বোলপুরে বাড়িতেই নমাজ পড়া। শনিবার। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী
করোনার থাবা উৎসবে, পরবেও। স্বাস্থ্যবিধি ও দূরত্ববিধি মানতেই ইদগা্হ বা মসজিদে ভিড় হল না ইদুজ্জোহার নমাজে। বাড়িতেই নমাজ পড়লেন ধর্মপ্রাণ মুসলিম মানুষেরা। কেউ কেউ ঘরের মধ্যেই, কেউ বা বাড়ির ছাদে, কেউ আবার উঠোনে বা বাগানে পরিবারের সকলে মিলে ইদের নমাজ পড়লেন শনিবার। গোটা জেলা জুড়েই চুম্বকে চিত্রটা এক।
ইদ-উল-ফিতরের সময়ও সারা দেশ জুড়ে লকডাউন চলছিল। এবার ইদুজ্জোহাও পালিত হল গৃহবন্দি অবস্থায়। যদিও এখন সারা দেশ জুড়ে আনলক-৩ চলছে। তবু গোষ্ঠী সংক্রমণের আশঙ্কায় দূরত্ববিধি মেনে নমাজ পড়ার প্রয়োজনীয়তা কমবেশি সকলেই বুঝতে পেরেছেন বলে মসজিদ কমিটির সদস্যরা ও ইমামরা জানিয়েছেন।
রামপুরহাটে এ দিন রাস্তায় হাতে গোনা কিছু মানুষ বেরিয়েছিলেন। অন্যবারের মতো এবার আর সাজানো হয়নি ইদগাহ্ বা মসজিদ। প্রশাসনের তরফ থেকে জেলার সমস্ত মসজিদ কমিটি ও ইমামদের সঙ্গে বসে আলোচনা করা হয়েছিল ইদুজ্জোহা পালন নিয়ে।
মানুষকে সচেতন করার কথা বলা হয় তাতে। তৃণমুলের সংখ্যালঘু সেলের কাজী ফরজুদ্দিন বলেন, ‘‘ইদুজ্জোহার নমাজের আগেই মানুষকে সচেতন করা হয়েছে। সাধারণ মানুষ কিছুটা হলেও আতঙ্কিত, করোনা সংক্রমণের সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে জেলায়।’’
যদিও জেলার অনেক জায়গায় পাড়ায় পাড়ায় বড় কোনও বাড়ির ছাদে দশ-বারো জন মিলিত হয়ে নমাজ পড়েন এ দিন। তবে বিভিন্ন এলাকাতেই মসজিদ থেকে এ দিন সকালে ঘোষণা করা হয়, ইদের নমাজ পড়তে মসজিদে এলে পারস্পরিক দূরত্ববিধির পাশাপাশি মাস্ক পরা ও সরকারি স্বাস্থ্যবিধি সম্পূর্ণভাবে মানতে হবে। কোথাও কোথাও মসজিদে নমাজ হলেও অল্প সংখ্যক মানুষ হাজির ছিলেন বলে জানা গিয়েছে।
প্রশাসনের পক্ষ থেকেও এ দিন জানানো হয়, রামপুরহাট শহর-সহ জেলার বিভিন্ন শহর বা গ্রাম এলাকায় মানুষেরা করোনার গোষ্ঠী সংক্রমণের আতঙ্ক থেকেই সচেতনভাবে ইদগাহ্ বা মসজিদে জড়ো হয়ে নমাজ পড়া থেকে বিরত থেকেছেন।
রামপুরহাটের সফিকুল আলম, মহম্মদ শাহজাদ আলমরা বলেন, ‘‘নিজেরা ঘরবন্দি রইলাম আর ইদের খুশি আমাদের মনবন্দি হয়ে রইল। অন্যান্য বছর পরিবারে সকলকে নিয়ে হই-হুল্লোড় হয়। এবার না কিছু কেনাকাটা, না কোনও আত্মীয়-পরিজন।’’
শুক্রবার বিকেলে সিউড়ি, বোলপুর-সহ বিভিন্ন এলাকায় ইদগা্হ ও কবরস্থান কমিটি করোনা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিয়ে মাইকে প্রচার করে, মানুষকে সচেতনতার বার্তা দেয় এবং নিজের বাড়িতে নমাজ পড়তে বলে। জমায়েত করলে গোষ্ঠী সংক্রমণ হতে পারে বলেও বারবার প্রচার হয়।
সিউড়ি ইদগা্হ ময়দানে ও বোলপুর ভুবনডাঙ্গা ইদগা্হ ময়দানে প্রায় পাঁচ থেকে ছ’হাজার মানুষের সমাগম হয় প্রতি বছর। সেখানে এবার নমাজ হয়নি। তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ মমতাজ সংঘমিতা চৌধুরীর উদ্যোগে মাড়গ্রামে প্রতি বছর মহিলা পরিচালিত নমাজ বয় ইদের দিন। করোনা এবার বাধা হয়েছে তাতেও। রামপুরহাটে জাতীয় সড়কের ধারে ইদগা্হ ময়দানে গুটিকয়েক মানুষের উপস্থিতি ছিল। একই চিত্র নলহাটি, মুরারই, দুবরাজপুর, সাঁইথিয়া সহ জেলার সর্বত্র দেখা যায়।
সবথেকে বড় সমস্যা এই সময়ে সাধারণ মানুষের একটা বড় অংশ কর্মহীন এবং আরেকটি অংশের রোজগার অনেকটাই কমে গিয়েছে। ফলে শুক্রবার ইদের আগের দিনের বাজারের চেহারাটাই এবার বলে দিচ্ছিল শধু ঘরবন্দি নয়, খুশি, আনন্দ পরবের কোনও আয়োজনই এবার বন্দি থাকল। দোকানে ভিড় ছিল না, কোরবানির জন্য পশু বিক্রির হাটও ছিল ফাঁকা। ইদুজ্জোহা নমাজের পরেই অংশ পশু কোরবানি। এবার সেই সংখ্যাটাই ছিল নগন্য।
কংগ্রেস বিধায়ক মিলটন রশিদ নিজেও বাড়িতেই নমাজ পড়েছেন বলে জানান। তিনি বলেন, ‘‘মানুষের হাতে টাকা কোথায়? লকডাউনের জন্য একদিকে যেমন অর্থনাতিক সমস্যা তেমনই পশুর দামও বেড়েছে। তাই অনেকেই পশু কিনে কোরবানি দিতে পারেননি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy