Advertisement
২১ জানুয়ারি ২০২৫
Coronavirus

‘কত ঘটনাই ঘটেছে, কাগজ থামেনি’

তবে  দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞতার নিরিখে একটা কথা  বলতে পারি যে আগ্রহ নিয়ে গ্রাহকদের  কাগজ পাওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকতে দেখেছি সেই আগ্রহটাই ফিকে করে দিয়েছে করোনা আতঙ্ক।

অক্লান্ত: সংবাদপত্র বিলি করছেন ফণীভূষণ। নিজস্ব চিত্র

অক্লান্ত: সংবাদপত্র বিলি করছেন ফণীভূষণ। নিজস্ব চিত্র

ফণিভূষণ নায়ক
শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২০ ০২:৪৮
Share: Save:

নিয়ম করে ভোর চারটের সময় বিছানা থেকে উঠে পড়ি। তারপর মুখ হাত ধুয়ে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়ি খবরের কাগজ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে। যাতে গ্রাহকদের হাতে সকাল সকাল পৌঁছে যায় কাগজ। শীত , গ্রীষ্ম বর্ষা রুটিনে কোনও পরিবর্তন হয় নি। গত ৬১টি বছর ধরে গ্রাকদের বাড়িতে আনন্দবাজার পত্রিকা পৌঁছে দেওয়ার কাজটা নিরলস ভাবে করে চলেছি।

তবে দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞতার নিরিখে একটা কথা বলতে পারি যে আগ্রহ নিয়ে গ্রাহকদের কাগজ পাওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকতে দেখেছি সেই আগ্রহটাই ফিকে করে দিয়েছে করোনা আতঙ্ক। কেমন যেন মন খারাপ হয়ে যায়। ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ, চিনের সঙ্গে ভারতের যুদ্ধ, ৭১’এর যুদ্ধ, ইন্দিরাগাঁধী হত্যা সহ কত বড় ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু কখনও কাগজ পড়া থেকে বিরত থাকেননি মানুষ।কিন্তু করোনা সংক্রমণের আতঙ্কে যা ঘটছে তা কখনও ভাবিনি। গ্রাহকদের একটা বড় অংশ কাগজ নেওয়া সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন সঙ্কটটা কাটুক, আবার দেবেন কাগজ। আর যাঁরা নিচ্ছেন তাঁদের অনেকেই বলছেন হাতে হাতে কাগজ নেব না বাইরে নামিয়ে দিয়ে যান।

বর্তমানে আমি ৭৫ বছরের বৃদ্ধ। যখন প্রথম খবরের কাগজ বিলি করা শুরু করি , আমি তখন বছর চোদ্দোর এক কিশোর। সেই সময় আনন্দবাজার পত্রিকার দাম ছিল দু আনা। যেটুকু মনে পড়ে তখনও আনন্দবাজারের দায়িত্বে ছিলেন অশোক সরকার। দুবরাজপুরে আনন্দবাজারের এজেন্ট তখন সত্যপ্রসন্ন আচার্য। পূর্বরেলের অণ্ডাল সাঁইথিয়া শাখার দুবরাজপুর স্টেশনে কাগজ আসতে ট্রেনে। তবে ধারাবাহিকভাবে এক দিন পরে কাগজ পেতেন পাঠকেরা। হেতমপুর নিরাময় যক্ষ্মা হাসপাতাল আবাসন ও দুবরাজপুর জনপদে মোট গ্রাহক ছিলেন ৬৫জন।

কিন্তু হাতে কাগজ পাওয়ার জন্য সকলে মুখিয়ে থাকতেন। এমনও হয়েছে ইন্দিরা গাঁধী হত্যার পর বেশ কয়েক দিন কাগজ দুবরাজপুরে পৌঁছয়নি। সাত দিনের কাগজ এক সঙ্গে পেয়েছেন পাঠকেরা। তার পরেও কেউ কোনও অনুযোগ করেননি। কিন্তু করোনা ত্রাস যেন সব কিছুই কেমন গুলিয়ে দিয়েছে।

প্রথম দুবরাজপুরে সরাসরি কাগজ এলেও যেহেতু এক দিন পরে কাগজ হাতে পেতেন গ্রাহকেরা তাই দিনের কাগজ দিনে পৌঁছাতে বোলপরে ও পানাগড়ে স্টেশনে কাগজ আসতে শুরু করেন। সেখান থেকে বাসে করে কাগজ নিয়ে এসে বিলি করতাম। তারপর ধীরে ধীরে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রায় দু’দশক ধরে ভোর বেলা কাগজ এলাকায় ঢোকানোর ব্যবস্থা করেছে কোম্পানি। কষ্ট কমেছে। গ্রাহকও অনেক বেড়েছে। আমি নিজে ঘুরে ২৯৫টি পরিবারে কাগজ দিতাম। কোম্পানি প্রচার করছে।

আমাদের জন্যও সুরক্ষার ব্যবস্থা হয়েছে। মুখ ঢেকে গ্লভস পরে কাগজ বিলি করছি। তবুও কয়েক সপ্তাহের মধ্যে বেশ কয়েক জন কাগজ নেওয়া সাময়িক ভাবে বন্ধ রেখেছেন। এমন অভিজ্ঞতার সাক্ষী এই প্রথম। তবে আশাবাদী দ্রুত মারণ রোগ নিরাময়ের স্থায়ী পদ্ধতি আবিষ্কৃত হবে। অচলাবস্থা কাটবে। পাঠকেরা ফের সকাল বেলায় ঘুম থেকে উঠে সংবাদপত্রের জন্য মুখিয়ে থাকবেন।

লেখক সংবাদপত্রের হকার

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy