Advertisement
১৮ জানুয়ারি ২০২৫
Coronavirus

ঝঞ্ঝাট ছাড়া রেশন বণ্টন

বিশেষ প্যাকেজের এক মাসের রেশন এক সঙ্গে দেওয়া হচ্ছে। এর আগে পুরুলিয়ায় রেশন নিয়ে অভিযোগ উঠেছে নানা রকমে।

প্রাপ্য: রেশনের চাল নিয়ে বাড়ির পথে মহিলারা। বান্দোয়ান থানার কড়পা গ্রামের কাছে। ছবি: রথীন্দ্রনাথ মাহাতো

প্রাপ্য: রেশনের চাল নিয়ে বাড়ির পথে মহিলারা। বান্দোয়ান থানার কড়পা গ্রামের কাছে। ছবি: রথীন্দ্রনাথ মাহাতো

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০২০ ০১:০৯
Share: Save:

রেশনে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের বিশেষ প্যাকেজের খাদ্যসামগ্রী বিলি শুরু হয়েছে শুক্রবার থেকে। প্রথম দু’দিন মোটের উপরে নির্বিঘ্নেই হল সেই কাজ। শুধু পুরুলিয়ার পুঞ্চার কৈড়া গ্রামের ডিলারের বিরুদ্ধে কেরোসিনের দাম বেশি নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। খাদ্য দফতর জানিয়েছে, লিখিত অভিযোগ জমা পড়েনি। তবে ওই ডিলারকে সতর্ক করা হয়েছে।

বিশেষ প্যাকেজের এক মাসের রেশন এক সঙ্গে দেওয়া হচ্ছে। এর আগে পুরুলিয়ায় রেশন নিয়ে অভিযোগ উঠেছে নানা রকমে। এ বার আগে থেকে বাড়তি সতর্ক ছিল প্রশাসন। বিভিন্ন ব্লকে গিয়ে রেশন ডিলারদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন জেলাশাসক রাহুল মজুমদার। ‘মুচলেকা’ নেওয়া হয়েছে ডিলারদের থেকে। নতুন প্যাকেজে কার কতটা রেশন প্রাপ্য, বাংলায় লিখে সমস্ত রেশন দোকানের বাইরে টাঙানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুঞ্চার ‘কমিউনিটি রেডিয়ো’-র মাধ্যমে প্রাপ্য রেশন বিষয়ে মানুষজনকে ওয়াকিবহাল করেছেন জেলাশাসক নিজে। শনিবার সাতসকালেই আড়শা হয়ে তিনি পৌঁছে যান অযোধ্যাপাহাড়ে। কোথাও দাঁড়িয়ে চালের মান পরীক্ষা করেছেন। কোথাও দল বেঁধে বাড়ি ফেরার পথে গ্রাহকদের থামিয়ে দেখেছেন প্রাপ্য চাল আর আটা তাঁরা পেয়েছেন কি না। কোথাও লাইনে দাঁড়ানো গ্রাহকদের থেকে কার্ড নিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন কার, কতটা প্রাপ্য।

এপ্রিল শেষ হয়ে গেলেও খাদ্য সুরক্ষা আইনের আওতায় থাকা কেন্দ্রীয় সরকারের বিশেষ প্যাকেজের চাল গ্রাহকদের দেওয়া হচ্ছে না— এমন অভিযোগে সরব হয়েছিল বিজেপি। আরকেএসওয়াই ২ শ্রেণিভুক্ত গ্রাহকেদের বিনা পয়সায় রেশন দেওয়া ও খাদ্যসামগ্রীর পরিমাণ বাড়ানোর দাবি তুলেছিল জেলা কংগ্রেস। শনিবার বিজেপির জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত ঠিকঠাকই চলছে।’’ কংগ্রেসের জেলা সভাপতি নেপাল মাহাতো বলেন, ‘‘রেশনে বিলিবণ্টন এখনও পর্যন্ত সুষ্ঠু ভাবেই চলছে।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক প্রদীপ রায় বলেন, ‘‘আমাদের কর্মীরা সর্বত্র নজর রাখছেন। এখনও পর্যন্ত কোনও অভিযোগ নেই।’’

শুক্রবার পুঞ্চা ব্লকের কৈড়া গ্রামে এক রেশন ডিলারের বিরুদ্ধে কেরোসিনের দাম বেশি নেওয়ার অভিযোগ তোলেন কিছু গ্রাহক। খবর পেয়ে পুলিশ ও যুগ্ম বিডিও (পুঞ্চা) বৈদ্যনাথ হেমব্রম এলাকায় যান। তার পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। মহকুমা খাদ্য নিয়ামক (মানবাজার) অলোক সোরেন জানান, খাদ্য দফতরের কাছে কোনও অভিযোগ জমা পড়েনি। তবে ওই ডিলারকে সতর্ক করা হয়েছে। জেলার অনেক জায়গাতেই গ্রাহকদের দীর্ঘ লাইন থাকায় রাত পর্যন্ত খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হয়েছে বলে খাদ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে।

বান্দোয়ানের কাঁটাগোড়া গ্রামের বৃদ্ধ দম্পতি কার্তিক সিংহ ও যামিনী সিংহ শনিবার ভোরে জঙ্গলপথ দিয়ে পচাপানি গ্রামে রেশন দোকানে এসেছিলেন। মেয়েকে নিয়ে তিন জনের পরিবার। তাঁরা বলেন, ‘‘দিনমজুরি করে সংসার চলে। তবে এখন বয়স হয়েছে। তেমন কাজ করতে পারি না। কাল শুনেছিলাম, এ বার বেশি চাল পাব। তাই বস্তা এনেছিলাম।’’ ঝালদা ১ ব্লকের লয়াডি পঞ্চায়েতের মহুলডি থেকে রেশন তুলতে ডড়পা গ্রামে এসেছিলেন বৃদ্ধা বিনতা মাহাতো। বললেন, ‘‘২৬ কেজি চাল পেয়েছি। দু’জনের সংসার। নদী পার হয়ে একলা নিয়ে যেতে পারব না। পরিচিত এক জনের বাড়িতে রেখে গেলাম। কাল নিয়ে যাব।’’

জেলাশাসক বলেন, ‘‘পুরুলিয়ার ভৌগোলিক অবস্থাটাই যেখানে চ্যালেঞ্জ, সেখানে মানুষের কাছে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়াটাও বড় কাজ। রেশন ডিলার থেকে প্রশাসনের লোকজন, পুলিশ— সকলেই কাজ করছেন। মানুষ হাসিমুখে চালের বস্তা মাথায় করে নিয়ে যাচ্ছেন, কেউ দল বেঁধে খাদ্যসামগ্রী নিয়ে ফিরছেন— এমন নানা ছবি চোখে পড়েছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy