ফাইল চিত্র
বর্ষা আসতে না আসতেই বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর স্বাস্থ্য-জেলায় আট জন ডেঙ্গি আক্রান্তের খবর মিলল। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (বিষ্ণুপুর স্বাস্থ্য-জেলা) জগন্নাথ সরকার শুক্রবার বলেন, ‘‘আক্রান্ত আট জন স্বাস্থ্য-জেলার বিভিন্ন ব্লকের বাসিন্দা। আমরা ব্লক স্তরে ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়ার মতো রোগগুলির প্রতিরোধে সচেতনতামূলক প্রচার ও বাড়ি-বাড়ি পর্যবেক্ষণ শুরু করেছি। স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশ এলেই দু’টি পুরসভাতেও কাজ শুরু হবে।’’
জগন্নাথবাবু জানান, এ বিষয়ে বৈঠকের জন্য বিষ্ণুপুর ও সোনামুখীর পুরপ্রধানদের চিঠি পাঠানো হয়েছে। সেখানে রোগ প্রতিরোধের ব্যাপারে আলোচনা হবে। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (বিষ্ণুপুর) বলেন, ‘‘দরকার পড়লে আমরা পুরকর্মীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারি।”
স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান থেকে জানা যাচ্ছে, ২০১৮ সালে ১৬ জন ডেঙ্গি আক্রান্তের সন্ধান মিলেছিল বিষ্ণুপুর স্বাস্থ্য-জেলায়। ২০১৯ সালে সংখ্যাটা দাঁড়ায় ১৪০। তবে বিষ্ণুপুর স্বাস্থ্য-জেলার পতঙ্গবিদ পার্শি মুর্মু বলেন, ‘‘২০১৮ সালে আমাদের ডেঙ্গি পরীক্ষা করার মতো ব্যবস্থা ছিল না। ২০১৯ সাল থেকে পরীক্ষার ব্যবস্থা হওয়ার পরে, আক্রান্তের কথা বেশি করে জানা যাচ্ছে।’’ তিনি জানান, আক্রান্তের খবর জানা গেলে রোগ প্রতিরোধেও সুবিধা হয়। প্রাথমিক ভাবে তাঁরা কোথায় কার জ্বর হয়েছে, সেটাই বাড়ি-বাড়ি ঘুরে খোঁজ নিচ্ছেন। সেই পরিসংখ্যানের উপরে ভিত্তি করেই সাজানো হচ্ছে পরিকল্পনা।
কী ভাবে চলছে ডেঙ্গি প্রতিরোধের কাজ?
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রামীণ এলাকাগুলিতে প্রতি সপ্তাহে বাড়ি-বাড়ি গিয়ে খোঁজ নিচ্ছেন আশাকর্মী ও গ্রামীণ সম্পদ কর্মীরা। সুরক্ষিত থাকতে কী-কী করা দরকার, সে সব বুঝিয়ে আসছেন। পুর-এলাকায় আশাকর্মীদের সঙ্গে গ্রামীণ সম্পদ কর্মীদের বদলে এ কাজ করার কথা ‘এইচএইচডব্লিউ’ (অনারারি হেলথ ওয়ার্কার)-দের। তাঁদের আনা পরিসংখ্যান খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ ঠিক করে স্বাস্থ্য দফতর।
উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্তরে থাকে ছয় সদস্যের ‘ভেক্টর কন্ট্রোল টিম’। তারা ঝোপঝাড় কাটা, মশার লার্ভা মারার ওষুধ ছেটানোর মতো নানা কাজ করে। এই দু’টি দলের সমন্বয়ের উপরেও গুরুত্ব দিচ্ছে স্বাস্থ্য দফতর। বাড়ি-বাড়ি জ্বরের খোঁজ নিতে গিয়ে কোথায় ঝোপ রয়েছে, কোথায় জমা জল, কোথায় খোলা নালা— সব খবর নিয়ে আসেন আশাকর্মী ও গ্রামীণ সম্পদ কর্মীরা। সেই মতো স্বাস্থ্য দফতর ‘ভেক্টর কন্ট্রোল টিম’ পাঠাতে পারে।
দফতর সূত্রের খবর, সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রতি মাসে সিএমওএইচ-এর অফিসে একটি বৈঠক হবে বলে ঠিক হয়েছে। সেখানে ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক, পুরসভার স্যানিটারি ইনস্পেক্টর, সিএমওএইচ, ডেপুটি সিএমওএইচ, পতঙ্গবিদ, মহামারি বিশেষজ্ঞ এবং নিচুতলার স্বাস্থ্যকর্মীরাও থাকবেন।
বিষ্ণুপুর ও সোনামুখী পুর-এলাকায় এ বছর এখনও কোনও ডেঙ্গি আক্রান্তের সন্ধান মেলেনি। দু’টি পুরসভার তৃণমূলের বিদায়ী পুরপ্রধান তথা বর্তমান প্রশাসকেরা দাবি করেছেন, পরিস্থিতির মোকাবিলায় তাঁরা প্রস্তুত। তবে নানা প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা। বিষ্ণুপুরের বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ বলেন, ‘‘বিষ্ণুপুর ও সোনামুখী পুরসভায় কেন ডেঙ্গি আর ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে এখনও কোনও উদ্যোগ চোখে পড়ছে না? পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নিলে তার দায় কে নেবে?’’
বিজেপির বিষ্ণুপুর নগর মণ্ডলের সভাপতি উত্তম সরকারের টিপ্পনী, ‘‘পুরসভার নিকাশিনালাগুলি দেখলেই বোঝা যাচ্ছে, আমরা ডেঙ্গি থেকে কতখানি নিরাপদে আছি!” সোনামুখীর সিপিএম নেতা মনোজ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘পুরসভার বেশ কিছু জায়গায় নালাই নেই। করোনার প্রকোপের মধ্যে ডেঙ্গি যদি ছড়িয়ে পড়ে, তা হলে ভয়াবহ পরিস্থিতি হতে পারে। এখনও যদি পুরসভা নজর না দেয় তবে আর কবে দেবে?”
সোনামুখী পুরসভার প্রশাসক সুরজিৎ মুখোপাধ্যায়ের অবশ্য বক্তব্য, ‘‘চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত সোনামুখী পুরসভায় ডেঙ্গিতে কেউ আক্রান্ত হননি। তবে আমরা সতর্ক আছি। প্রচার চলছে। খুব শীঘ্রই স্বাস্থ্য কর্মীরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে জমা জল পর্যবেক্ষণ করে দফতরকে জানাবেন।”
বিষ্ণুপুর পুরসভার প্রশাসক শ্যাম মুখোপাধ্যায় বলেন, “অন্য বছরের মতো ডেঙ্গি প্রতিরোধে যে ভাবে সচেতনতামূলক উদ্যোগ হয়, এ বারও তাই হবে। তা ছাড়া, প্রতিটি ওয়ার্ডেই সতর্ক দৃষ্টি রেখেছেন আমাদের কাউন্সিলরেরা।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy