প্রতীকী ছবি।
ধান বিক্রি করে পাওয়া ৭০ হাজার টাকার চেক ব্যাঙ্কে জমা করার নথি নিয়ে ব্যাঙ্কের দরজায় ঘুরছেন বাঁকুড়ার ছাতনার ঝগড়াপুরের চাষি নিমাই চক্রবর্তী।
তাঁর অভিযোগ, প্রায় দেড় মাস আগে ব্যাঙ্কে চেক জমা দিলেও, তাঁর অ্যাকাউন্টে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত টাকা জমা পড়েনি। এ দিকে, হাতে নগদ না থাকায় ‘লকডাউন’-এ সংসার টানতে পরিচিতদের কাছে ধার-দেনায় কার্যত ডুবে গিয়েছেন তিনি। শুধু তিনিই নয়, ধান বিক্রি করে টাকা আটকে গিয়েছে আরও বেশ কয়েকজন চাষির। তবে কর্মী-সঙ্কটের অভাবে অনেকের চেক ভাঙানো যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন বঙ্গীয় গ্রামীণ বিকাশ ব্যাঙ্কের জেলা শাখার ম্যানেজার সন্দীপন পাল। বাঁকুড়ার লিড ব্যাঙ্ক ম্যানেজার রমেশ প্রসাদ পুরো ঘটনাটি শুনে বলেন, “চেক ভাঙাতে দেড় মাস সময় লাগার কথাই নয়। ব্যাঙ্কের সঙ্গে কথা বলব।”
ছাতনার ঝগড়াপুরে চাষাবাদ করেই সংসার চালান নিমাইবাবু। বৃদ্ধ জানান, গত ১৬ মার্চ গ্রাম থেকে সাত কিলোমিটার দূরে ট্রাক ভাড়া করে কিসানমান্ডিতে সরকারি ধান্য ক্রয় কেন্দ্রে প্রায় ৩৮ কুইন্টাল ধান নিয়ে গিয়ে বিক্রি করেছিলেন। খাদ্য দফতরের তরফে ধানের মূল্য বাবদ ৭০,৬২৯ টাকার চেক তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয়। দু’দিন পরে ১৮ মার্চ ছাতনার বঙ্গীয় গ্রামীণ বিকাশ ব্যাঙ্কে সেই চেক জমা করেন নিমাইবাবু।
তিনি বলেন, “ব্যাঙ্কের কর্মীরা জানিয়েছিলেন, এক সপ্তাহের মধ্যেই টাকা তাঁর ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্টে জমা পড়ে যাবে। কিন্তু তার পরে এত দিন পার হয়ে গিয়েছে। সে টাকা জমা পড়েনি। কোথায় সমস্যা, তা জানতে প্রতিদিন ছাতনায় ব্যাঙ্কে যাই। কেউ কিছু বলতে পারেন না। সাইকেল নিয়ে বাঁকুড়া শহরে ব্যাঙ্কের প্রধান অফিসেও গিয়েছি। সেখানেও আশ্বাস ছাড়া, কিছু পাইনি।’’
তিনি জানান, বাড়িতে এখনও প্রায় ৭০ বস্তা ধান মজুত রয়েছে। কিন্তু ‘লকডাউন’-এর জন্য বিক্রি করতে পারেননি। এই অবস্থায় সংসারের খরচ জোটাতে পরিচিতদের কাছে ধার করেছিলেন।
নিমাইবাবুর কথায়, ‘‘বাজারে একাধিক পরিচিতের কাছে মোটা অঙ্কের টাকা দেনা হয়ে গিয়েছে। পাওনাদারেরা এ বার বাড়িতে এসে টাকা চাইছেন। লজ্জায় মুখ দেখাতে পারছি না। এখন শুধু সত্তর হাজার টাকার চেকের ‘রিসিভড’ করা ওই কাগজ ছাড়া, আমার কাছে কিছু নেই।” তাঁর স্ত্রী মমতাদেবী বলেন, “হাতে টাকা নেই। রেশনে যা পাচ্ছি, তা দিয়ে চালাতে হচ্ছে। চেকের টাকা পাওয়া গেলে, এই দিন দেখতে হত না।”
সমস্যা কোথায়? বঙ্গীয় গ্রামীণ বিকাশ ব্যাঙ্কের ছাতনা শাখার ম্যানেজার দেবজিৎ দত্ত বলেন, “নিমাইবাবুর সমস্যাটি আমাদের নজরেও আছে। তাঁর মতোই আরও জনা ছয়েক চাষির ধান বিক্রির চেক আমরা কুরিয়ার মারফত জেলা শাখায় পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু তার পর আর কিছু খবর পাইনি।” তাঁর সংযোজন, “কুরিয়ারের কোনও সমস্যা হয়েছে, না জেলা শাখায় কোনও সমস্যা হচ্ছে, তা জানার চেষ্টা করছি।”
ব্যাঙ্কের জেলা শাখার ম্যানেজার সন্দীপন পাল এই ঘটনার জন্য ব্যাঙ্কের পরিকাঠামোগত সমস্যাকেই তুলে ধরছেন।
তিনি বলেন, “নিমাইবাবু আমার কাছে সমস্যাটি নিয়ে এসেছিলেন। তবে তিনি একা নন, জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ধান বিক্রি করে পাওয়া প্রায় ১০ হাজার চাষির চেক এখনও আমরা ভাঙাতে পারিনি। কর্মী-সঙ্কটের কারণেই এটা হচ্ছে।”
তাঁর দাবি, প্রতিদিন দেড় হাজার চেক ভাঙানোর লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছেন কর্মীরা। তাঁর আশ্বাস, “আমরা যত দ্রুত সম্ভব চাষিদের চেকগুলি ভাঙানোর চেষ্টা করছি। আশা করছি, শীঘ্রই সমস্ত চাষিরাই চেকের টাকা পেয়ে যাবেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy