Advertisement
২৪ ডিসেম্বর ২০২৪
purulia

পর্যটকের ভিড়ে সংরক্ষণের কাজে ব্যাঘাত, দাবি

জেলার লোক-গবেষকদের একাংশের মতে, নিতুড়িয়ার গড়পঞ্চকোট পাহাড়ে ছিল পঞ্চকোট রাজবংশের তৃতীয় রাজধানী। আনুমানিক ৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে কীর্তিনাথ শিখর পাড়া থেকে গড়পঞ্চকোট পাহাড়ে রাজধানী স্থানান্তরিত করেন।

ছবি তুলতে মগ্ন। ছবি: সঙ্গীত নাগ

ছবি তুলতে মগ্ন। ছবি: সঙ্গীত নাগ

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল
নিতুড়িয়া শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০২২ ০৯:০০
Share: Save:

গড়পঞ্চকোট পাহাড়ের প্রত্নস্থল সংরক্ষণের কাজ শুরু করেছে রাজ্য হেরিটেজ কমিশন। তবে পর্যটনের মরসুম শুরু হতেই পাহাড়ে পর্যটকদের আনাগোনা বৃদ্ধি পাওয়ায় সমস্যায় পড়েছে সংরক্ষণের কাজ। পরিস্থিতি সামলাতে আপাতত গড়পঞ্চকোটে পর্যটকদের আসা নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে হেরিটেজ কমিশন। কমিশনের সংরক্ষণ স্থপতি অঞ্জন মিশ্র বলেন, ‘‘প্রাচীন মন্দির-সহ প্রত্নস্থলের সংরক্ষণের কাজ চলছে গড়পঞ্চকোট পাহাড়ে। এ সময়ে দলে দলে পর্যটকেরা পাহাড়ে এলে কাজের গতি বাধাপ্রাপ্ত হবে। পর্যটকদের আনাগোনায় তাই নিষেধাজ্ঞা জারি করা প্রয়োজন।” জেলা প্রশাসনকে ইতিমধ্যে বিষয়টি জানানো হয়েছে বলে জানান তিনি।

জেলার লোক-গবেষকদের একাংশের মতে, নিতুড়িয়ার গড়পঞ্চকোট পাহাড়ে ছিল পঞ্চকোট রাজবংশের তৃতীয় রাজধানী। আনুমানিক ৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে কীর্তিনাথ শিখর পাড়া থেকে গড়পঞ্চকোট পাহাড়ে রাজধানী স্থানান্তরিত করেন। তার পরে প্রায় আটশো বছরে ৩২ জন রাজা সেখান থেকে রাজত্ব পরিচালনা করেন। পাহাড়ের দক্ষিণে ১২ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ছিল রাজধানীর ব্যাপ্তি। পাঁচশো ফুট উপরে ছিল মূল দুর্গ আর পাদদেশে ছিল অন্দরমহল। যদি সব কিছু বর্তমানে কার্যত ভগ্নস্তূপে পরিণত হয়েছে। কিছু স্থাপত্যের কাঠামোটুকু কোনও মতে টিকে আছে।

সে প্রেক্ষিতে পাহাড়ের প্রত্নস্থল সংরক্ষণের দাবি ওঠে। গত বছর থেকে সেই কাজ শুরু করেছে রাজ্য হেরিটেজ কমিশন। সূত্রের খবর, কাছারিবাড়ি, রানিমহল, দু’টি জোড়বাংলো মন্দির-সহ কঙ্কালীকালি মন্দির, রঘুনাথ মন্দির, দুর্গা মন্দির,পঞ্চরত্নের মন্দির—এই আটটি জায়গায় চলছে সংরক্ষণের কাজ। তবে পর্যটনের মরসুম শুরু হতে বেড়েছে বিপত্তি, দাবি।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বড়দিন ও তার পরে ইংরেজি নববর্ষকে ঘিরে ফি বছর গড়ে কয়েক হাজার পর্যটকের ভিড় হয় গড়পঞ্চকোটে। রবিবার বড়দিনে সেই ছবিই দেখা গিয়েছে। এত লোকের ভিড় সামলে কী ভাবে সংরক্ষণ চালানো সম্ভব, প্রশ্ন তুলছে সংরক্ষণের কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাই। সম্প্রতি পাহাড়ে গিয়ে দেখা গেল, সংরক্ষণের কাজ যেখানে চলছে, তার পাশেই ভিড় জমিয়েছেন পর্যটকেরা। অনেকে ব্যস্ত নিজস্বী বা ছবি তুলতে। সংরক্ষণের কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার ডিরেক্টর শ্যামল রাজবংশী বলেন, ”আমরা পাঁচ-ছ’জনকে যে সাইটগুলিতে কাজ চলছে, সেখানে নজরদারি চালানোর জন্য রেখেছি। কিন্তু বিস্তীর্ণ এলাকায় তাঁদের পক্ষে নজরদারি করা সম্ভব হচ্ছে না। প্রশাসনিক সাহায্য প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।”

লোকজনের ভিড়ে সংরক্ষণের কাজে সমস্যাই শুধু নয়, কাজও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা কমিশনের সংরক্ষণ স্থপতি অঞ্জনের। তিনি বলেন,”অতীতের নির্দশনকে বজায় রেখে, সেই ধাঁচেই নতুন ভাবে স্থাপত্যগুলিকে সংরক্ষিত করা হচ্ছে। সাইটের মধ্যে লোকজন ঢুকে পড়লে সেগুলির ক্ষতি হতে পারে। আমরা চাইছে কোনও ভাবে যাতে পর্যটকেরা দলে দলে গাড়ি নিয়ে সাইট এলাকায় ঢুকতে না পারেন। তা ছাড়া অনেকেই স্থাপত্যগুলির উপরে উঠে পড়ছেন। এই ঘটনা ঐতিহ্যকে বজায় রাখার পরিপন্থী।”

তিনি আরও জানান, পাহাড়ের হেরিটেজ সাইটগুলির নিরাপত্তার জন্য জেলা প্রশাসনকে সাইটের সামনে বেড়া দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সংরক্ষণের কাজ সুষ্ঠু ভাবে চালিয়ে যেতে পর্যটনের মরসুমে পর্যটকদের আনাগোনা নিয়ন্ত্রণে হেরিটেজ কমিশনের সেক্রেটারি ও চেয়ারম্যানের সঙ্গে জেলা প্রশাসনকেও বলা হয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, বিষয়টি তাদের নজরে রয়েছে। তবে হেরিটেজ কমিশনের তরফে লিখিত আকারে কোনও প্রস্তাব এখনও আসেনি। জেলা তথ্য সংস্কৃতি আধিকারিক সিদ্ধার্থ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘সম্প্রতি কমিশনের সংরক্ষণ স্থপতি মৌখিক ভাবে বিষয়টি জানিয়েছেন। নিতুড়িয়া ব্লক প্রশাসনের সঙ্গে কথা হয়েছে। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।”

অন্য বিষয়গুলি:

purulia Tourists
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy