ঠিক কী ঘটেছিল? হাসপাতালে জখম কর্মীদের থেকে খোঁজ নিচ্ছেন ডিজি (কারা) অরুণ গুপ্ত। নিজস্ব চিত্র।
বন্দিদের পালানোর চেষ্টার অভিযোগ নস্যাৎ করে মারামারির তত্ত্বে সায় দিলেন ডিজি (কারা) অরুণ গুপ্তও।
প্রাথমিক ভাবে জেল-কর্তাদের দাবি ছিল, পালানোর মতলবে ছিলেন জনা পঞ্চাশ বিচারাধীন বন্দি। তাঁদের বাধা দিতে গিয়েই আক্রান্ত হয়েছেন কারারক্ষী ও আধিকারিক। তবে বুধবার বিকেলের দিকে তদন্ত করে ডিআইজি (কারা) বিপ্লব দাস দাবি করেন, ‘‘দুই বন্দির মধ্যে মারামারিতে ওই ঘটনা ঘটেছে। তাদের সামলাতে গিয়েই কারারক্ষীরা জখম হয়েছেন।’’ পর দিন, বৃহস্পতিবার তদন্তে এসে সেই তত্ত্বই শোনান ডিজি (কারা)। তাতে প্রশ্ন উঠছে, শুধুই বন্দিদের মারামারি হলে কারারক্ষীরা যখন হবেন কেন? সদুত্তর এড়িয়ে ডিজি (কারা) অরুণ গুপ্ত শুধু বলেন, ‘‘ঘটনার তদন্ত চলছে।’’ সংশোধনাগারের নিরাপত্তার কথাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
বুধবার সকালে সিউড়ির জেলা সংশোধনাগারে ধুন্ধুমার বাধে। সিউড়ির ওই সংশোধনাগারে পুরুষ বন্দিদের রাখার দু’টি পৃথক ব্যবস্থা রয়েছে। একটি সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের জন্যে। অপরটি বিচারাধীন বন্দিদের। বিচারাধীন বন্দিদের মোট পাঁচটি সেল রয়েছে। রাতের বেলা বন্দিদের সেখানে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে তালা মেরে দেওয়া হয়। সকালে তালা খোলা হলেও কেউই একটি নির্দিষ্ট ঘেরাটোপের বাইরে বেরোতে পারে না। জেল চত্বরে ঘোরাফেরায় ছাড় রয়েছে শুধু সাজাপ্রাপ্তদের।
এই অবস্থায় কিছু দিন ধরেই বিচারাধীন বন্দিরা জেল চত্বরে অবাধ ঘোরাফেরার দাবি জানাচ্ছিলেন। সঙ্গে আরও কিছু দাবিও ছিল। বুধবার সকালে চা-পর্ব শেষে সেই দাবিতে তারা সাব জেলারের সঙ্গে দেখা করতে চেয়ে শোরগোল ফেলেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, সে সময় তাঁদের (বন্দিদের) শরীরী ভাষা ছিল বেপোরোয়া। জেলের একটি সূত্রের খবর, বন্দিরা যাতে কেউ ঘেরাটোপের বাইরে যেতে না পারেন, সেটা আটকাতে গিয়েছিলেন কর্তব্যরত কারারক্ষী সুগ্রীব দে। কিন্তু লাঠি দিয়ে মেরে তাঁর বাঁ হাত ভেঙে দেন বন্দিরা। এরপরেই ঘেরাটোপ থেকে বেরিয়ে যেতে শুরু করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কারারক্ষীদের কথায়, ‘‘মাত্র একটা ধাপ পেরোলেই ওরা জেলের বাইরে চলে যেতে পারতেন।’’ পরিস্থিতি দেখে দ্রুত ছুটে আসেন নিরাপত্তারক্ষীরা। তাতেও পরিস্থিতি সামলানো যাচ্ছে না দেখে বাজানো হয় বিপদঘণ্টি। তা শুনে সঙ্গে সঙ্গে ছুটে আসেন জেলের ব্যারাক থেকে জনা পঁচিশেক কারারক্ষীও। তখনই রুখে দেওয়া হয় বন্দিদের। সে সময় ধস্তাধস্তির মধ্যে পড়ে আঘাত পান জেল কল্যাণ আধিকারিক শুভদীপ মুখোপাধ্যায়। যদিও এমন ঘটনার কথা মানছেন না কারাকর্তারা।
জেলা সংশোধনাগারে বুধবার ঠিক কী ঘটেছিল, তা খতিয়ে দেখতেই বৃহস্পতিবার বিকালে সিউড়ি এসেছিলেন ডিরেক্টর জেনারেল (কারা) অরুণ গুপ্ত। বেলা আড়াইটে নাদাদ সিউড়ি পৌঁছে প্রথমে সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন। পরে চাঁদমারির কাছে পুলিশ গেস্ট হাউসে জেলা পুলিশ কর্তা ও জেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেন। ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জোবি থমাস, ডেপুটি পুলিশ সুপার (ডিসিপ্লিন ও ট্রাফিক) আনন্দ সরকার। বৈঠক সেরে পরে সিউড়ি হাসপাতালে গিয়ে দেখা করেন চিকিৎসাধীন কারারক্ষী সুগ্রীব দে-র সঙ্গে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy