Advertisement
১৮ জানুয়ারি ২০২৫
পেটে টান
Coronavirus

করোনার মার, হাত গুটিয়ে তাঁতিরা

করোনা মোকাবিলায় সারা দেশে লকডাউনের জেরে তাঁদের কাছে নেই রেশম সুতোর জোগান।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০২০ ০১:০২
Share: Save:

এলাকায় ঘুরলে কান পাতলেই শুনতে পাওয়া যেত হস্তচালিত তাঁতের খটাখট শব্দ। করোনাভাইরাস ঠেকাতে লকডাউন শুরু হতেই সব বন্ধ। বীরভূমের মাড়গ্রাম থানার বশোয়া, বিষ্ণুপুর, ললিতাকুন্ড, তেঁতুলিয়া, কালিদহ, নতুনগ্রাম, পাতনা, পোড্ডার মতো ধুঁকতে থাকা তাঁত শিল্পীদের গ্রামে করোনা কেড়ে নিয়েছে সেই শব্দ। কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সংসার চলবে কী করে, তা ভেবেই দিশাহারা তাঁরা।

শুধু মাড়গ্রাম থানার বিষ্ণুপুর অঞ্চলের ওই সমস্ত গ্রামের তাঁতশিল্পীরাই নন, তারাপীঠ থানার কবিচন্দ্রপুর, রামপুরহাট থানার বেলিয়া, নলহাটি থানার ভদ্রপুর-সহ সারা বীরভূম জেলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রায় ১৫ হাজার তাঁতশিল্পীরা করোনার ধাক্কায় কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। করোনা মোকাবিলায় সারা দেশে লকডাউনের জেরে তাঁদের কাছে নেই রেশম সুতোর জোগান। নেই বাজারও। রসদের অভাবে মাকু হাতে রেশম থান বোনার কাজ বন্ধ। যন্ত্রচালিত তাঁত ও নানা ধরনের রঙিন কাপড় অনেকদিন আগেই হস্তচালিত তাঁতিদের বাজার কেড়ে নিয়েছে। তাই অনেকেই পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় রোজগারের পথ বেছে নিয়েছেন। কেউ কেউ কষ্ট করে বাপ ঠাকুরদার ব্যবসা ধরে রেখেছিলেন। কিন্তু এই অবস্থায় তা কতদিন চালানো যাবে তা নিয়েই সন্দিহান তাঁরা।

সাম্প্রতিক অতীতে নোটবন্দি, জিএসটি-র ধাক্কা সামলেও ওই শিল্পীরা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এর সঙ্গে রেশম থানের দাম বৃদ্ধি পেল কি না বা রেশম থানের দাম বর্তমান বাজারমূল্য হ্রাস পেল কি না তার দিকে নজর রাখতেন তাঁরা। সব মিলিয়ে প্রতিযোগিতার বাজারে গ্রামীণ ক্ষুদ্র ও কুটির এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন তাঁত শিল্পীরা। করোনা এক লহমায় সেই শিল্পকে গ্রাস করে ফেলেছে। লকডাউনে এখন দিন কী করে কাটবে সেই চিন্তায় ঘুম ছুটেছে সবার।

বিষ্ণুপুরের বাসিন্দা অপূর্ব চৌধূরী জানান, তাঁত শিল্প নির্ভর করে এলাকায় উৎপন্ন রেশম চাষিদের রেশম গুটি থেকে উৎপাদিত রেশম সুতোর উপরে। এলাকার তাঁতিরা এখন মহাজন নির্ভর। মহাজনরা এলাকার তাঁতিদের রেশম সুতো জোগান দিয়ে রেশম থান নিয়ে যান। অপূর্ববাবুর কথায়, ‘‘লকডাউনের ফলে এলাকায় হাজনদের আনাগোনা বন্ধ। চাষিরাও তাঁদের উৎপাদিত রেশম সুতো স্থানীয় বা বাইরের বাজারে বিক্রি করতে আসতে পারছেন না। এর ফলে তাঁতিদের কাছে রেশমের জোগান শেষ হয়ে গিয়েছে।’’

এক সময় বিষ্ণুপুর অঞ্চলে তাঁতিদের উৎপাদিত রেশম থানের কদর ছিল নানা এলাকায়। ১৯৭৭ সালের আগে এলাকায় কেন্দ্র খাদি বোর্ড অনুমোদিত দুটি সমবায় ছিল। পরবর্তীতে ১৯৭৭ সাল থেকে ১৯৯০ সালের মধ্যে এলাকায় তাঁত চাষিদের নিয়ে ১০ থেকে– ১২টি তন্তু সমবায় গড়ে উঠেছিল। এলাকার তাঁতিরা জানান, বছর ১৫ থেকে এলাকায় তাঁত শিল্পে মন্দা দেখা দিয়েছে।

তাঁতিরা জানাচ্ছেন, বর্তমান বাজার মূল্য অনুযায়ী ১১ মিটার রেশম থানের দাম দু’হাজার টাকা। কিছুদিন আগেও সেই মূল্য আড়াই হাজার টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা ছিল। আবার রেশম চাষিদের কাছ থেকে উৎপাদিত রেশম সুতোর দাম আগে ছিল ৩ হাজার টাকা বর্তমান মূল্য ২ হাজার টাকা। একজন তাঁতি স্থানীয় বাজারে ৪০০ গ্রাম রেশম থান এক হাজার টাকা দামে কিনে শ্রমিকদের মাধ্যমে থান উৎপাদন করে কলকাতা, শ্রীরামপুর বাজারে সেই থান ৩০০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা লাভে বিক্রি করতেন।

তেঁতুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা বণ্বেশ্বর সাহা জানান, একটা ১১ মিটার থান বুনতে তিন দিন সময় লাগে। প্রতিদিন দু’জন করে শ্রমিক লাগে। ছ’জন শ্রমিক পারিশ্রমিক হিসাবে প্রতিদিন ২০০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা পেতেন। বর্তমানে রেশম থানের দাম কমে যাওয়ায় শ্রমিকদের আয় ১৭৫ টাকা নেমে গিয়েছে। তাতেও তাঁতিরা থান বোনার কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু করোনা ধাক্কায় কাজ হারিয়েছেন তাঁতিরা। এমন পরিস্থিতিতে দিশেহারা তাঁতিরা সরকারি অনুদান বা আর্থিক সাহায্যের প্রত্যাশা করছেন। তাঁদের কথায়, ‘‘সরকার কিছুটা সাহায্য করলেও আমাদের চিন্তা একটু কমবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy