সিউড়িতে বাসিন্দাদের মিষ্টিমুখ করাচ্ছেন কংগ্রেস কর্মীরা।
কেউ সাদা ধুতি পাঞ্জাবিতে পথে নেমে নববর্ষের প্রীতি ও শুভেচ্ছা বিনিময় করলেন। তো কেউ নতুন লাল পেড়ে গরদের শাড়িতে মন্দিরে পুজো দিয়ে প্রচারে পাড়া ঘুরলেন। কেউ কেউ আবার হালখাতার কাজে সারাদিন ব্যস্ততার থেকেও, সন্ধ্যায় ওয়ার্ডবাসীর সঙ্গে মিষ্টি মুখে সারলেন প্রচার। সরগরম ভোট প্রচারের মাঝে বুধবার বাংলা নববর্ষের দিনটি পড়ে যাওয়ায়, জেলায় একটি দিন যেন হয়ে উঠল বৈশাখী হাওয়ায় বিশেষ প্রচারের দিন!
জেলার চারটি পুরসভার মোট ৭৩ টি ওয়ার্ডের ২৮৮ টি জন প্রার্থীকেই নিজস্ব কেতায় এ দিন নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময় করতে দেখা গিয়েছে। কোথাও কোথাও অবশ্য এমন শুভ দিনে ভোট ভিক্ষা করতে গিয়ে প্রার্থীরা নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘন করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে, প্রচারে পিছিয়ে পড়তে চান না কেউ-ই। কমিশনের ফাঁক গলে তাই বছর শুরুর দিনটিতে প্রায় সকলেই খেললেন প্রচারের সেরা তাসটি।
সিউড়ি পুরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী বাবন দাস যেমন। নিজের ওয়ার্ড সংলগ্ন মন্দিরে পুজো দিয়ে, নিজের ওয়ার্ডের একটি পাইপ লাইনের কাজ দেখভাল করতে করতে পুরবাসীদের সঙ্গে নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আজ সবাই ব্যস্ত। তাই বাড়িতে বাড়িতে প্রচারে যাইনি। পথেই শুভেচ্ছা বিনিময় চলছে।’’ আবার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বামফ্রন্ট সমর্থিত নির্দল প্রার্থী ইয়াসিন আকতার, আজকের দিনে ওয়ার্ডের নতুন ভোটারদের একত্রিত করে ভোট দানে তাঁদের দায়িত্ব সচেতনার কথা বুঝিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি নতুন বছরের শুভেচ্ছাও জানিয়েছেন।
সিউড়ি ২ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম প্রার্থী সম্পূর্ণা মাল নিজের বাড়িতে পুজো দিয়েছেন। তাঁর প্রচার এ দিন পাড়াতেই সীমাবদ্ধ ছিল। একইভাবে সিউড়ির তৃণমূল অফিসে ৮ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী উজ্বল মুখোপাধ্যায় নিজের কর্মীদের ডেকে নেন। সেখানেই চলে শুভেচ্ছা বিনিময়। আলোচনা হয় ভোট প্রচারের কৌশল নিয়েও। বিজেপি মহিলা মোর্চার পক্ষ থেকে এ দিন বিকেলে দুটি মিনি ট্রাকে করে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাতে শহর পরিক্রমা করে। কংগ্রেসও পিছিয়ে নেই। ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস প্রার্থী কাজী ফরজুদ্দিন মহিলা কংগ্রেস কর্মী ও এলাকার নতুন ভোটারদের সঙ্গে নিয়ে বাসস্ট্যান্ডের রিকসাচালকদের মিষ্টি মুখ করান।
অন্যদিকে রামপুরহাট পুরসভার বিদায়ী পুরপ্রধান অশ্বিণী তিওয়ারি যেমন। অশ্বিনী এবার তাঁর আগের ওয়ার্ড ৭ নম্বর থেকেই তৃণমূলের প্রতীকে লড়াই করছেন। তাঁর ট্রান্সপোর্টের ব্যবসা আছে। উত্তরপ্রদেশের ব্রাহ্মণ অশ্বিনী তিওয়ারির হালখাতা দেওয়ালিতে হয়। তিনবারের নির্দল প্রার্থী হিসাবে জয়ী অশ্বিনী এ বার পয়লা বৈশাখকেই বিশেষ দিন হিসাবে দেখছেন। এ দিন সকাল থেকে ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের কাছে তিনি ভোটার স্লিপ ধরিয়ে দেওয়ার জন্য তিনি উপযুক্ত দিন বলে বেছে নিয়েছেন। তাঁর প্রতিদ্বন্ধি বিজেপির বাপ্পা রায় এবার প্রথম নির্বাচনী ময়দানে নেমেছেন। বাপ্পা অবশ্য নিজের ব্যবসার হালখাতা নিয়ে সকাল থেকে ব্যস্ত আছেন বলে জানিয়েছেন।
শুভদিনে শুভেচ্ছা জানাতে পিছিয়ে নেই বিজেপিও। ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী শুভাশিস চৌধুরী শহরের হাটতলা এলাকার বাসিন্দা। বললেন, ‘‘হাটতলা মানুষের শুভেচ্ছা দীর্ঘ দিন ধরে পেয়ে এসেছি। শুধু এ বছর নয়, নববর্ষের প্রথম দিনে এলাকার মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় অনেক দিনের অভ্যেস।’’ দুপুরে এলাকার মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে গিয়ে শুভাশিস চৌধুরীকে দেখা গেল প্রতিবাদী ভূমিকায়। পাশের ওয়ার্ডে দুই মহিলার হার ছিনতাইকারি নিজের ওয়ার্ড দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার খবর পেয়ে, শুভাশিসবাবু একটি মোটর বাইকে চেপে ছিনতাইকারীর তল্লাশিতে বেড়িয়ে পড়তে দেখা গেল!
অন্যদিকে ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস প্রার্থী জামালউদ্দিন শেখ, পেশায় বস্ত্র ব্যবসায়ী। দোকান বন্ধ রেখে দলের জেলা সভাপতির সঙ্গে ভোটের ময়দানে নতুন মুখ হিসাবে ওয়ার্ডবাসীর সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। আবার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের বামফ্রন্ট প্রার্থী স্বপন দত্ত শুভদিন হিসাবে ভোটারদের পার্ট নম্বর, সিরিয়াল নম্বর বিলি করেছেন। ৪ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী আব্বাস হোসেন, ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী সুকান্ত সরকার, ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়রাও আজকের দিনটা প্রচারের বিশেষ দিন হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন। দিনভর তাঁরা নিজেদের মতো করে প্রচার চালিয়েছেন।
কেমন হল নববর্ষের দিন প্রচার?
আব্বাস বললেন, ‘‘মন্দ নয়, সন্ধ্যায় ওয়ার্ড বাসীকে মিষ্টি মুখ করার জন্য ডাকা হয়েছে।’’ সিপিএম প্রার্থী সঞ্জীব মল্লিকেও এ দিন নিজের ওয়ার্ডে বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচারের কাজে প্রচার চালাতে দেখা গিয়েছে। তবে সবাই যে এ দিন প্রচারে পথে নেমেছেন, তেমন নয়। ২ এবং ৬ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী যথাক্রমে রীণা গুপ্তা এবং সুপর্ণা সাহা যেমন। দু’জনেই নিজেদের বাড়ির কাজে ব্যস্ত রেখেছেন। তাঁদের নববর্ষের প্রচার এ দিন পড়শিতেই থেমে ছিল।
অন্যদিকে সাঁইথিয়া পুরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী কল্পনা বসাকের স্বামী রবি বসাক এ দিন সকালের দিকে নববর্ষের ক্যালেণ্ডার দিয়ে স্ত্রীর প্রচার শুরু করেন। এতেই বিধিভঙ্গের অভিযোগ তোলে কংগ্রেস ও বিজেপি। থানায় কংগ্রেসের পক্ষ থেকে অভিযোগও হয়। নববর্ষের সকালে নন্দীকেশ্বরী মন্দিরে পুজো দিয়ে প্রচারে বের হন ৮ নম্বর তৃণমূল প্রার্থী গুপী চক্রবর্তী, ৯ নম্বরের তৃণমূল প্রার্থী মায়া সাহা, ৩ নম্বরের তৃণমূল প্রার্থী চন্দ্রানী ঘোষ, ১৩ নম্বরের কংগ্রেসের তরুণ ঘোষ, ৪ নম্বরের বিজেপির দেবজিৎ রাম, ৯ নম্বরের বিজেপির ঝুম্পা পাল প্রমুখ। অনেককেই দেখা যায় নিজেদের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ করতে। সকলেই ভোট চাইতে গিয়ে নববর্ষের শুভেচ্ছাও জানান। তৃণমূলের চন্দ্রানী বলেন, ‘‘প্রতিবারই মায়ের কাছে পুজো দিই। তবে এবার বাড়তি প্রার্থনা, যেন জয়ী হই। এলাকার কাজ করতে পারি।’’ এ দিন সন্ধ্যায় প্রচারে বের হওয়ার আগে তৃণমূলের প্রার্থী বিপ্লব দত্ত পুজো দেন নন্দীকেশ্বরী মন্দিরে।
এ দিন বোলপুর পুরসভার ভোটের ২০টি ওয়ার্ডের প্রার্থীরাও নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন পথে-প্রচারে নেমে। বিজেপির পক্ষ থেকে বোলপুর পুর-নির্বাচনে দায়িত্বে থাকা দলের জেলা সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ প্রার্থীদের নিয়ে এলাকায় দিনভর প্রচারে ছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময়ের পাশাপাশি দলীয় প্রার্থীদের পুরভোটে জয়ী করবার আর্জি জানিয়েছি।’’
এ দিন প্রচারে পিছিয়ে নেই কংগ্রেসও। শহরের ৩, ৪ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডে কংগ্রেসের ব্লক সভাপতি মহম্মদ জাহাঙ্গির হোসেন প্রার্থীদের নিয়ে পথে প্রচারে বের হন। এলাকায় তাঁদেরও নতুন বছরের শুভেচ্ছা বিনিময় করতে দেখা যায়। সকলের পোশাকও এ দিন ছিল আর পাঁচটা প্রচারের দিন থেকে আলাদা। প্রচারে নেমে এ দিন নববর্ষ উদযাপন করেন বহু প্রার্থী।
নববর্ষের দিন প্রচারে পিছিয়ে নেই বাম ও শাসকদলও। ২০ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী বাদল সাহাকে দেখা গিয়েছে মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহকে নিয়ে নববর্ষের সকালে প্রচার করতে। ৬ নম্বর ওয়ার্ডে লাভপুরের বিধায়ক মনিরুল ইসলামকে নিয়ে প্রচারে দেখা যায় বিদায়ী উপ-পুরপ্রধান নরেশ বাউরীকে। এলাকায় তাঁরা থেমে থেমে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। একাধিক বাড়িতে ঢুকে প্রীতি ও শুভেচ্ছা বিনিময়ের পাশাপাশি মিষ্টি মুখ করেন তাঁরা।
তুলনায় বামেরা এ দিন প্রচার সারেন একটু অন্যভাবে। শহরের বাসস্টপ, বাজার-হাট, মোড় এলাকায় গিয়ে শহরবাসীকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানান। বোলপুরে বামেদের পুরভোটের দায়িত্বে রয়েছেন জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য সমীর ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘‘ওয়ার্ডের বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেছি। ভোট চাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সকলকে নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময়ও হয়েছে।’’
বুধবার তোলা নিজস্ব চিত্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy