হাজির: আড়শায় জেলাশাসক রাহুল মজুমদার ও অতিরিক্ত জেলাশাসক আকাঙ্ক্ষা ভাস্কর। নিজস্ব চিত্র
এক দম্পতি ও তাঁদের শিশুকন্যা-সহ এক দিনে মোট ৪৩ জন করোনা-আক্রান্তের সন্ধান মিলল পুরুলিয়ায়। আক্রান্তেরা প্রায় সকলেই পরিযায়ী শ্রমিক। দিল্লি, মহারাষ্ট্র ও গুজরাত থেকে জেলায় ফেরার পরে, গত ২৩-২৫ মে তাঁদের লালারসের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। শুক্রবার সে রিপোর্ট হাতে পায় জেলা প্রশাসন। আক্রান্তদের কারও শরীরে কোনও উপসর্গ ছিল না। এর আগে এক দিনে এত বেশি সংখ্যক করোনা-রোগীর সন্ধান জেলায় মেলেনি বলে জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর। আক্রান্তদের মধ্যে ২০ জন আড়শা ব্লকের বাসিন্দা।
জেলাশাসক রাহুল মজুমদার জানান, এ দিন ৪৩ জনের শরীরে করোনা-সংক্রমণ হয়েছে বলে রিপোর্ট এসেছে। তাঁরা বিভিন্ন ব্লকের বাসিন্দা। তাঁদের বাড়িকে ঘিরে ‘কনটেনমেন্ট জ়োন’ ও ‘বাফার জ়োন’ তৈরির কাজ চলছে। গত ২৭ মে জেলায় প্রথম করোনা-আক্রান্তের হদিস মেলে। ২৭ মে থেকে ২ জুন পর্যন্ত জেলায় করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৮। শুক্রবার সেই সংখ্যা এক লাফে বেড়ে হল ৬১। প্রশাসন সূত্রে খবর, এ দিন যাঁদের শরীরে করোনা-সংক্রমণ ধরা পড়েছে, তাঁদের মধ্যে এক দম্পতি ও তাঁদের এক বছরের শিশুকন্যা রয়েছে। তাঁরা দিল্লি থেকে ফিরেছিলেন।
এক দিনে জেলায় ৪৩ জনের সংক্রমণের খবর পাওয়ার পরেই এ দিন বৈঠকে বসে জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য বিষয়ক স্থায়ী সমিতি। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) অনিলকুমার দত্ত, সমিতির কর্মাধ্যক্ষ সৌমেন বেলথরিয়া, জেলার উপমুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা বৈঠকে হাজির ছিলেন। জেলা পরিষদের সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এক দিনে জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা বেশ কিছুটা বেড়েছে। আক্রা্ন্তদের মধ্যে এক শিশুকন্যা ও তার বাবা-মা রয়েছেন। নতুন নতুন এলাকা থেকে সংক্রমণের খবর এসেছে। অনেকেরই শরীরে রোগের কোনও উপসর্গ ছিল না। কী ভাবে পরিস্থিতির মোকাবিলা করা যায়, সে বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।”
সৌমেনবাবু বলেন, “এক দিনে এত সংখ্যক ‘পজ়িটিভ’ রিপোর্ট আসায় স্বাভাবিক ভাবেই কিছু মানুষের মধ্যে ভীতির সঞ্চার হয়েছে। সব রকমের সতর্কতা মেনে চলার কথা বারবার বলা হচ্ছে।”
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের, যে সময়ে ওই পরিযায়ী শ্রমিকেরা জেলায় ফিরেছিলেন, সে সময়ে ভিন্ রাজ্য থেকে ফেরা সকলেরই লালারসের নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছিল। ২৩-২৫ জেলায় মোট ১,২৩৫ জনের লালারসের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক জানান, ওই সময়ে নমুনা সংগ্রহ বাড়ানো হয়েছিল। সে রিপোর্টই এখন আসছে। তাই ভয়ের কোনও কারণ নেই।
সিএমওএইচ জানান, আগেও যাঁদের শরীরে সংক্রমণ ধরা পড়েছিল, তাঁদের মধ্যেও কোনও উপসর্গ দেখা যায়নি। এ দিন যাঁদের করোনা-রিপোর্ট পজ়িটিভ এসেছে, তাঁরা সকলেই ‘হোম কোয়রান্টিন’-এ রয়েছেন। কারও কারও ১৪ দিন ‘কোয়রান্টিন’-এর মেয়াদ পেরিয়ে গিয়েছে। কারও আবার অল্প কয়েকদিন বাকি। আক্রান্তদের সংস্পর্শে যাঁরা এসেছেন, তাঁদেরও ‘হোম কোয়রান্টিন’-এ থাকতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, “আক্রান্তদের বাড়ির প্রত্যেক সদস্যের শারীরিক পরীক্ষা শুরু হয়েছে। তাঁরা এখন নজরদারির আওতায় থাকবেন।”
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন যে ৪৩ জনের মধ্যে করোনা-সংক্রমণ ধরা পড়েছে, তাঁদের মধ্যে ২০ জনের বাড়ি আড়শা ব্লকের পাঁচটি পঞ্চায়েতের নয়টি গ্রামে। এ দিন বিকেলে আক্রান্তদের এলাকায় গিয়েছিলেন জেলাশাসক, অতিরিক্ত জেলাশাসক আকাঙ্ক্ষা ভাস্কর, মহকুমাশাসক (পুরুলিয়া) প্রসেনজিৎ চক্রবর্তী। সোখানে ‘কনটেনমেন্ট’ ও ‘বাফার জ়োন’ তৈরির কাজ সরেজমিনে দেখেন তাঁরা। এই অবস্থায় কী ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, তা আক্রান্তদের গ্রামের বাসিন্দাদের এবং আড়শা ব্লক প্রশাসন ও পুলিশকে বুঝিয়ে দেন জেলা প্রশাসনের আধিকারিকেরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy