ব্যস্ত: চলছে নির্মাণকাজ। নিজস্ব চিত্র
লাভপুরের ষষ্ঠীনগরের বিমানবিহারী পাল, নানুরের খুজুটিপাড়ার সুনীল মণ্ডলদের বাড়ি তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল লকডাউন ঘোষণার আগে। লকডাউনের জেরে পুরোপুরি কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ইমারতি সামগ্রীর অভাবে ছাড়ের পরেও কাজ শুরু করতে পারেননি। ২-৩ দিন আগে ফের কাজ শুরু হয়েছে। সুনীলবাবুরা জানান, বালি, পাথর তোলা থাকলেও লোহার রড আর সিমেন্ট মিলছিল না। রাজমিস্ত্রি এবং রেজারাও কাজ করতে আসছিলেন না। এখন সবাই বুঝতে পারছে এভাবে বেশিদিন চলবে না। তাই স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে কাজ।
লকডাউনের জেরে কারও আটকে গিয়েছিল বাড়ির গাঁথনির কাজ, কারও ছাদ ঢালাই। কয়েকদিন আগে বেশ কিছু ক্ষেত্রের পাশাপাশি নির্মাণ শিল্পে ছাড় ঘোষণা হলেও বালি, পাথর, ইট , সিমেন্ট , লোহার রড-সহ অন্যান্য ইমারতি সামগ্রীর অভাবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কাজে হাত দিতে পারেননি বাড়ির মালিকেরা। এর ফলে নির্মাণ কাজের সঙ্গে জড়িত রাজমিস্ত্রি এবং রেজাদের হাত গুটিয়ে বসে থাকতে হয়েছিল। তাঁদের জীবন জীবিকা বিপন্ন হয়ে পড়েছিল। ধার এবং ত্রাণের উপরে নির্ভর করে দিন কাটছিল তাঁদের। দিন কয়েক ধরে পর্যাপ্ত পরিমাণে না হলেও ইমারতি সামগ্রীর জোগান স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। তাই বহু জায়গায় ছোটখাটো নির্মাণ কাজও শুরু হয়েছে। সেইসব কাজের হাত ধরেই ছন্দে ফিরছে গ্রাম। কাজ ফিরে পেয়ে হাসি ফুটছে রাজমিস্ত্রী এবং রেজাদের মুখে।
যদিও বড় নির্মাণ কাজ এখনও চালু হয়নি। নানুরের নিমড়া গ্রামের সাদআলি সেখ , পরোটার শিবনাথ দাসরা বলেন, ‘‘রাজমিস্ত্রির কাজ করেই আমাদের সংসার চলে। লকডাউনের জন্য কাজ বন্ধ থাকায় চরম সমস্যায় পড়েছিলাম। রেশন এবং ত্রাণের খাদ্য সামগ্রীর উপরে নির্ভর করে দিন চলছিল। ২-৩ দিন হল কাজ শুরু করেছি।’’
ময়ূরেশ্বরের লোকপাড়ার পীযূষ মুখোপাধ্যায়ের ৭০০ বর্গফুট বাড়ির ছাদ সেন্টারিং হয়ে পড়েছিল লকডাউনের আগে থেকে। কিন্তু বালি এবং পাথর অভাবে ঢালাই করতে পারছিলেন না। শনিবার তাঁর বাড়ির ছাদ ঢালাই হয়েছে। তিনি জানান , লোহার রড, সিমেন্ট সহ অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রী থাকলেও বালি-পাথর ছিল না। নানুরের জালচন্ডী গ্রামের রামপ্রসাদ দাস, ময়ূরেশ্বরের কোটাসুরের শ্যামল বাগদিরাও বলেন, ‘‘রাজমিস্ত্রীর জোগাড়ের কাজ করে আমরা দৈনিক ২৫০ টাকা করে বেতন পাই। তাতে জোড়াতালি দিয়ে সংসার চলে। তাই কিছুই জামাতে পারি না। কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় খুব দুশ্চিন্তায় পড়েছিলাম।’’ কাজ শুরু হওয়ায় খুশি ময়ূরেশ্বরের কাশীপুরের হৃদয় দাস, আমোদপুরের শাহজাহান শেখরাও। তাঁরা ঠিকায় বাড়ি তৈরি করেন। নির্মাণ সামগ্রী মালিক দেন। তাঁরা শুধু বর্গফুট হিসেবে ঠিকায় কাজ করেন। তারা বলেন, ‘‘লকডাউনের জেরে মাঝ পথে কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় খুব সমস্যায় পড়েছিলাম। নিজেদের সঙ্কট তো বটেই, যেসব রাজমিস্ত্রী এবং রেজাদের নিয়ে কাজ করেছিলাম তাঁদের টাকা দিতে পারছিলাম না। কাজ শুরু হয়েছে অল্প অল্প।
তবে নির্মাণসামগ্রীর অভাবে এখনও বেশকিছু কাজ বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে। লকডাউনের আগে থেকে কাজ বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে ময়ূরেশ্বরের লোকপাড়া কলেজের প্রায় ৩২০০ বর্গফুট ভবন। ওই গ্রামেরই সুভাষ কোলেরও প্রায় ২০০০ বর্গফুট ছাদ সেন্টারিং হয়ে পড়ে আছে। সুভাষবাবু এবং লোকপাড়া কলেজের ওই বাড়ি নির্মাণের দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারি সংস্থার কর্ণধার করুণাসিন্ধু পাল বলেন, ‘‘মিস্ত্রি মিললেও এখনও নির্মাণ সামগ্রীর সরবরাহে ঘাটতি আছে। বিশেষত পাথরের অভাবে ঢালাই করা যাচ্ছে না।’’ ইমারতি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এবার ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy