যাচ্ছিল। বৃষ্টির জল পেয়ে গাছ সতেজ হবে। ফুল ধরবে। ফলন বেশি হবে। বাজারে আনাজের আমদানিও বাড়বে, ফলে দাম কমবে।

জেলা উদ্যান পালন বিভাগের উপ-অধিকর্তা সুফল মণ্ডল বলেন, ‘‘বৃষ্টিতে জেলায় আনাজ চাষিদের খুবই উপকার হবে। আম, লিচু ও লেবু এই সমস্ত ফলও বৃষ্টিতে আরও বেশি পুষ্ট হবে।’’ সার্বিক ভাবে তাই ঘূর্ণিঝড়ের বৃষ্টি জেলার চাষিদের জন্য কিছুটা হলেও স্বস্তি এনেছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Rampurhat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE