বোলপুরের হোটেলে টানানো বিজ্ঞপ্তি। নিজস্ব চিত্র।
প্রতিষেধকের জোড়া ডোজ়ের শংসাপত্র বা কোভিড নেগেটিভ রিপোর্ট, এই দু’টির যে কোনও একটি সঙ্গে না থাকলে এ বার জেলার কোনও হোটেল জায়গা মিলবে না। করোনা সংক্রমণ রুখতে দার্জিলিং, দিঘার মতোই সিদ্ধান্ত নিল বীরভূম জেলা প্রশাসন। বৃহস্পতিবার জেলাশাসক এই মর্মে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন। সেখানে বলা হয়েছে, জেলার যে কোনও হোটেল-রিসর্টে বাইরে থেকে কেউ এসে থাকতে চাইলে তাঁকে অবশ্যই কোভিড ভ্যাকসিনের জোড়া ডোজ় নেওয়ার প্রমাণপত্র দেখাতে হবে নতুবা আরটিপিসিআর টেস্টের নেগেটিভ রিপোর্ট দেখাতে হবে। গোটা জেলার প্রতিটি হোটেল ও রিসর্টকে এই আদেশ মেনে চলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ঘটনা হল, করোনার সংক্রমণ সামান্য নিয়ন্ত্রণে আসতেই ও করোনাজনিত বিধিনিষেধ সামান্য শিথিল হতেই প্রতিটি পর্যটন কেন্দ্রে মানুষের ঢল নেমেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কোভিড বিধির তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। মুখে মাস্ক পর্যন্ত নেই অনেকের। সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ থেকে পুরোপুরি নিষ্কৃতি মেলেনি। সঙ্গে রয়েছে কোভিডের তৃতীয় চোখ রাঙানি রয়েছে। সেটা নিয়ে উদ্বিগ্ন প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতর।
দার্জিলিং, দিঘায় সংক্রমণ রুখতে একই ব্যবস্থা নিয়েছে সেখানকার প্রশাসন। তারাপীঠ-সহ পঞ্চপীঠ, শান্তিনিকেতন, বক্রেশ্বর নিয়ে পর্যটন মানচিত্রে বীরভূমও খুব গুরুত্বপূর্ণ। ত্রুমশ ভিড় বাড়ছিল বীরভূমের বিভিন্ন টুরিস্ট স্পটেও। তাই আর ঝুঁকি নিতে চায়নি জেলা প্রশাসন। এর আগে তারাপীঠ, শান্তিনিকেতনে কিয়স্ক বসিয়ে পর্যটকদের র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষার বন্দোবস্ত করা হয়েছিল। এ বার আরও কঠোর হল প্রশাসন। প্রশাসনের সমস্ত স্তর হয়ে জেলাশাসকের নির্দেশিকা ইতিমধ্যেই পৌঁছে গিয়েছে জেলার হোটেল ও রিসর্টগুলিতে।
প্রশাসনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন তারাপীঠের হোটেল ব্যবসায়ী তথা জেলা হোটেল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুনীল কুমার গিরি। তাঁর কথায়, ‘‘সংক্রমণ রুখতে এটি প্রশাসনের অত্যন্ত কার্যকর পদক্ষেপ। আমরা সংগঠনের তরফে জেলার প্রতিটি হোটেল-রিসর্টে সেই নির্দেশিকা পাঠাচ্ছি। সকলকেই বলা হয়েছে, নির্দেশ মেনে চলতে।’’ সহমত সিউড়ির হোটেল ব্যবসায়ী সঞ্জয় অধিকারী। তিনি বলছেন, ‘‘সকলেরই উচিত বৈতিক দায়িত্ব নিয়ে প্রশাসনের নির্দেশ মেনে চলা।’’
যদিও প্রশাসনের নয়া নির্দেশে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন জেলার অনেক হোটেল ও লজ মালিকই। তাঁদের আশঙ্কা, পর্যটন শিল্প যা-ও একটু চাঙ্গা হচ্ছিল, আবার না তাতে মন্দা আসে! শান্তিনিকেতন হোটেল মালিক সমিতির সম্পাদক প্রসেনজিৎ চৌধুরীর মতে, এখনও বহু মানুষ দ্বিতীয় ডোজ় পাননি। অন্য দিকে, টেস্ট করানোর হ্যাপাও আছে। বেসরকতারি ভাবে টেস্ট করাতে হলে তার খরচও দিতে হবে। সবে পর্যটকের আসা শুরু হয়েছিল। এই নির্দেশের পরে সেই সংখ্যা কমবে বলেই তাঁর দাবি।
জেলাশাসক বিধান রায় যদিও স্পষ্ট বলেন, ‘‘অর্থনীতিকে সচল রাখতেই বিধিনিষেধ শিথিল হয়েছে। তার পর থেকে ভিড় বাড়ছে পর্যটন স্থলে। কিন্তু আনন্দ করতে গিয়ে যাতে সংক্রমণ না ছাড়ায়, তাই এই সিদ্ধান্ত। এতে যিনি জেলায় আসছেন, তিনি যেমন সুরক্ষিত থাকবেন, জেলার মানুষও সুরক্ষিত থাকবেন।’’
এ কথা মানছেন কলকাতা থেকে শান্তিনিকেতনে বেড়াতে আসা ঐন্দ্রিলা মুখোপাধ্যায়। তিনি বললেন, ‘‘আগেই শুনেছি এখানে এলে টেস্ট করাতে হবে। সেই প্রস্তুতি নিয়েই এসেছি। আমার মতে, প্রশাসনের নির্দেশ মানলে সকলেই সুরক্ষিত থাকবেন।’’ তারাপাঠে পুজো দিতে আসা হাওড়ার রত্নাকর মজুমদার বলছেন, ‘‘কোভিড নেগেটিভ রিপোর্ট বা দ্বিতীয় ডোজ়ের প্রমাণপত্র না-নিয়ে কেউ এখানে পৌঁছে গেলে মন খারাপ হতে পারে। তবে আমি বলব, প্রশাসন ঠিক কাজ করেছে।’’ কিন্তু, হঠাৎই এমন নির্দেশ আসায় সাময়িক ভাবে কিছু অসুবিধার সৃষ্টি হবে বলে মনে করেছেন সুনীল গিরি। তিনি বলেন, ‘‘প্রশাসনের নির্দেশ না-জেনে নথিপত্র ছাড়াই যদি কেউ তারাপীঠে পৌঁছে গিয়ে থাকেন, তাঁর সঙ্গে কী করণীয় সেটাই বুঝতে পারছি না। আরটিপিআর টেস্ট সময় সাপেক্ষ। র্যাপিড টেস্ট রিপোর্ট গ্রহণযোগ্য হলে ভাল হয়। নথির জন্য যেন হেনস্থার শিকার না হন পর্যটক, তা-ও দেখতে হবে।’’ যদিও আরটিপিসিআর ছাড়া র্যাপিড টেস্ট রিপোর্ট গ্রাহ্য নয় বলেই জানিয়েছেন জেলাশাসক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy