Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪

পটেই পুজো, ব্যস্ত শিল্পী পরিবার

পটেও দেবী পূজিতা হন। বাঁকুড়া জেলার বেশ কয়েকটি বনেদি বাড়িতে এখনও সাড়ম্বরে বংশ পরাম্পরায় পটে দেবীর আরাধনা হয়ে আসেছে। আর পটে দেবীর ছবি ফুটিয়ে তোলার কাজ বংশ পরাম্পরায় করে আসছে বিষ্ণুপুরের ফৌজদার পরিবার।

বিষ্ণুপুরের মনসাতলায় পট আঁকায় ব্যস্ত ফৌজদার পরিবারের সদস্যেরা। —শুভ্র মিত্র

বিষ্ণুপুরের মনসাতলায় পট আঁকায় ব্যস্ত ফৌজদার পরিবারের সদস্যেরা। —শুভ্র মিত্র

স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়
বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০২:৪৫
Share: Save:

পটেও দেবী পূজিতা হন। বাঁকুড়া জেলার বেশ কয়েকটি বনেদি বাড়িতে এখনও সাড়ম্বরে বংশ পরাম্পরায় পটে দেবীর আরাধনা হয়ে আসেছে। আর পটে দেবীর ছবি ফুটিয়ে তোলার কাজ বংশ পরাম্পরায় করে আসছে বিষ্ণুপুরের ফৌজদার পরিবার। অতীত দিনের খ্যাতনামা শিল্পীরা চলে গেলেও সেই ধারা বজায় রাখতে তাঁদের উত্তরপুরুষ তুলে নিয়েছেন তুলি। মনন আর ধৈর্যের মিশেলে এঁকে চলেছেন পটের দুর্গা।

পুজোর আর বেশি দিন বাকি নেই। তাই প্রতি বছরের মতো এখন দম ফেলার ফুরসৎ নেই বিষ্ণুপুরের মনসাতলার ফৌজদার পরিবারের পটশিল্পীরা। অল্প ক’দিনের মধ্যেই যে তাঁদের এঁকে ফেলতে হবে ছ’টি পটের দুর্গা। বিষ্ণুপুরের পটুয়াবাড়িতে তাই এখন চূড়ান্ত ব্যস্ততা।

দুর্গার মূর্তি না গড়ে পটপুজো করা হয় বেশ কিছু সাবেকি বাড়ির পুজোয়। এই তালিকায় যেমন আছে বিষ্ণুপুরের রাজবাড়ির নাম, তেমনই রয়েছে কুচিয়াকোল রাজবাড়ি-সহ রামসাগর, বিষ্ণুপুরের কাদাকুলি-মহাপাত্রপাড়া, পাঠকপাড়ার নামও।

এ বারও অধিকাংশ পরিবারের দুর্গার পট তৈরির বরাত পেয়েছেন বিষ্ণুপুরের পটুয়াবাড়ির শিল্পীরা। শুধু মল্ল রাজবাড়ির জন্যই তিনটি পটের দুর্গা তৈরির বরাত পেয়েছেন তাঁরা। যার মধ্যে ‘বড় ঠাকুরণ’ জিতাষ্টমীতে চলে গিয়েছে। এখনও বাকি ‘মেজ ঠাকুরণ’ ও ‘ছোট ঠাকুরণে’র
পট আঁকা।

শিল্পী ভাস্কর ফৌজদারের মৃত্যুর পর ওই পটুয়া পরিবারের প্রধান শিল্পী এখন তাঁর ভাইপো শীতল ফৌজদার।

সম্প্রতি ওই পটুয়াবাড়িতে গিয়ে দেখা গিয়েছে পুরো পরিবারটিই জড়িয়ে গিয়েছেন কাজে। কেউ রং গুলছেন তো কেউ তুলি টানছেন পটে। ঘরে কে ঢুকছে, কে বেরোচ্ছে চোখ তুলে তাকানোরও ফুরসৎ নেই তাঁদের। শীতল সামনের নারকেল মালায় রাখা রঙে তুলি ডুবিয়ে বলেন, ‘‘সব মিলিয়ে এ বার সাতটি পটের অর্ডার পেয়েছি। বিষ্ণুপুর রাজবাড়ির পট তো আমরা পুরুষানুক্রমে এঁকে আসছি। জিতাষ্টমীর আগে ওখানে একটি গিয়েছে। এখনও দু’টি বাকি। এ ছাড়া কুচিয়াকোল রাজবাড়ি ও আরও তিনটি বনেদি বাড়ির পট দেওয়া বাকি। ফলে নাওয়া-খাওয়ারও সময় নেই এখন।’’

কাকা শীতলের পাশে রং-তুলি নিয়ে হাত-পাকাচ্ছেন দুই কলেজ পড়ুয়া ভাইপো সন্দীপ ও সম্রাট। তাঁরা বলেন, ‘‘পট বানাতে অনেক সময় ও ধৈর্য লাগে। সুতির ধুতিতে তেঁতুল আর শিরিষের আঠা মিশিয়ে পটের কাপড় তৈরি হয়। সেই কাপড় রোদে শুকিয়ে রং লাগানোর উপযুক্ত হলে তবেই কাজে হাত লাগানো যায়। সব মিলিয়ে আট-দশদিন সময় লাগে।’’

পটের রং-ও সম্পূর্ণ দেশি পদ্ধতিতে তৈরি করা হয়। হ্যারিকেন বা লন্ঠনের ভুষো কালি থেকে তৈরি হয় কালো র‌ং। বাটা হলুদ দিয়ে হয় হলুদ রং। গিরিমাটি ঘষে আনা হয় লাল রঙের আভা। রঙের স্থায়িত্ব বাড়াতে বেলের আঠা মিশিয়ে
দেওয়া হয়।

রং বানাতে বিশেষ পারদর্শী ফৌজদার বাড়ির মেয়েয়াও। দুলালিদেবী, পুর্ণিমাদেবীরা বলেন, ‘‘সারা বছরই বাড়িতে কাজ লেগে আছে। কখনও দশাবতার তাস, কখনও পটের কাজ। ব্যস্ততা এখন অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।’’

বসে নেই শীতলের দুই দাদা সুবল ও তপন। তাঁরা প্রধানত মাটির প্রতিমা গড়ার কাজ করেন। সেই কাজ ছেড়ে মাঝেমধ্যেই হাত লাগাচ্ছেন তাঁরা। তাঁরা বলেন, ‘‘শিল্প-সংস্কৃতির প্রায় লুপ্ত ধারাটিকে আমরা সবাই ধরে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছি। কিছুদিন আগে কলকাতার বেহালার একটি পুজো মণ্ডপে ৫০০ দশাবতার তাস পাঠালাম। এখন পটের কাজে হাত দিয়েছি। দ্রুত শেষ করতে হবে। পুজো তো আর হাতে গোনা কয়েকটা

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy