Advertisement
২৭ ডিসেম্বর ২০২৪
coronavirus

বুভুক্ষুদের খাদ্য দিয়ে সাহায্য স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার

সকালের টিফিন-সহ দু’বেলা রান্না করে নিজেরাই খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন এখন অসহায় মানুষগুলোর কাছে।

খাবার বিলি। নিজস্ব চিত্র

খাবার বিলি। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০২০ ০৩:৩৫
Share: Save:

চেনা শহর বদলে গিয়েছে সরকারের জরুরি অবস্থা জারিতে। করোনাভাইরাসের আতঙ্কে লকডাউন গোটা দেশজুড়ে। রাস্তার ধারে বন্ধ দোকানের সামনে মাথা ঝুঁকিয়ে বসেছিলেন রাজনগরের বেনিগঞ্জের কালীচরণ হেমব্রম আর রামপুরহাটের আয়াস গ্রামের শেখ হোসেন। বয়স হয়েছে, তবু পেটের তাগিদেই পথে নামা। ভিক্ষা করতে বেরিয়ে আর বাড়ি ফেরা হয়নি কালীচরণদের। আটকে পড়েছিলেন সাঁইথিয়া স্টেশনে। দোকানপাট সব বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনাহারেই কাটে প্রথম কয়েকদিন। বিষয়টি নজরে আসে সাঁইথিয়ার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার। নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে চাঁদা তুলে ওই ভিক্ষাজীবীদের দু’বেলা রান্না করে খাওয়ানোর দায়িত্ব নিয়েছেন সংস্থার সদস্যরা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিদিন বাসে-ট্রেনে ভিক্ষা করতে গিয়ে দূর-দূরান্তের বহু ভিক্ষাজীবী সাঁইথিয়া শহরে ভিড় করেন। অনেকেই সেখানে কিছুক্ষণ জিরিয়ে নিয়ে যে যাঁর ঠিকানায় ফিরে যান। কেউ কেউ আবার স্টেশনে বা স্টেশনের ধারেকাছে থেকে যান টানা কয়েকদিন। আবার গৃহহীন স্থানীয় কিছু ভিক্ষাজীবীর আশ্রয়স্থলও ওই স্টেশন চত্বর। সব মিলিয়ে তাঁদের সংখ্যা ৩৫/৪০ জন। লকডাউন ঘোষণা হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েন তাঁরা। যাঁরা বাইরে থেকে এসেছিলেন তাঁরা ফিরতে পারেননি। দোকানপাট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভিক্ষা করে খাবার যোগাড় করার সুযোগও নেই। সেইজন্য অভুক্ত অবস্থায় থাকতে হয় তাঁদের। সেই কথা জানতে পেরেই স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্য শম্ভুনাথ চৌধুরী, কৌশিক ভট্টাচার্য, রানা বৈদ্য, চন্দন কর্মকাররা তাঁদের পাশে দাঁড়ান।

সকালের টিফিন-সহ দু’বেলা রান্না করে নিজেরাই খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন এখন অসহায় মানুষগুলোর কাছে। তাঁদের এহেন আন্তরিকতায় আপ্লুত ওই ভিক্ষাজীবীরা। মুর্শিদাবাদের ভগবানগোলার শেখ শাকিবুদ্দিন, বর্ধমানের ভাতারের সন্তোষপুরের হান্নান মণ্ডলদের মতো ভিক্ষা করে যাঁরা ক্ষুধা নিবৃত্তি করেন তাঁদের কথায়, ‘‘হঠাৎ যানবাহন, দোকানপাট সব বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দিশাহারা হয়ে গিয়েছিলাম। রাস্তায় সোক নেই, ভিক্ষাও নেই। ফলে খাবারও নেই। শুধু জল খেয়ে থাকা যায় না। ওঁরা পাশে এসে না দাঁড়ালে অনাহারে মরতে হত।’’

একই প্রতিক্রিয়া সাঁইথিয়ারই আবেদিন শেখ, ফিরোজা বেওয়াদের। তাঁরাও বলেন, ‘‘ভিক্ষা করেই দিন চলে আমাদের। দোকানপাট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভিক্ষাও বন্ধ হয়ে যায়। ওঁরা খাবার না দিলে আমাদেরও অনাহারে থাকতে হত।’’ শুধু ভিক্ষাজীবীদেরই নয়, পথ কুকুরদেরও খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেছে ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। সংস্থার সদস্যরা বলেন, ‘‘দোকানপাট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রাস্তার কুকুরগুলো সব থেকে বেশি সমস্যায় পড়ে। মানুষ তবু খিদে পেলে বলতে পারে, কিন্তু কুকুরগুলো করুণ মুখ করে চেয়ে থাকে। তাই ওদের জন্যও আমরা সাধ্যমতো খাবারের ব্যবস্থা করেছি।’’

তাঁরা জানান, এই উদ্যোগে অনেকেই স্বেচ্ছায় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। লকডাউন আরও দীর্ঘায়িত হবে কিনা জানা নেই। কিন্তু যতদিন পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হয় ততদিন তাঁরা পথের ধারে থাকা বুভুক্ষু মানুষ ও কুকুরদের সাথী থাকবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।

অন্য বিষয়গুলি:

NGO Coornavirus Novel Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy