ডাকসাজে শোলার জায়গা নিয়েছে অন্য উপকরণ। —নিজস্ব চিত্র।
টানা চোখের দুর্গা প্রতিমা। পরণে শোলার কারুকাজ করা শ্বেতশুভ্র সাজ। ডাকের সাজ বললেই প্রথমে এই ছবিটা চোখের সামনে ভাসে। কিন্তু ডাকের সাজের মূল উপাদন শোলার অভাবে সাজের রং এবং উপাদান বদলে গিয়েছে। জলজ উদ্ভিদ শোলার জায়গা নিয়েছে জরি, চুমকি, রাংতা, বিভিন্ন রঙের লেশ, থার্মোকল, বিভিন্ন রঙের পুঁতি ইত্যাদি।
পুজোর আর কয়েকটা দিন বাকি। জেলার মালাকারেরা দেবীর সাজ তৈরিতে ব্যস্ত। তাঁদের সঙ্গেই কথা বলে জানা গেল, এখনও দু’এক জন মালাকার শোলার ডাকের সাজ তৈরি করেন ঠিকই, তবে অধিকাংশ মালাকার ডাকের সাজের উপকরণ বদলে ফেলেছেন বেশ কয়েক বছর আগেই।
খয়রাশোলের নিচিন্তা গ্রামে বেশ কয়েকটি মালাকার পরিবার আছে। দেবীর ডাকের সাজ তৈরির জন্য খ্যাতি রয়েছে তাঁদের। তাঁদেরই একজন হেমন্ত মালাকার এ বারও বেশ কয়েকটি দুর্গা প্রতিমার জন্য ডাকের সাজ তৈরি করছেন। হেমন্ত বলেন, ‘‘সাজ তৈরি করলেও তাতে শোলা ব্যবহার করিনি।কারণ, শোলার জোগান কম। তিন-চার বছর ধরে কাগজ কেটে তৈরি করা নকশার উপরে জরি, রাংতা-সহ বিভিন্ন উপাদন ব্যবহার করেই তৈরি হচ্ছে সাজ।’’ শোলার অভাবে একই পথ বেছেছেন সিউড়ি পুর এলাকার শিল্পী অশোক মালাকার ও গৌতম মালাকারেরা। দুই শিল্পী বলেন, ‘‘ডাকের সাজে শোলার ব্যবহার কমতে শুরু করেছিল বেশ কয়েক বছর ধরেই। গত তিন বছর শোলার কাজ পুরোপুরি বন্ধ।’’
দুবরাজপুরে বংশ পরম্পরায় ডাকের সাজ তৈরি করেন উত্তম মালাকার। তিনিও একই কথা বলছেন। তিনি বলেন, ‘‘আগে অগস্টে মূলত মালদহ, মু্র্শিদাবাদ এবং বর্ধমানের কাটোয়ার জলাভূমি থেকে শোলা নিয়ে হাজির হতেন কারবারিরা। তাঁদের থেকেই শোলা সংগ্রহ করতাম।সেই শোলা কেটে যত্নে তৈরি হত সাজ।’’ শিল্পীরা বলেন, ‘‘এখন জলাভূমি কমছে। খামখেয়ালিপনা বেড়েছে বৃষ্টির। সমস্যা বেড়েছে তাতেই। এখনও শোলা মেলে কিন্তু সেটা খুব কম পরিমাণে। দামও বেশি। বিকল্প ভাবনা সেই জন্যই।’’
শিল্পীদের অনেকে আবার জানান, জোগানের সঙ্গে পরিশ্রম ও দরের কথাও মাথায় রাখছেন তাঁরা। তাঁদের কথায়, ‘‘একটি শোলার তৈরি ডাকের সাজের দাম যেখানে ১০ হাজার টাকা, সেখানে অন্য উপাদানে তৈরি সাজের দাম পড়ে ৭- ৮ হাজার টাকা। এই সাজ শোলার থেকে অর্ধেকেরও কম সময়ে তৈরি করা সম্ভব।’’কেউ কেউ আবার বিকল্প হিসেবে থার্মোকল দিয়েও বানাচ্ছেন ডাকের সাজ। সেই তালিকায় রয়েছেন রাজনগরের দুলাল মালাকার। যদিও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কৃত্রিম ভাবে তৈরি থার্মোকলের সাজের সেই কদর নেই বলে মত সাজ-শিল্পীদের অনেকের।
তবে শোলার অভাব সত্বেও এখন শোলা দিয়েই ডাকের সাজ বানান বোলপুরের সুরুলের বাসিন্দা কমল মালাকার। তিনি বলেন, ‘‘বাজারে অনেকেই অন্য উপাদানের ডাকের সাজ তৈরি করছেন ঠিকই, তবে আমাদের এ দিকে ডাকের সাজ শোলা দিয়েই তৈরি হয়ে থাকে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy