Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

ভাতা বৃদ্ধি নিয়ে বিতর্ক পুরুলিয়ায়

পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের সচিবকে পাঠানো চিঠিতে এই যুক্তি দেখিয়ে উত্তমবাবু পুরসভার বোর্ড মিটিং-এ ভাতা বাড়ানোর সিদ্ধান্তটিকেই অবৈধ বলে অভিযোগ করেছেন। জেলাশাসককেও এই অভিযোগ জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন বলে উত্তমবাবুর দাবি।

প্রশান্ত পাল
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০১:২১
Share: Save:

নিজেদের ভাতা বাড়িয়ে বিতর্কে জড়ালেন পুরুলিয়া পুরসভার কাউন্সিলররা। জেলা পরিষদের কংগ্রেস সদস্য উত্তম বন্দ্যোপাধ্যায় এই ব্যাপারে আপত্তি তুলে সম্প্রতি চিঠি দিয়েছিলেন পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের সচিবকে। সূত্রের খবর, তার জেরে কিছু দিন আগেই দফতরের সেক্রেটারি পুরুলিয়ার পুরপ্রধানের কাছে বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছেন।

পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, গত মে-র শেষে সিদ্ধান্ত হয় পুরপ্রধান, উপ-পুরপ্রধান, চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিল, বিরোধী দলনেতা ও কাউন্সিলরদের ভাতা বাড়ানো হবে। জুন থেকে সবার পারিশ্রমিক বেড়ে হয় আগের দ্বিগুণ। উত্তমবাবুর দাবি, এখন পুরুলিয়ার পুরপ্রধান মাসোহারা ভাতা পান ৩২ হাজার টাকা। উপ-পুরপ্রধান ২৬ হাজার টাকা। বিরোধী দলনেতা ও চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিলরা পান ২০ হাজার টাকা করে। অন্য কাউন্সিলররা প্রতি মাসে ভাতা পান ১৬ হাজার টাকা।

উত্তমবাবুর দাবি, এক জন কাউন্সিলর গ়ড়ে হাজার তিনেক নাগরিকের প্রতিনিধিত্ব করেন। সেখানে জেলা পরিষদে সদস্যরা প্রতিনিধিত্ব করেন চল্লিশ থেকে ষাট হাজার মানুষের। কিন্তু জেলা পরিষদের সদস্যদের মাসোহারা ভাতা দেড় হাজার টাকা। এমনকী, জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষরাও মাসে ৪ হাজার, সহ-সভাধিপতি ৫ হাজার এবং খোদ সভাপতি ৭ হাজার টাকা পান। সে ক্ষেত্রে কীসের ভিত্তিতে এই ভাতা বাড়ানো হল সেই প্রশ্ন তুলেছেন উত্তমবাবু।

পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের সচিবকে পাঠানো চিঠিতে এই যুক্তি দেখিয়ে উত্তমবাবু পুরসভার বোর্ড মিটিং-এ ভাতা বাড়ানোর সিদ্ধান্তটিকেই অবৈধ বলে অভিযোগ করেছেন। জেলাশাসককেও এই অভিযোগ জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন বলে উত্তমবাবুর দাবি।

জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, পুরপ্রধান, কাউন্সিলর, চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিলদের ভাতা সরকার নির্দিষ্ট করে দিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, পুরপ্রধান পাবেন মাসে ৫ হাজার টাকা। উপ-পুরপ্রধান সাড়ে ৩ হাজার, বিরোধী দলনেতা এবং চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিলরা পাবেন ২ হাজার এবং কাউন্সিলররা দেড় হাজার টাকা করে।

তবে পুরুলিয়ার পুরপ্রধান সামিমদাদ খান ভাতা বাড়ানোর পদ্ধতিতে কোনও অনিয়ম দেখতে পাচ্ছেন না। তাঁর দাবি, বোর্ড মিটিং-এ সিদ্ধান্ত নিয়েই সব কিছু হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘প্রয়াত পুরপ্রধান কে পি সিংহ দেও সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, পুরসভার জনপ্রতিনিধিদের ভাতা বাড়ানো হবে। পুরসভার কার্যবিবরনীতে সেটা লিপিবদ্ধও রয়েছে। আমরা সিদ্ধান্তটা কার্যকর করেছি মাত্র।’’ পুরপ্রধানের মতে, এখন যে ভাবে একজন কাউন্সিলরকে সারাটা দিন পুরএলাকার নাগরিকদের জন্য পরিষেবা দিতে হয়, সেই নিরিখে এই ভাতা বেশি কিছু নয়। তিনি বলেন, ‘‘তাছাড়া আমাদের ভাতা তো আমরা পুরসভার নিজস্ব তহবিল থেকেই নিচ্ছি।’’

এই প্রসঙ্গে অবশ্য অন্য একটি বিতর্কও সামনে চলে আসছে। পুরসভার জনপ্রতিনিধিদের ভাতা দেওয়া হয় পুরসভার নিজস্ব তহবিল থেকে। সেই তহবিলে টানাটানির জন্য এলাকার অনেক উন্নয়নের কাজই থমকে আছে বলে বিভিন্ন সময়ে শোনা গিয়েছে। পুরসভা সূত্রেরই খবর, শহরের জি এন মুখার্জি স্ট্রিট, স্টেশন রোড, মানভূম ভিক্টোরিয়া ইন্সটিটিউট থেকে ভাটবাঁধ পর্যন্ত রাস্তা, অনেক এলাকার নিকাশি প্রভৃতির সংস্কারের কাজ থমকে রয়েছে টাকার অভাবে। এই পরিস্থিতিতে কাউন্সিলরদের বর্ধিত ভাতা নেওয়াটা কতটা যুক্তিসঙ্গত, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

বিরোধী দলনেতা তথা পুরুলিয়ার বিধায়ক কংগ্রেসের সুদীপ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এটা কতটা যুক্তিসঙ্গত তা নিয়ে আমারও প্রশ্ন রয়েছে।’’ তবে বর্ধিত ভাতা তিনি গ্রহণ করছেন। সুদীপবাবু বলেন, ‘‘আমি ক্যাগ-কে বিষয়টি জানিয়েছি। দেখি তাঁরা কী বলেন।’’

পুরুলিয়ার প্রাক্তন পুরপ্রধান সিপিএম-এর বিনায়ক ভট্টাচার্য বিষয়টিকে দৃষ্টিকটু বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘মনে রাখা দরকার এটা কোনও চাকরি নয়।’’

তৃণমূলেরই প্রাক্তন পুরপ্রধান তারকেশ চট্টোপাধ্যায়ও বলেন, ‘‘এ ভাবে নিজেদের ভাতা বাড়িয়ে নেওয়াটা ঠিক নয়। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পরে দেখেছিলাম আমার আগের পুরপ্রধান পারিশ্রমিক বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। আমি এক হাজার টাকা করে কমিয়ে দিয়েছিলাম।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE