আন্দোলন চলছেই। পুরুলিয়া প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সামনে মঙ্গলবার তোলা নিজস্ব চিত্র।
নিয়োগে বিধি মানা হয়নি বলে কাউন্সেলিং আটকাতে গেট আটকে চলছে লাগাতার অবস্থান-বিক্ষোভ। বিক্ষোভকারীরা জানতেও পারলেন না, ফোনে কাউন্সেলিং সেরে অনেককে নিয়োগপত্র ‘ই-মেল’ করে দিয়েছে পুরুলিয়া জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ। সংসদের এক আধিকারিকের সরস মন্তব্য, ‘‘ওঁরা ভেবেছিলেন দরজা আটকে দিলে কাউন্সেলিং বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু কৌশলে আমরা ফোনে প্রার্থীদের কাউন্সেলিং সেরে নিয়োগপত্র ই-মেল করে দিয়েছি। একেবারে লুকোচুরি খেলা!’’
প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে সংরক্ষণ বিধি মানা হয়নি, এই অভিযোগে গত শুক্রবার থেকে পুরুলিয়া জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের দরজায় বসে রয়েছে আন্দোলনকারীরা। রীতিমতো সংসদ চত্বরে খিচুড়ি রান্না করে, সতরঞ্জি বিছিয়ে রাতে ঘুমিয়ে অবস্থান চালানো হচ্ছে। প্যানেল বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে সামিল হয় আদিবাসী কুড়মি সমাজ। সংসদের কর্মীরাও অফিসে ঢুকতে পারেননি। এর জেরে শুক্রবার থেকে রবিবার পর্যন্ত যে ১০৯২ জনের কাউন্সেলিং হওয়ার কথা ছিল, তাঁরা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েন।
মঙ্গলবারও তাঁরা একইরকম ভাবে আন্দোলন চালিয়ে গেলেন। প্রয়োজনীয় অনুমতি নিয়ে সংসদ থেকে আগেই জানানো হয়েছিল, তাঁরা ফোনেই কাউন্সেলিং করবেন। হলও তাই। কলকাতা থেকে কাউন্সেলিংয়ের যোগ্য প্রার্থীদের নামের তালিকা পুনরায় আনিয়ে সোমবার রাতেই নিয়োগপত্র পাঠানোর কাজ শুরু করে দেয় সংসদ।
কয়েকজন প্রার্থী জানান, সোমবার রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় তাঁদের মোবাইলে ফোন করে সংসদের কর্মীরা নাম-ধাম জানতে চান। তারপরে জানানো হয়, নিয়োগপত্র ই-মেল করে দেওা হচ্ছে। কয়েকদিন ধরে সংশয়ে থাকার পরে রাতের ওই ফোন ও মেল পেয়ে অনেকে তাজ্জব হয়ে যান। সংসদের সভাপতি হেমন্ত রজক মঙ্গলবার বলেন, ‘‘১০৯২ জনের মধ্যে বেশির ভাগেরই কাউন্সেলিংয়ের কাজ হয়ে গিয়েছে। প্রত্যেক প্রার্থীরই মেল আইডি আমাদের কাছে রয়েছে। সেই ঠিকানায় ইতিমধ্যে অনেকের নিয়োগপত্রও পাঠানো হয়েছে। তাঁদের অনেকে কাজে যোগও দিয়েছেন।’’ তিনি জানান, বাকিদের নিয়োগপত্রও একই ভাবে পৌঁছে যাবে।
খবরটা এ দিন সকালে কানে গেলেও সংসদের দরজা থেকে সরেননি আন্দোলনকারীরা। এ দিন অবশ্য রান্না করা হয়নি। আন্দোলনকারীদের পক্ষে অজিত মাহাতো বলেন, ‘‘মোবাইলে কাউন্সেলিং করে নিয়োগপত্র পাঠানো শুরু হয়েছে বলে শুনেছি। কিন্তু আমাদের দাবি তো নায্য। সংসদ তালিকা প্রকাশই বা করছে না কেন? কেনই বা মোবাইলে কাউন্সেলিং করে নিয়োগপত্র ইমেল করতে হচ্ছে?’’ তিনি জানান, আদালতে মামলা করা হয়েছে। আদালতই তাঁদের ভরসা।
এ দিন সন্ধ্যায় ‘পুরুলিয়া নাগরিক মঞ্চ’-র পক্ষ থেকে সংরক্ষণ বিধি না মেনে নিয়োগের প্রতিবাদে শিক্ষা দফতরের অফিস থেকে শহরের ট্যাক্সি স্ট্যান্ড পর্যন্ত মোমবাতি মিছিল বের হয়। মিছিলে নিয়োগে দুর্নীতি নিয়ে নানা স্লোগানও ছিল।
দফতর খোলা নিয়ে এ দিনও প্রশাসনের উদ্যোগ চোখে পড়েনি। এ দিন আন্দোলনকারীরা কবে সংসদ থেকে সরবেন তা জানাননি। তাঁরা জানান, সংসদের আধিকারিকরা এসে আমাদের প্রশ্নের জবাব না দেওয়া পর্যন্ত সরব না।’’ যদিও জেলা বিদ্যালয় পরিদকর্শক (প্রাথমিক) সঙ্ঘমিত্র মাকুড় বলেন, ‘‘কর্মীরা আসছেন, ফিরে যাচ্ছেন।’’
সরকারি অফিস কার্যত ‘বেদখল’ হয়ে কতদিন থাকবে?
রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো এ দিনও বলেন, ‘‘দফতর খোলার বিষয়টি নিয়ে কী করা যায় দেখছি।’’ তবে জেলা সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতো বলেন, ‘‘সরকারি দফতর বন্ধ রেখে আন্দোলন করা উচিত নয়। দাবি জানানোর জন্য আদালত রয়েছে। আমরা সহিষ্ণুতা দেখাচ্ছি। দেখা যাক ওঁরা ক’দিন গেট আটকে থাকেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy