পিঠে তৈরির ফাঁকে। নিজস্ব চিত্র।
করোনা আবহে বন্ধ বীরভূমের মেলা, তাই উপার্জনের আশায় এবার কলকাতার মেলায় হাজির মহম্মদবাজারের ‘দিদির হেঁশেল’। মেলার মাঠে পিঠে তৈরি করে সেখানেই হইহই করে বিক্রি করেন মহম্মদবাজার ব্লকের কেওটপাড়া গ্রামের শ্রীগুরু স্বনির্ভর গোষ্ঠীর চার সদস্য ববি, রেখা, টুম্পা এবং কবিতা ধীবর। বছর ১৫ আগে গড়ে উঠেছিল এই উদ্যোগ। যার পোশাকি নাম দেওয়া হয়েছে ‘দিদির হেঁশেল’। বছর ভর এই দিদিদের হেঁশেলে মেলে গরম দুধপুলি, রসপিঠে, চন্দ্রপুলি, ভাপাপিঠে, পাটিসাপটা, গোকুলপিঠে, মালপোয়া ও পুলিপিঠে।
করোনা আতঙ্কে বীরভূমের সমস্ত মেলা বন্ধ। বন্ধ পৌষমেলাও। ফলে সারাবছর বাড়িতেই বসে রয়েছেন দিদির হেঁশেলের কারিগরেরা। বন্ধ উপার্জন, তাই সংসারে দেখা দিয়েছে অনটন। এবার তাই খানিকটা জেদ করেই বাড়িতে বসে না থেকে কিছু উপার্জনের আশায় এবার দিদির হেঁসেল জেলা ছাড়িয়ে হাজির কলকাতার বিশ্ববাংলা মেলায়। আর সেখানেও পিঠেপুলিতে মাতিয়ে তুলেছেন মেলা প্রাঙ্গণ।
পৌষ মাস মানেই পিঠের মাস। হেমন্তে নতুন ধান উঠলেই হয় নবান্ন। তারপরেই পৌষ মাস থেকে হেমন্তের আগমন পর্যন্ত চলে পিঠে খাওয়া। বাংলার ঘরে ঘরে পিঠের চল বহু প্রাচীনকাল থেকেই। কৃত্তিবাস রামায়ণ, অন্নদামঙ্গল, ধর্মমঙ্গল, মনসামঙ্গল, চৈতন্যচরিতামৃতেও চাল গুঁড়ো, গুড়, নারকেলের মিশ্রণে তৈরি এই মিষ্টান্নের উল্লেখ রয়েছে। নতুন ধানের চালে যে ঘ্রাণ ও আর্দ্রতা থাকে, তাতেই জমে যায় পিঠের স্বাদ। আগে ঢেঁকিতে চাল গুঁড়ো বানানো হতো। এখন ঢেঁকি বিলুপ্তির পথে। তাই যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মেশিনে চাল গুঁড়ো করেই বানানো হচ্ছে রকমারি পিঠে। দুধ দিয়ে দুধপুলি। চিনি বা গুড়ের রসে এবং খেজুরের রসে ভিজিয়ে রসপিঠে। চালের গুঁড়ি তাওয়াই দিয়ে গুলুনিকে প্রথমে গোল আকার দেওয়া হচ্ছে। তারপরে তাতে মিষ্টিপুর ভরে ভাঁজ করে বানানো হচ্ছে পাটিসাপটা। এছাড়াও ফারপুলি, চন্দ্রপুলি, ভাপাপিঠে, মালপোয়া, পুলিপিঠে, গোকুলপিঠে ও চুষির পায়েস বানিয়ে ব্যাপক সাড়া মিলেছে কলকাতার মেলায়। জেলার বেশ কয়েকটি মেলায় সুনাম অর্জন করেছে মহম্মদবাজারের এই দিদির হেঁশেল। এবার কলকাতার মেলাতেও পিঠে খাওয়ার লাইন পড়ে যাচ্ছে। আর এই লাইন দেখে খুশি দিদির হেঁশেলের কারিগরেরা।
‘দিদির হেঁশেলে’র ববি ও টুম্পা ধীবর বলেন, ‘‘২০০৫ সাল থেকে আমাদের এই পিঠেপুলির স্টল দেওয়া শুরু। জেলার পৌষমেলা, সবলামেলা, কৃষিমেলা, গানমেলা, যুব উৎসব, বইমেলা সহ বিভিন্ন মেলায় আমরা স্টল করে মানুষের মন জয় করেছি। যেহেতু জেলায় মেলা বন্ধ, তাই উপার্জনের তাগিদে এসেছি বিশ্ব বাংলার মেলায়।’’ তাঁরা ২২ ডিসেম্বর এই মেলায় এসেছেন। আগামী ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত এখানেই দিদির হেঁশেল চালিয়ে যাবেন। প্রতিদিন পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকার পিঠে বিক্রি হচ্ছে জানান টুম্পারা। এখানে সবথেকে বেশি কুড়ি টাকায় মালপোয়া, সিদ্ধপুলি ও তিরিশ টাকায় পাটিসাপটা, শশীপিঠে ও বকুলপিঠে এবং চল্লিশ টাকায় দুধপুলি বিক্রি হচ্ছে বলেও ববি সংযোগ করেন। দুপুর বারোটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত চলছে মেলা। দিনের শেষে যা আয় হচ্ছে তাতে খুশি এই চার ‘সবলা’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy