Advertisement
২৯ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus

বন্ধ রুজি, বদলে যাচ্ছে পেশা

ঝালদার তুলিন এলাকার কিছু মানুষ লটারির টিকিট বিক্রি করে সংসার চালাতেন। টিকিট বিক্রির কমিশন ছাড়া, টিকিটের ক্রেতা বড় প্রাইজ় পেলে তা থেকে কমিশনও পেতেন।

অন্য ভূমিকায়: তুলিনে। নিজস্ব চিত্র

অন্য ভূমিকায়: তুলিনে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
আদ্রা ও ঝালদা শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০২০ ০২:৪৬
Share: Save:

করোনা-সংক্রমণ ঠেকাতে তিন দফায় বেড়েছে ‘লকডাউন’। এই পরিস্থিতিতে অনেকেরই রুজি বন্ধ। সংসার চালাতে তাই অনেকেই বিকল্প পেশা খুঁজে নিয়েছেন। কেউ দিনমজুর হয়েছেন। কেউ আবার রাস্তার ধারে বসে দাঁড়িপাল্লা হাতে আনাজ বিক্রি করছেন। কেউ বা মাছ নিয়ে ঘুরছেন গ্রামে গ্রামে।

ঝালদার তুলিন এলাকার কিছু মানুষ লটারির টিকিট বিক্রি করে সংসার চালাতেন। টিকিট বিক্রির কমিশন ছাড়া, টিকিটের ক্রেতা বড় প্রাইজ় পেলে তা থেকে কমিশনও পেতেন। তুলিনের লটারি বিক্রেতা বিদেশি গড়াই এখন মাঝপাড়া এলাকায় রাস্তার পাশে বসে আনাজ বিক্রি করছেন। তাঁর কথায়, ‘‘পেট চালাতে হবে। তাই আনাজ বিক্রির পেশাকেই বেছে নিয়েছি। এতে লটারির টিকিট বিক্রির মতো লাভ নেই। কিন্তু কিছু তো পাচ্ছি।’’ অনেক লটারি টিকিট বিক্রেতা এখন মুদির দোকানে কিংবা রেশন ডিলারের কাছে সামান্য বেতনে কাজ শুরু করেছেন। তাঁদের এক জনের কথায়, ‘‘মুদির দোকানে কাজ করছি। বেতন সামান্য। কিন্তু কী আর করা যাবে।’’ পরিচিত এক ব্যক্তির সঙ্গে যৌথ ভাবে ব্যবসা শুরু করেছেন তুলিন এলাকার লটারির টিকিট বিক্রেতা সঞ্জীব পোদ্দার। তাঁর কথায়, ‘‘মূলধন ছিল না বলে বন্ধুর সঙ্গে যৌথ ভাবে আনাজের ব্যবসা শুরু করেছি। বাড়িতে বসে থাকলে সংসার চলবে না।’’

আদ্রার ডিভিসি কলোনির বাসিন্দা শোভা পাল এক জনের বাড়িতে রান্নার কাজ করতেন। সংক্রমণের আশঙ্কায় এখন কাজ হারিয়েছেন। এ দিকে দিনমজুরিও বন্ধ তাঁর স্বামী চণ্ডী পালের। এই অবস্থায় সংসার চালাতে ঠেলাগাড়ি জোগাড় করে আদ্রার সুভাষনগর, নিউকলোনিতে পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে ওই দম্পতি এখন আনাজ বিক্রি করছেন। তাঁদের কথায়, ‘‘সংসার চালাতে আনাজ বিক্রি করতে হবে, কোনওদিন ভাবিনি।”

ওই দম্পতির মতোই পেশা বদলেছে আদ্রার বাসিন্দা তাপস কুণ্ডুর। আদ্রার ইয়ং মার্কেটে দীর্ঘদিনের বই, খাতা, কলমের ব্যবসা ছিল তাপসবাবুর। তিনি জানাচ্ছেন, ‘লকডাউন’-এর জেরে তাঁর দোকান বন্ধ। তাই দোকানের সামনেই এখন ফল বিক্রি করছেন তিনি। পেশা বদলেছে রঘুনাথপুর থানার বিলতোড়া গ্রামের বাসিন্দা প্রকাশ চক্রবর্তীরও। আসানসোলের একটি ডেকোরেটার্সে প্যান্ডেল বাঁধার কাজ করতেন তিনি। কাজ বন্ধ। এখন গ্রামে গ্রামে ঘুরে মাছ বিক্রি করছেন বছর তিরিশের প্রকাশ। তিনি বলেন, ‘‘মাছ বিক্রির অভিজ্ঞতা কোনও দিন ছিল না। সাইকেলের ক্যারিয়ারে মাছের ঝুড়ি নিয়ে চার-পাঁচটি গ্রামে ঘুরে মাছ বিক্রি করে সংসার চালাতে হচ্ছে।’’ ট্রেনে জুতো পালিশ করতেন আদ্রার আড়রা গ্রামের রাজেশ দাস। ট্রেন বন্ধ। কিন্তু জীবন থেমে থাকবে না। রাজেশ এখন সাইকেলে গ্রামে গ্রামে ঘুরে আনাজ বিক্রি করছেন।

‘লকডাউন’ উঠে গেলেও তাঁরা পুরনো পেশায় ফিরতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সংশয়ে অনেকেই। সমাজকর্মীদের একাংশের মতে, ‘লকডাউন’ উঠে গেলেও পুরনো পেশায় ফেরা হয়তো সম্ভব হবে না অনেকেরই।

পুরুলিয়া শহরের জে কে কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ তথা সমাজকর্মী আবু সুফিয়ানের মতে, ‘‘লকডাউন উঠলেও বহু মানুষের কাজ হারানোর আশঙ্কা রয়েছে। ফলে পুরনো পেশায় ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করলেও আগের মতো লাভ আর নাও হতে পারে। ফলে তখন বদলে ফেলা এই পেশাই হয়তো আঁকড়ে নতুন করে বাঁচার চেষ্টা করতে হবে অনেককে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy