বড়জোল গ্রামের বাড়ির সামনে ।(ইনসেটে) নিহত মলয় মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র
দশ দিন নিখোঁজ থাকার পরে এক তরুণের মৃতদেহ উদ্ধার হল পুকুর থেকে। পুলিশ জানায়, মৃতের নাম মলয় মণ্ডল (১৮)। বাড়ি রামপুরহাট থানার বড়জোল গ্রামে। বুধবার গভীর রাতে গ্রাম থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে, রামপুরহাট থানার চিতুড়ি এবং বোনোড়া গ্রাম যাওয়ার রাস্তার ধারে একটি কালী মন্দির সংলগ্ন পুকুর থেকে মলয়ের দেহ উদ্ধার হয়। ওই ঘটনায় মলয়েরই বাড়িতে নানা ফাইফরমাশ খাটা এক দম্পতিকে বুধবার রাতেই পুলিশ গ্রেফতার করে।
নিহতের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে ধৃত মুক্তা মাল ও তাঁর স্ত্রী তনু মালের বিরুদ্ধে খুন ও প্রমাণ লোপাটের মামলা রুজু করেছে। বৃহস্পতিবার ওই দম্পতিকে রামপুরহাট এসিজেএম আদালতে তুলে ৭ দিনের হেফাজতে চেয়ে আবেদন জানায় পুলিশ। বিচারক পরাগ নিয়োগী সে আবেদন মঞ্জুর করেন। মুক্তা ও তনুর বাড়ি মুরারই থানার পলসা গ্রামে হলেও কাজের সূত্রে তাঁরা দু’বছর যাবত বড়জোল গ্রামে থাকতেন। জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘প্রাথমিক তদন্তে আমাদের অনুমান, বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের জেরেই এই খুনের ঘটনা। মলয়কে খুনের ঘটনা পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে কবুল করেছে মুক্তা। দেহ লোপাটে তাকে সাহায্য করে তনু। গলায় দড়ির ফাঁস লাগিয়ে মলয়কে খুন করা হয়েছে বলে ধৃতেরা জেরায় জানিয়েছে।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নিহত মলয়ের বাবা বালক মণ্ডল পেশায় চাষি। তিনি ক্যান্সার আক্রান্ত। মলয় তাঁর একমাত্র সন্তান। অষ্টম শ্রেণি পাশ ওই তরুণ মিষ্টির কারিগর ছিলেন। বালকবাবুর চাষের জমি দেখভাল-সহ তাঁর বাড়ির অন্য কাজ করতেন মুক্তা ও তনু। সেই সূত্রে বড়জোল গ্রামে বালকবাবুর দাদার বাড়িতে স্ত্রী ও দুই নাবালক ছেলেমেয়েকে নিয়ে থাকেন মুক্তা। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, বাড়িতে কাজের সূত্রে মলয়ের সঙ্গে বছর সাতাশের মুক্তা মালের গভীর বন্ধুত্ব ছিল। বছর বাইশের তনুর সঙ্গেও ঘনিষ্ঠতা ছিল মলয়ের।
পরিবারের দাবি, ৯ মার্চ, দোলের দিন বিকেলে মলয় রামপুরহাটের কাষ্ঠগড়া অঞ্চলের পারকান্দি গ্রামে দোলের মেলা উপলক্ষে মিষ্টি তৈরির জন্য বাড়ি থেকে একা বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। চার-পাঁচ দিন ওই মেলায় কাজ করে বাড়ি চলে আসার কথা ছিল। পাঁচ দিন পরেও মলয় না ফেরায় পরিবার খোঁজখবর নিতে শুরু করে। মলয়ের কাছে থাকা দু’টি মোবাইল ফোনেও যোগাযোগ করা যাচ্ছিল না। বুধবার রামপুরহাট থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করতে গিয়ে মলয়ের মোটরবাইকের হদিস পান বালকবাবুরা। পুলিশ তাঁদের জানায়, চিতুড়ি বেনোড়া গ্রামের রাস্তার ধারে ওই মোটরবাইক পড়ে থাকতে দেখে এক সিভিক ভলান্টিয়ার ১০ মার্চ রামপুরহাট থানায় জমা দিয়েছিলেন।
তখনও মলয়ের দেহ পাওয়া যায়নি। উদ্বিগ্ন গ্রামবাসী বুধবার সন্ধ্যায় গ্রামের দুর্গামন্দিরে আলোচনায় বসে। আলোচনা চলাকালীন মুক্তাকে ডাকা হয়। গ্রামবাসীর দাবি, মুক্তা প্রথমে কিছু জানাতে চায়নি। পরে মলয়কে খুনের ঘটনা স্বীকার করে সকলের সামনে। বাসিন্দাদের একাংশ জানান, মুক্তা তাঁদের জানিয়েছেন, দোলের দিন চিতুড়ি গ্রামে বিয়েবাড়িতে স্ত্রী ও ছেলেমেয়েকে নিয়ে তিনি গিয়েছিলেন। বিয়ে বাড়ির ফাঁকে কোনও এক সময় তাঁর স্ত্রী তনু বাইরে চলে যান। পরে চিতুড়ির পুকুর পাড়ে স্ত্রীর সঙ্গে মলয়কে ঘনিষ্ঠ ভাবে মেলামেশা করতে দেখেন মুক্তা। পুলিশের দাবি, এর পরেই মুক্তা মলয়কে শ্বাসরোধ করে খুন করেন। সেই কাজে স্ত্রী তনু সাহায্য করেন। ১০ মার্চ বড়জোল গ্রামে ফিরে যথারীতি মলয়দের বাড়িতে কাজও করেন ওই দম্পতি।
সব জেনে গ্রামবাসীরাই পুলিশে খবর দেন। বুধবার রাতেই পুলিশ মুক্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে মলয়ের দেহ উদ্ধার করে। নিহত মলয়ের মা সুমিত্রা মণ্ডল বলেন, ‘‘আমরা বুঝতেই পারছি না, এত বড় একটা ঘটনা ঘটিয়েও কী করে বাড়িতে এসে ঠান্ডা মাথায় কাজ করতে পারল মুক্তা! গ্রামবাসীরা চাপ না দিলে হয়তো পুরো ঘটনা জানতেই পারতাম না। আমি চাই মুক্তা-তনুর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy