শ্যুটিং: ইলামবাজারে চলছে তথ্যচিত্রের কাজ। ছবি: নিজস্ব চিত্র
বিয়ের পরপরই অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে বছর ষোলোর এক নাবালিকা।
স্বাস্থ্যকর্মীদের পরামর্শ না মেনে বাড়িতেই প্রসব। একে বাড়িতে প্রসব, তার উপর অকাল মাতৃত্ব। প্রসবকালীন জটিলতায় বিপন্ন মা ও শিশুর জীবন শেষ পর্যন্ত বাঁচে হাসপাতালে এসে। অন্য দিকে, উপযুক্ত বয়সে বিয়ের পরে হাসপাতালে শিশুর জন্ম দিলে মায়ের সুবিধা কতখানি— তথ্যচিত্রটির মূল বিষয় এটিই।
এমন গল্পে, ছবি এগিয়েছে।
হয়তো খুব চেনা। কিন্তু কাহিনির বাঁক থেকে সামাজিক শিক্ষা নিতে হয়।
ইনস্টিটিউশনাল ডেলিভারি বা হাসপাতালে প্রসব কেন জরুরি, উৎসাহ দিতে এ বার এমনই একটি তথ্যচিত্র নির্মিত হচ্ছে ইলামবাজারে।
জেলা স্বাস্থ্য দফতরের সহযোগিতা থাকালেও খোদ জেলাশাসকের ইচ্ছেয় ও অর্থ সাহায্যে নির্মিত হচ্ছে তথ্যচিত্রটি। নাম— ‘সময়’।
ইলামবাজার ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, একটি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ইলামবাজার বাজার ও আশপাশের এলাকায় দিন কয়েক পরপর শ্যুটিং চলেছে। শ্যুটিংয়ের শেষ দিন ছিল শুক্রবার।
মূল যে গল্পটির উপর ভিত্তি করে তথ্যচিত্র, তা লিখেছেন ইলামবাজার ব্লকের পিএইচএন (পাবলিক হেল্থ নার্সিং অফিসার) জল্পনা সরকার। অভিনয় করছেন ইলামবাজার ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কর্মীরাই। মোট চরিত্রের সংখ্যা ১৪।
কলকাতার একটি সংস্থা কাজটি করছে। সংস্থা জানিয়েছে, এ বার হাত পড়েছে সম্পাদনায়।
কেন হঠাৎ এমন উদ্যোগ?
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২১ জানুয়ারি ইলামবাজার ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ‘মাদার্স পিকনিকে’ এমনই একটি নাটক মঞ্চস্থ করেছিলেন হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মী, মহিলা স্বাস্থ্যকর্মী এবং আশাকর্মীরা।
সে দিন প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন জেলাশাসক পি মোহন গাঁধী। বাল্যবিবাহ রোধ এবং ইনস্টিউশনাল ডেলিভারিতে উৎসাহ দিতে নাটকটির মধ্যে সব মশলা মজুত রয়েছে দেখে উচ্ছ্বসিত হন জেলাশাসক।
তার পরেই এমন সিদ্ধান্ত।
জেলাশাসক বলছেন, ‘‘জেলায় হাসপাতালে প্রসব বা ইনস্টিটিউশনাল ডেলিভারির হার ৯৩ শতাংশ। কিন্তু আমরা চাই ১০০ শতাংশের লক্ষ্যমাত্রা ছুঁতে।’’
দেখা গিয়েছে, জেলায় হোম ডেলিভারির পরিমাণ বেশি ইলামবাজার ও মহম্মদবাজার ব্লকে। এক জন অন্তঃসত্ত্বা মহিলাকে হাসপাতালে পৌঁছনোর পিছনে শাশুড়ির একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে। তিনি বলেন, ‘‘মাদার্স পিকনিকে সে দিন অন্তঃসত্ত্বা বৌমা ও শাশুড়িদের উপস্থিতিতে ওই নাটকটি দেখেই খুব ভাল লেগেছিল। মনে হয়েছিল জেলার সরকারি কর্মীদের এমন উদ্যোগ নিশ্চই প্রচারমূলক কাজে লাগানো লাগানো যায়।’’
জেলা স্বাস্থ্যদফতর ও প্রশাসনের কর্তারা বলছেন, এত প্রচার সত্বেও এখনও জেলায় বাল্যবিবাহের হার উদ্বেগজনক।
কমবয়সে মা হলে জটিলতা বেশি। কিন্তু নানা কুসংস্কারের কারণে অনেক প্রসূতি এখনও হাসপাতালে পৌঁছন না। অথচ হাসপাতালে প্রসব হলে মা ও শিশুর মৃত্য এড়ানো সম্ভব। এ ছাড়া কিভাবে শিশুর যত্ন নেওয়া প্রযোজন। কেন জরুরি সম্পূর্ণ টিকাকরণ, জল্পনাদেবীর লেখায় প্রতিটি দিক ছুঁয়ে গিয়েছে। তথ্যচিত্রটি নির্মিত হলে সচেতনতা বাড়বে আশা জেলা প্রশাসনের। তথ্যচিত্রের সঙ্গে জড়িয়ে এমন সব মহলেই এখন বলছেন সে কথাই।
জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক হিমাদ্রি আড়ি বলছেন, ‘‘তথ্যচিত্রটি তৈরির পরে জেলার যে যে অংশ ইন্সটিটিউশনাল ডেলিভারি এবং টিকাকরণের হার কম, সেখানেই এই তথ্যচিত্র দেখানো হবে।’’
আর যাঁর মূল ভাবনার এমন স্বীকৃতি, সেই জল্পনাদেবী বলছেন, ‘‘আমাদের সব সময় আন্তরিক চেষ্টা থাকে যেন সব মা ও শিশু সুস্থ থাকে। প্রতিটি প্রসব যেন হাসপাতালে হয়। শিশুদের টিকাকরণ সঠিক ভাবে হয়।’’
তাঁর দাবি, ‘‘এখনও সমাজে কিছু ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে অভাব রয়েছে সচেতনতারও। আমাদের ব্লকের স্বাস্থ্যকর্মীরা সচেতনতার কাজে লাগতে পারছি, সেটাই বড় প্রাপ্তি।’’
উদ্যোগে দিশা দেখে খুশি ইলামবাজারের বিএমওএইচ সুবীর রায়চৌধুরীও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy