Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus

সকালে জনশূন্য পথঘাট, ভিড় বিকেলে

দোকান খোলা থাকলেও অন্য দিনের মতো খরিদ্দার ছিল না। লাভপুর সহ কোথাও কোথাও শাসকদলের পক্ষে মাস্কবিলির কর্মসূচিতে জমায়েতের অভিযোগ ওঠে। 

সুনসান বোলপুরের লজ মোড়। ছবি:দয়াল সেনগুপ্ত

সুনসান বোলপুরের লজ মোড়। ছবি:দয়াল সেনগুপ্ত

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০২০ ০৩:০৫
Share: Save:

দোকানপাট বন্ধ। রাস্তা ফাঁকা। ট্রেন প্রায় চলেইনি। খুব কম মানুষ বাড়ি থেকে বের হয়েছেন। সরকারি বাস দু’চারটি চলাচল করলেও তাতে যাত্রী ছিল হাতেগোনা। রবিবার প্রধানমন্ত্রীর ডাকে জনতা কার্ফুতে বন্‌ধ, ধর্মঘটের থেকেও বেশি সাড়া

মিলল জেলা জুড়ে। তবে করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে ছেদ টানার উদ্দেশে জনতাকে গৃহবন্দি রাখতেই যে কার্ফু, সেই জনসচেতনতায় কোথাও খামতি লক্ষ্য করা গিয়েছে। কাজ না থাকলেও কোথাও চায়ের দোকানে জমল দেদার আড্ডা। কোথাও ফুটবল বা ক্রিকেট বা তাসের আসর বসল। রাস্তা দাপিয়ে বেড়াল বেশ কিছু তরুণ মোটরবাইক আরোহীও।

জেলাসদর সিউড়ি, বোলপুর, রামপুরহাটের মতো বড় দুবরাজপুর, সাঁইথিয়া, নলহাটির মতো তুলনায় ছোট পুর এলাকা থেকে নানুর, লাভপুর, ময়ূরেশ্বর, মহম্মদবাজার, খয়রাশোলের মতো গঞ্জ এলাকা সহ সর্বত্রই স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া দিয়েছেন জেলার সংখ্যাগরিষ্ট মানুষ। বিকেলে চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী এবং জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত মানুষকে অভিবাদন জানাতে শঙ্খ, কাঁসর ঘণ্টা, ঢোল থেকে হাততালি সবই বেজেছে। তার পরেও কিছু মানুষের

অজ্ঞতা ও বেপরোয়া মনোভাবের জনতা কার্ফু-র উদ্দেশ্য কতটা সফল হল সেই প্রশ্ন থাকছে।

সকাল সাতটা থেকেই জেলা সদর সিউড়ির চেহারা ছিল সুনসান। রাস্তাঘাট ফাঁকা। কিছু ওষুধের দোকান খোলা থাকলেও বাকি সব দোকানপাট আনাজ বাজার পুরোপুরি বন্ধ ছিল। সরকারি ও বেসরকারি বাসস্ট্যান্ডও ফাঁকা ছিল। বেসরকারি বাস চলেইনি। দু’চারটি সরকারি বাস সিউড়ি এলেও তাতে যাত্রী ছিল নগন্য। শহরের বড়বাগান, এসপি মোড়, ফাঁকা থাকলেও শহরের বেশ কিছু মোড়ে ইতিউতি দু’চার জনকে বসে আড্ডা মারতে দেখা গিয়েছে। তবে এ দিন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন শহরের ৮ এবং ৫ নম্বর ওয়ার্ডে থাকা দুটি মসজিদ সোনাতোড় পাড়া মাদ্রাসা এবং হরিহাদগঞ্জ কবীর মিঞা মসজিদ। সকালের নমাজের পরই মাইকে ঘোষণা করেন সেখানকার মৌলনারা। বলা হয় নমাজগুলি আপানার বাড়িতেই পড়ুন। যাতে জনসমাগম কম হয়। তবে বিকেলের পরে ছবি বদলাতে শুরু করে। পাড়ার মোড়ে, রাস্তাঘাটে লোকজন বেরোতে শুরু করেন। আড্ডা জমে। চলে খেলাধুলোও।

রাস্তা সুনসান, দোকানপাঠ বন্ধ থাকলেও সকাল থেকেই কিছু ব্যতিক্রমী ছবি ধরা পড়ে দুবরাজপুরে। কামারশাল মোড় থেকে পাওয়ার হাউস মোড় পর্যন্ত বেশ কয়েকটি চায়ের ও পান সিগারেটের দোকান খোলা থাকায় সেখানে অকারণ আড্ডা দিতে দেখা দিয়েছে বেশ কিছু মানুষকে। এখানেই শেষ নয়। শহরের তিন নম্বর ওয়ার্ডের বাগদিপাড়ায় তরুণদের দেখা গিয়েছে জমিয়ে ফুটবল খেলতে। বেশ কিছু তরুণ ক্রিকেটর আসর বসিয়েছিল সারদা ফুটবল ময়দানে। বাইকের দাপাদাপিও ছিল। দুবরাজপুর থেকে বক্রেশ্বর যাওয়ার পথে পণ্ডিতপুর মোড়েও চায়ের দোকানে দেদার আড্ডা জমেছিল। বিকেলের পরে সেই বহর আরও বাড়ে।

রামপুরহাটে এ দিন সকাল ৯টা থেকেই হাটতলায় ব্যবসায়ীদের জমিয়ে তাসের আসর বসাতে দেখা দিয়েছে। বিকেল তিনটের সময় রামপুরহাট ভলিবল গ্রাউন্ডে তাসের আড্ডায় মজে ছিলেন বেশ কিছু মানুষ। শুধু কি তাই। পুরপ্রধান অশ্বিনী তিওয়ারি ও কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়কে সকাল ৮টা থেকেই কমপক্ষে ১৫ জনকে নিয়ে আড্ডা দিতে দেখা দিয়েছে। এর পাশাপাশি ছিল একটি বাইকে তিন জন করে চেপে শহর দাপিয়ে বেড়ানো। বিকেল বেলা শঙ্খ-ঘণ্টা-থালা বাজানো শেষ হলে অনেকেই বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পড়েন। দূরপাল্লার দু’তিনটি ট্রেন রামপুরহাট স্টেশন দিয়ে পেরিয়ে গেলেও কোথাও বাস চলেনি। ভিড় ছিল মাংসের দোকানেও। দেশের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে শুক্রবার গভীর রাতে বিভিন্ন দূরপাল্লার ট্রেন থেকে ৭৩ জন যাত্রী রামপুরহাট স্টেশনে নেমেছিলেন। তাঁদের মধ্যে পুরুষদের কাষ্ঠগড়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার কোয়রান্টিন সেন্টারে এবং মহিলাদের রামপুরহাটের একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয়।

বোলপুর শহরেও জনতা কার্ফুর সাড়া পড়েছে যথেষ্টই। জামবুনি বাসস্ট্যান্ড, বোলপুর চৈরাস্তা, শ্রীনিকেতন মোড় কোথাও রাস্তায় লোকজন ছিল না। বাজার বন্ধ ছিল। জামবুনি বাসস্ট্যান্ড থেকে একটি বাসও চলেনি। বোলপুর স্টেশনও জনমানব শূন্য ছিল। ট্রেন চলেনি। এক, আধটা চায়ের দোকান খোলা ছিল। কিন্তু, সেখানে ভিড় বা আড্ডা তেমন জমে ওঠেনি। শহরের বাসিন্দারা গৃহবন্দিই ছিলেন।

নানুর, লাভপুর, ময়ূরেশ্বর এবং সাঁইথিয়া থানা এলাকা সকাল থেকেই ছিল সুসসান। বাসস্ট্যান্ড, স্টেশনে কোনও লোকের দেখা মেলেনি। যানবাহন বলতে হাতেগোনা কিছু সাইকেল মোটরবাইক চোখে পড়েছে। সকালের দিকে ২/১টি চায়ের

দোকান খোলা থাকলেও অন্য দিনের মতো খরিদ্দার ছিল না। লাভপুর সহ কোথাও কোথাও শাসকদলের পক্ষে মাস্কবিলির কর্মসূচিতে জমায়েতের অভিযোগ ওঠে।

এ দিন সব থেকে বেশি জমায়েত দেখা গিয়েছে মুরগি বিক্রির দোকানে। ৩০/৪০ টাকা কেজি দরে মুরগি বিকিয়েছে। সেই মুরগি কেনার জন্য লাভপুরের মহেশগ্রাম, ময়ূরেশ্বরের লোকপাড়া সহ বিভিন্ন জায়গায় সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পোলট্রি মুরগির দোকানের সামনে লম্বা লাইন দেখা যায়। সস্তা পেয়ে অনেককে ৩/৪টি মুরগি হাতে ঝুলিয়ে ফিরতে দেখা গিয়েছে। মহম্মদবাজারের আঙ্গারগড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতর নীলকুঠি পাড়ায় এ দিন আবার ১০০ দিনের কাজে পুকুর কাটার কাজ করেছেন জনা বিশেক জবকার্ডধারী।

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Janta Curfew
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy