বান্দোয়ানের পথে। ছবি: রথীন্দ্রনাথ মাহাতো
‘লকডাউন’-এ কাজ হারিয়েছিলেন। তার পরে নিজেই খুঁজে নিয়েছেন রোজগারের দিশা। পুরুলিয়ার বান্দোয়ান ব্লক সদরের পাড়ায় পাড়ায় সাইকেল নিয়ে ঘুরে ইডলি বিক্রি করছেন লতাপড়া গ্রামের বছর ছত্রিশের শীতল হালদার। সঙ্গে পৌঁছে দিচ্ছেন সচেতনতার বার্তা। তাঁর কথায়, ‘‘প্রথমে ভেঙে পড়েছিলাম। কিন্তু ঘুরে দাঁড়ানোর পরে, এখন আগের থেকে আয় কিছু বেশি হচ্ছে।’’
শীতলবাবু জানান, বান্দোয়ানের একটি মশলার দোকানে গত কয়েকবছর ধরে কাজ করছিলেন তিনি। প্রতিদিন ১৩০ টাকা করে পেতেন। করোনা-পরিস্থিতিতে ‘লকডাউন’ শুরু হওয়ার কিছু দিন পরেই কাজ চলে যায়। ঘরে রয়েছেন স্ত্রী আর ছেলে। ছেলের বয়স সবে এক বছর। টানা দু’মাস ঘরে বসে চিন্তাভাবনা করেই কেটে গিয়েছিল শীতলবাবুর। একটু একটু করে টান পড়তে শুরু করে সঞ্চয়ে। কিন্তু পরিস্থিতির হেরফের হয় না। তার পরেই তিনি স্থির করেন, নিজেই কিছু একটা করবেন।
শীতলবাবুর স্ত্রী নমিতাদেবীর বাপের বাড়ি ঝাড়খণ্ডে। তিনি জানান, বিয়ের আগে এক সময়ে ইডলি বানানো শিখেছিলেন। দু’জনে মিলে স্থির করেন, ইডলির ব্যবসা করবেন। এখন কাকভোরে উঠে চাল গুঁড়ো করতে বসে পড়েন ওই দম্পতি। ইডলি টিফিন ক্যারিয়ারে ভরে সাইকেল নিয়ে বেরোন শীতলবাবু। সেই সাইকেলের পিছনে লেখা, ‘দয়া করে মাস্ক পরে দোকানে আসুন’, ‘দূরত্ব বজায় রাখুন’, ‘দয়া করে ধার চাইবেন না’। ‘মাস্ক’ থাকে শীতলবাবুর মুখেও।
জঙ্গল আর পাহাড়ি পথে লতাপড়া থেকে প্রায় ছ’কিলোমিটার দূরে ব্লক সদর বান্দোয়ান। গত এক মাস ধরে রোজ সকালে বান্দোয়ানের পাড়ায় পাড়ায় ‘মাস্ক’-এর আড়াল থেকে হাঁক দিতে দিতে সাইকেল নিয়ে ঘুরছেন শীতলবাবু। বাড়ি ফিরতে ফিরতে দুপুর গড়িয়ে যায়। তিনি জানান, সরঞ্জাম কিনতে খরচ হয়েছে হাজার তিনেক টাকা। প্রথম দিন চারশো টাকার ইডলি তৈরি করেছিলেন। বিক্রি করে লাভ হয়েছিল দু’শো টাকা। এখন ভালই চলছে ব্যবসা। ক্রেতাদের বেশি কাছে ঘেঁষতে দেন না তিনি।
তিনি বলেন, ‘‘আমার কোনও কাজে যাতে সংক্রমণ না ছড়ায়, সে জন্য সব সময় সতর্ক থাকি। আবার এই পরিস্থিতিতে পেটের দায়ে বেরিয়ে যাতে সংক্রমণ বাড়িতে নিয়ে না যাই, সেটাও খেয়াল রাখতে হয়।’’
বান্দোয়ানের বাসিন্দা বিশ্বনাথ রজক বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য-বিধি মেনেই শীতলবাবু ইডলি বিক্রি করেন। এখন সংক্রমণের ভয়ে বিশেষ বাইরে বেরোচ্ছি না। ঘরে বসেই ভাল খাবার পেয়ে সুবিধা হচ্ছে।’’
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy