Advertisement
২৭ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus

সাতসকালে হুড়োহুড়ি করে বাজার

সোমবার বিকেল থেকে রাজ্যের আরও নানা শহরের সঙ্গে পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ার মোট চারটি শহরে লকডাউন ঘোষণা হয়েছে। তার আগে, এ দিন সকাল থেকেই বিভিন্ন এলাকায় চোখে পড়েছে শশব্যস্ততার ছবি।

ভিড়: বাঁকুড়া শহরের নতুনচটির কিসানমান্ডির স্টলে খাবার জিনিসপত্র কেনার হুটোপুটি। ছবি: অভিজিৎ সিংহ

ভিড়: বাঁকুড়া শহরের নতুনচটির কিসানমান্ডির স্টলে খাবার জিনিসপত্র কেনার হুটোপুটি। ছবি: অভিজিৎ সিংহ

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০২০ ০২:১২
Share: Save:

অন্য দিন সকাল ৮টায় সবে ক্রেতার আনাগোনা শুরু হয় বিষ্ণুপুরের চকবাজারে। সোমবার সেই সময়েই দেখা গেল, অধিকাংশ বিক্রেতা পাট গুটিয়ে নিচ্ছেন। রবিবার ছিল জনতা কার্ফু। অধিকাংশ দোকানপাট খোলেনি। সোমবার বিকেল থেকে রাজ্যের আরও নানা শহরের সঙ্গে পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ার মোট চারটি শহরে লকডাউন ঘোষণা হয়েছে। তার আগে, এ দিন সকাল থেকেই বিভিন্ন এলাকায় চোখে পড়েছে শশব্যস্ততার ছবি। পুরুলিয়ার জেলাশাসক রাহুল মজুমদার বলেন, ‘‘আমরা মানুষের কাছে আবেদন করছি, একই সময়ে সবাই মিলে দোকানে হুমড়ি খেয়ে পড়বেন না। ও ভাবে ভিড় হলে সমস্যা বাড়বে। লকডাউনেও আনাজ, মুদি-সহ বিভিন্ন পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকবে।’’ এ দিন জেলার অনেক বাজারেই জিনিসপত্রের দাম কম-বেশি চড়তে দেখা গিয়েছে।

পুরুলিয়া শহর

পুরুলিয়া জেলার মধ্যে শুধু সদর শহরে লকডাউন ঘোষণা হয়েছে। এ দিন সকালে শহরের বাজারে বিভিন্ন জিনিসপত্রের দাম ছিল স্বাভাবিক। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাজারে নেমেছিল ইডি। জেলাশাসক জানান, কোথাও যাতে এই পরিস্থিতিতে কালোবাজারি শুরু না হয়, সে জন্য সর্বত্র নজর রেখেছে জেলা দুর্নীতি দমন শাখা। পুরুলিয়া শহরে সোমবার শুধু আলুর দাম ছিল কিছুটা বেশি। অন্য দিন ১৮ টাকা কেজিতে বিক্রি হত আলু। এ দিন ২০ থেকে ২২টাকা কিলোতেও বিক্রি হয়েছে কোথাও কোথাও। প্রশাসনের একটি সূত্রের দাবি, বিভিন্ন স্কুল থেকে বিলি করার জন্য আলু পৌঁছে দিতে হয়েছে। তাই কিছুটা দামের হেরফের হয়েছে এ দিন। তবে শহরের বাসিন্দাদের একাংশ অভিযোগ করেছেন, বেলার দিকে কোনও কোনও বিক্রেতা অল্প কিছু বেশি দাম নিয়েছেন।

আদ্রা ও রঘুনাথপুর

আদ্রা ও রঘুনাথপুর শহরের লকডাউন ঘোষণা হয়নি। আশপাশের বিভিন্ন গ্রাম থেকে চাষিরা আনাজ নিয়ে এসে এই সমস্ত শহরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসেন। এ দিন আনাজের দাম বিশেষ চড়েনি। তবে বিভিন্ন মুদির দোকানে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। আদ্রার বড়বাজারে একটি আটার মিলে ক্রেতাদের লাইন পড়েছিল। পরিস্থিতি সামাল দিতে সবার হাতে ধরানো হয়েছিল ‘টোকেন’।

মানবাজার

এ দিন মানবাজারেও জিনিসপত্রের দাম কিছুটা চড়া ছিল বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। তাঁদের দাবি, কোথাও কোথাও আলু বিক্রি হয়েছে ২০ থেকে ২২ টাকা কেজিতে। ফলের দামও ছিল চড়া।

বাঁকুড়া

বাঁকুড়া শহরে লকডাউন ঘোষণা হয়েছে। এ দিন পুরপ্রধান মহাপ্রসাদ সেনগুপ্ত মাইক নিয়ে মোড়ে মোড়ে কালোবাজারি রুখতে প্রচার করেন। পুরসভার তরফেও চালানো হয়েছে প্রচার। এ দিন মাচানতলা, চকবাজার, লালবাজার, কিসানমান্ডির বাজারের কিছু কিছু বিক্রেতা চড়া দাম হেঁকেছেন বলে অভিযোগ ক্রেতাদের একাংশের। দেশি পোনা মাছ ক’দিন আগেও ছিল ২৫০ টাকা কেজি। এ দিন অনেকে ৩৫০ টাকায় কিনেছেন। আলুর দাম কোথাও ছিল ২৫ টাকা। কোথাও উঠেছিল ৩০ টাকায়।

বিষ্ণুপুর

লকডাউন ঘোষণা হয়েছে বিষ্ণুপুর শহরে। এই শহরের আশপাশের বিভিন্ন গ্রামে আনাজ ফলে প্রচুর। ক’দিন আগেও শসা ছিল ৫ টাকা কেজি। সোমবার অনেক জায়গায় বিক্রি হয়েছে ১২ টাকায়। ৫ টাকার লাউয়ের দর উঠেছিল ১০-১৫ টাকা পর্যন্ত। ১৫ টাকায় আলু পাওয়া যেত এই শহরে। সোমবার কিনতে হয়েছে ১৮ থেকে ২০ টাকা কেজি দরে। কৃষ্ণগঞ্জে রবিবার যে মুড়ি ছিল ৩৭ টাকা কেজি, সোমবার সেটাই ৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন কিছু বাসিন্দা। বিকেলে এই অভিযোগে প্রতিবাদও শুরু হয়। কালোবাজারি রুখতে মাইক নিয়ে পুলিশ নেমেছিল পথে। আইনি পদক্ষেপের কড়া হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়। কিন্তু ক্রেতাদের একাংশকে চড়া দরের পরোয়া না করে প্রচুর কেনাকাটা করতে দেখা গিয়েছে এ দিন। যাঁরা একটা থলি নিয়ে বাজারে যেতেন, তাঁদের অনেকেই গোটা পাঁচেক থলি নিয়ে বাজারমুখো হয়েছিলেন।

বড়জোড়া

লকডাউন ঘোষণা হয়েছে বড়জোড়াতেও। সেখানে এ দিন সকালে বাজারদর চড়ছিল বলে অভিযোগ ওঠে। হস্তক্ষেপ করে স্থানীয় গ্রাম ষোলোআনা। গ্রাম ষোলোআনার সহ-সম্পাদক অলক মুখোপাধ্যায় জানান, তাঁরা বাজারে গিয়ে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলেন। তার পরে অনেকেই বাড়তি দাম ক্রেতাদের ফিরিয়ে দিয়েছেন বলে দাবি তাঁর।

খাতড়া

দু’-চার দিনের মতো কাঁচা আনাজ কেনার ভিড় দেখা গেল খাতড়ার বিভিন্ন আনাজের দোকানে। তেমনই এক জনের কথায়, ‘‘দরকারে আলুসেদ্ধ-ভাত খেয়ে থাকব। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে সুস্থ থাকাটাই সব থেকে জরুরি।’’ এ দিন আনাজের দাম চড়েনি বলেই জানাচ্ছেন খাতড়ার ক্রেতাদের অনেকে। শঙ্কর দত্ত নামে খাতড়া শহরের এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘দু’দিন আগেও আলু, বেগুন, করলার যা দাম ছিল, আজও তা-ই আছে।’’ খাতড়া ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক শঙ্কর দত্ত দাবি করেছেন, বাজারদর সর্বত্রই স্বাভাবিক ছিল। তিনি জানান, আলু বিক্রি হয়েছে ১৬ টাকায়। বেগুন ১২ টাকা। পেঁয়াজ ৩০ টাকা।

আগামী ক’দিন

আদ্রার বিভিন্ন ওষুধের দোকান আসানসোলের স্টকিস্টদের উপরে নির্ভরশীল। জেলাশাসক আশ্বস্ত করেছেন, কোনও ওষুধ বা পণ্য সরবরাহের পথে যাতে সমস্যা না হয় সে দিকে নজর রেখেছেন তাঁরা। বাঁকুড়া জেলাপ্রশাসনের এক কর্তাও জানিয়েছেন, খাদ্য বা কোনও অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের পরিবহণ যাতে বিঘ্নিত না হয় সে দিকে প্রশাসনের কড়া নজর রয়েছে। পুরুলিয়ার বিভিন্ন বাজারে কালোবাজির রুখতে দুর্নীতি দমন শাখা সক্রিয় রয়েছে বলে জানিয়েছেন পুরুলিয়ার জেলাশাসক। বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার কোটেশ্বর রাও বলেন, ‘‘কালোবাজারি রুখতে পুলিশ বাজারে বাজারে নজর রাখছে।’’ জেলা কৃষি বিপণন দফতরের আধিকারিক মহম্মদ আকবর আলি জানান, মাছ, মাংস, আনাজের আমদানি আগামী দিনেও স্বাভাবিক থাকবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy