জলাধার। নিজস্ব চিত্র
দেরি নেই পুরভোটের। বোর্ডের মেয়াদও শেষ হচ্ছে ২০ অক্টোবর। এমন আবহে শহরের সব ওয়ার্ডে পানীয় জল পৌঁছতে উদ্যোগী হল দুবরাজপুর পুরসভা। সূত্রের খবর, জল প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ। ১১ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার ওই প্রকল্পের উদ্বোধন করার কথা স্টেট রুরাল ডেভলপমেন্ট সোসাইটি-র (এসআরডিএ) চেয়ারম্যান অনুব্রত মণ্ডল ও মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহের।
প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে পুরসভায় উন্নীত হওয়ার চার দশক পরে পরিস্রুত পানীয় জল পাবেন দুবরাজপুর পুর এলাকার বাসিন্দারা। তবে জল মিললেও এখনই বাড়ি বাড়ি পানীয় জল পৌঁছে দিতে পারছে না পুরসভা। ওয়ার্ডের বিভিন্ন পয়েন্টে কল (স্ট্যান্ড পোস্ট) থাকছে। পুরপ্রধান পীযূষ পাণ্ডে বলছেন, ‘‘বোর্ড শেষ হওয়ার আগে যত বেশি সম্ভব এলাকায় স্ট্যান্ড পোস্ট দিয়ে জল পৌঁছে দেওয়া কর্তব্য। নির্বাচনের পর নতুন বোর্ড বাড়ি বাড়ি জল পৌঁছে যাবে।’’
বিষয়টিকে ভাল চোখে দেখছে না বিরোধীরা। বিরোধী সিপিএম ও বিজেপি নেতাদের দাবি, বহু কাল আগে টাকা বরাদ্দ হয়েছে। কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৪ সালেই। তার পরে টানা পাঁচ বছর পার করে সব বাড়িতে জল পৌঁছে দিতে না পারা সদিচ্ছার অভাব। দুবরাজপুরের সিপিএমের প্রাক্তন কাউন্সিলর তথা জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য শীতল বাউড়ি এবং বিজেপির জেলা সভাপতি রামকৃষ্ণ রায় বলছেন, ‘‘অজুহাত দিয়ে লাভ নেই। সদিচ্ছা না থাকার জন্যই জল প্রকল্পের কাজ সময়ে সম্পূর্ণ করতে পারেনি পুরসভা। এখন শেষ বেলায় কোনও রকমে জোড়াতালি দেওয়া কাজ করে ভোট পেতে চাইছে।’’
পুরসভায় ক্ষমতাসীন শাসকদল তা মানতে চায়নি। পুরপ্রধানের দাবি, বাকি কাজ আগেই হয়েছিল। রেলের অসহযোগিতার জন্যই কাজে বিলম্ব হল। পীযূষবাবুর কথায়, ‘‘দুবরাজপুর স্টেশনের অবস্থান এমন যে, শহরের একটা অংশ রেলপথের অন্য পারে। রয়েছে রেলসেতুও। কিন্তু, সেই সেতুর উপর দিয়ে পানীয় জলের পাইপলাইন পার করা যায়নি। রেললাইনের নীচ দিয়ে ‘জ্যাকপুশ’ করেই সেটা পার করতে হয়েছে। তাই অনেক সময় চলে গিয়েছে।’’
ঘটনা হল, পুরসভার বয়স চল্লিশ বছর পেরোলেও অথচ এখনও শহরের সব অংশের মানুষকে পানীয় জল খাওয়াতে ব্যর্থ ছিল দুবরাজপুর পুরসভা। ২০০৩ সালে অজয় নদের গর্ভ থেকে জল তুলে বাড়ি বড়ি পাইপলাইনের মাধ্যমে সরবারাহ করার জন্য একটি জলপ্রকল্প চালু হয়। তবে সেই প্রকল্পে দুবরাজপুর পুরসভার ১৬টি ওয়ার্ডের সব কটিতে পানীয় জল পৌঁছনো সম্ভব হয়নি। পুরসভার ১, ২, ৯ ও আংশিক ভাবে ৮ ওয়ার্ডে জল পৌঁছয়নি। পরিস্রুত পানীয় জল নিয়ে এলাকাবাসীর ক্ষোভ ও সমস্যা দুটোই রয়েছে। বিরোধীদের অন্যতম দাবিও বটে। অনেকেই মনে করেন, সেই বদনাম ঘোচাতেই দ্বিতীয় জল প্রকল্প।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, জলপ্রকল্পের জন্য ২০১৩ সালের শেষে কেন্দ্রীয় প্রকল্প ‘শহর পরিকাঠামো উন্নয়ন’ অনুমোদিত অর্থ সাহায্যে মেলে। বরাদ্দ অঙ্ক মোট ২৩ কোটি ১৬ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা। ‘শহর পরিকাঠামো উন্নয়ন’য়ের সেই টাকা ‘আর্বান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভলপমেন্ট স্কিম ফর স্মল অ্যান্ড মিডিয়ম টাউনস’-এর জন্য পুরসভার হাতে পৌঁছে যাওয়ার পরেই মিউনিসিপ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডাইরেক্টরেটের (এমইডি)/ পুর কারিগরি দফতরের তত্ত্বাবধানে সেই কাজে হাত পড়ে ২০১৪ সালের মাঝামাঝি। প্রকল্পের নীল নকশায় বলা ছিল, গভীর নলকূপের সাহায্যে অজয় নদ থেকে জল তুলে ১২.৭ কিমি দূরত্বের দুবরাজপুর শহরে পাইপলাইনের মাধ্যমে সরবরাহ করা হবে পরিস্রুত পানীয় জল। সেই জন্য বহু আগেই অজয় নদের পাড়ে রতনপুর মৌজায় পাম্প হাউস ও ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট তৈরি হয়। পাইপলাইনের মাধ্যমে আসা সেই পরিস্রুত জল জমা করার জন্য একটি বড় ও একটি ছোট, মোট দুটি জলাধার তৈরি হয়েছে। ১১ লক্ষ ৯০ হাজার লিটার ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন জলাধারটি তৈরি হয়েছে পাহাড়েশ্বরের কাছে। অন্যটির ধারণ ক্ষমতা ১ লক্ষ ৫০ হাজার লিটার। সেটি শহরের সিনেমা হলের কাছে নির্মিত হয়।
ঠিক ছিল, এই দু’টি জলাধার থেকে প্রায় ৫৬ কিমি ডিস্ট্রিবিউশন পাইপলাইনের মাধ্যমে শহরের মোট ৮৩১১টি বাড়িতে জল পৌঁছে দেওয়া হবে। কিন্তু, গোটা কাজ ‘অসমাপ্ত’ রেখেই জল প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন নিয়ে বিরোধীরা তো বটেই, পুরবাসীও খুব একটা সন্তুষ্ট হতে পারছেন না। এঁদের অনেকেই প্রকাশ্যে মুখ না খুললেও আড়ালে বলছেন, ‘‘সব কাজ শেষ করে উদ্বোধন করলেই হয়তো বেশি ভাল হত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy