Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
Bagtui

ছ’মাস পার, সাত জনের ডেথ সার্টিফিকেট মেলেনি, বগটুই-কাণ্ডে সমস্যায় স্বজনহারা পরিবার

২১ মার্চ রাত সাড়ে আটটা নাগাদ জাতীয় সড়কের ধারে বগটুই মোড়ে খুন হন তৃণমূল নেতা তথা বড়শাল পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ভাদু শেখ।

ফাইল চিত্র।

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায় 
বগটুই (রামপুরহাট) শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৭:১৯
Share: Save:

ঘটনার প্রায় ছ’মাস পেরিয়েছে। কিন্তু, বগটুই-কাণ্ডে পুড়ে খাক হয়ে যাওয়া সাত জনের ডেথ সার্টিফিকেট আজও পায়নি স্বজনহারা পরিবারগুলি। এর ফলে নানা অসুবিধায় পড়েছেন মৃতের পরিজন। ডেথ সার্টিফিকেট জোগাড় করার জন্য তাঁদের রীতিমতো হয়রান হতে হচ্ছে বলেও অভিযোগ স্বজনহারাদের।

২১ মার্চ রাত সাড়ে আটটা নাগাদ জাতীয় সড়কের ধারে বগটুই মোড়ে খুন হন তৃণমূল নেতা তথা বড়শাল পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ভাদু শেখ। তার পাল্টা হিসাবে বগটুই গ্রামে বেছে বেছে ভাদু বিরোধী গোষ্ঠীর লোকেদের বাড়িতে আগুন লাগানো হয় বলে অভিযোগ। কুপিয়ে পুড়িয়ে মারা হয় ৯ মহিলা সহ ১০ জন কে। ২২ মার্চ সকালে সোনা শেখের বাড়ি থেকে ৭টি দগ্ধ মৃতদেহ উদ্ধার হয়। প্রথমে তাঁদের পরিচয় জানা যায়নি। পরে দেহ কাদের, তা শনাক্ত করে করে সৎকার করার জন্য আবেদন জানিয়েছিলেন নলহাটি থানার কোগ্রামের বাসিন্দা আলাউদ্দিন শেখ। পুড়ে কাঠ হয়ে যাওয়া দেহগুলি তাঁর আত্মীয়দের বলেও দাবি করেন আলাউদ্দিন। এই সাত জনেরই ডেথ সার্টিফিকেট পাচ্ছে না তাঁদের পরিবার।

বগটুই হামলায় নিজের মা, স্ত্রী, মেয়ে ও জামাইকে হারানো বানিরুল শেখের ছেলে কিরণ শেখের শেখের অবশ্য দাবি, ‘‘সোনা শেখের বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া সাতটি দেহের ময়নাতদন্ত করা হয়েছিল অজ্ঞাতপরিচয় হিসাবে। আমাদের কাছে দেওয়া ময়নাতদন্তের রিপোর্টেও অজ্ঞাতপরিচয় উল্লেখ করা আছে। এর ফলে ডেথ সার্টিফিকেট পাওয়া মুশকিল হয়ে পড়েছে।’’ কিরণ জানান, ঘটনায় মৃত তাঁর জামাইবাবু, নানুরের বাসিন্দা কাজী সাজিদুর রহমানের ময়নাতদন্তের রিপোটেও এখনও অজ্ঞাতপরিচয় করা আছে। এর ফলে নানুরে জামাইবাবুর পরিবারও সমস্যায় পড়েছে।

ডেথ সার্টচিফিকেট না পাওয়ায় সমস্যা পড়েছেন কিরণের কাকা মিহিলাল শেখও। ওই রাতের হামলায় মিহিলালের মোটরবাইক পুড়ে গিয়েছিল। মারা গিয়েছিলেন মিহিলালের স্ত্রী ও ৯ বছরের মেয়ে। ওই দু’জনের ময়নাতদন্তের রিপোর্টেও অজ্ঞাতপরিচয় থাকার জন্য ডেথ সার্টিফিকেট পেতে অসুবিধা হচ্ছে মিহিলালের। সেই সার্টিফিকেট না পাওয়ার জন্য পুড়ে যাওয়া বাড়ি এবং মোটরবাইকের বিমার টাকা দাবি করতে পারছেন না বলেও দাবি মিহিলালের। সমস্যায় ফটিক শেখও। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন তাঁর স্ত্রী। আলাউদ্দিনের মাধ্যমে সাতটি মৃতদেহ শনাক্ত করা হলেও ২১ মার্চ রাতে হাসপাতালে মৃত মিনা বিবির দেহ শনাক্ত করা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। ফটিক শেখের দাবি, তাঁর স্ত্রীর প্রকৃত নাম নাজিমা বিবি। হাসপাতালে মিনা বিবি নামে দেহের ময়নাতদন্ত করা হয়। ফলে, এখনও তাঁরা ডেথ সার্টিফিকেট হাতে পাননি।

স্বজনহারা পরিবারগুলির সদস্যরা জানান, ডেথ সার্টিফিকেট পেতে তাঁরা দ্বারস্থ হয়েছিলেন স্থানীয় বড়শাল পঞ্চায়েতের। পঞ্চায়েতের প্যাডে মৃতদের নাম এবং তাঁদের পরিবারের লোকদের পরিচয় দিয়ে লিখে দিয়েছিলেন প্রধান ও পঞ্চায়েত সচিব। তা নিয়ে রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দেখানোর পরেও ডেথ সার্টিফিকেট পাওয়া যাচ্ছে না। কিরণদের দাবি, তাঁরা এ বিষয়ে বিডিও (রামপুরহাট১ ), থানার আইসি এবং মহকুমাশাসকের কাছে একাধিকবার দেখা করেছেন। কিন্তু, ডেখ সার্টিফিকেট পেতে হয়রান হতে হচ্ছে তাঁদের।

ডেথ সার্টিফিকেট যে দেওয়া যায়নি, তা মেনেছে স্থানীয় প্রশাসনও। মহকুমাশাসক (রামপুরহাট) সাদ্দাম নাভাস বলেন, ‘‘বগটুই-কাণ্ডের তদন্ত এখনও সিবিআই করছে। সে ক্ষেত্রে ডেথ সার্টিফিকেট পেতে গেলে কী কী আইনি জটিলতা আছে তা খতিয়ে দেখে যাতে দ্রুত সার্টিফিকেট পাওয়া যায়, তার ব্যবস্থা করা হবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Bagtui Bhadu Sheikh Murder Case
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE