শুক্রবার, সন্ধায় বিষনুপুর মেলা। —নিজস্ব চিত্র।
বিষ্ণুপুরের ঐতিহ্যের মুকুটের একটা পালক হল দশাবতার তাস। মল্লরাজাদের বিনোদনের জন্য এই তাসের প্রচলন। সেই সময় থেকে আমরা বংশানুক্রমে দশাবতার তাস এঁকে যাচ্ছি। বিষ্ণুপুর মেলার প্রথম বছর থেকেই আমরা যুক্ত। তখন মেলার ছবি ছিল অন্যরকম। খড়ের চালাঘরে উঁচু পাটাতনে বসে আমরা দশাবতার তাস তৈরি করতাম। বিক্রির চেয়েও বড় ছিল প্রদর্শনী। দেশবিদেশের পর্যটকেরা তাস তৈরির পদ্ধতি দেখেই কেনার আগ্রহ প্রকাশ করতেন। মেলা কমিটির পক্ষ থেকে পুরস্কৃতও করা হত শিল্পীদের।
কিন্তু এখন শুধু বিক্রির জন্য হস্তশিল্পের দোকান বসে মেলায়। যাঁরা শিল্পী নন, তাঁরাও হস্তশিল্পীর তকমা নিয়ে মেলায় বসে যাচ্ছেন। গুণাগুণের ধারেপাশে না গিয়ে মোটা কাগজের উপরে খড়িমাটির প্রলেপে রং করে দশাবতার তাস তৈরি করে বিক্রি করছেন। ভেজাল খেয়ে মানুষ আসল জিনিসের স্বাদই ভুলে গিয়েছেন।
তবে আমরা ৩০ বছরের বেশি মেলায় দোকান করছি। সে সময় লাভের মুখ দেখেছিলাম। তবে তখন মেলায় পর্যটকদের একটা বড় অংশ জুড়ে ছিলেন বিদেশীরা। তাঁরা দশাবতার তাসের কদর বুঝতেন। ইদানীং বিষ্ণুপুর মেলা সঙ্কীর্ণ হয়ে গিয়েছে। হস্তশিল্পের মেলা দিয়ে শুরু হলেও এখন প্রকৃত শিল্পীদের সে ভাবে মেলায় দেখা মেলে কোথায়? নাচ, গান, হই-হুল্লোড়ে চাপা পড়ে যাচ্ছেন হস্তশিল্পীরা। তাঁদের কথা সে ভাবে ভাবছে না সরকারি দফতরগুলোও।
বিষ্ণুপুরের একটি প্রধান শিল্প পটশিল্প ও দশাবতার তাস। কিন্তু হস্তশিল্পের জেলা প্রতিযোগিতায় প্রতি বছর যোগ দিলেও মেলেনি স্বীকৃতি। অথচ আমরাই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও ভিন্ রাজ্যে গিয়ে সম্মান পাচ্ছি। আসলে আমরা পদ্ধতি মেনে একাধিক পর্যায়ের মাধ্যমে প্লেট তৈরি করি, তারপর সেখান থেকে বিভিন্ন মাপের তাস কেটে নিয়ে রং করি। এর কদর ক’জন বোঝে।
আগে ১২০ টি তাসের দাম ছিল ৮-১০ হাজার টাকা। এখন কাঁচামালের অভাবে দাম বেড়ে হয়েছে ১৫-২৫ হাজার টাকা।
নতুন প্রজন্মের শিল্পীরা এই কাজে আসতে এখন নিরাপত্তাহীনতারভয় পাচ্ছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy