Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus

ভাইরাসের কোপ পড়ছে রোজগারেও

দিন-আনা দিন-খাওয়া প্রচুর মানুষ এ ভাবেই পড়েছেন পরিস্থিতির কোপে।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০২০ ০৫:১৭
Share: Save:

রাস্তাঘাট ফাঁকা। নোভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কায় শহরের বাজারেও ভিড় নেই। নেহাত দরকার না হলে বাড়ির বাইরে বেরোচ্ছেন না অধিকাংশ মানুষজন। টোটোচালক থেকে ফুচকা বিক্রেতা বা ফুটপাতে বসা হকার—অনেকের রুজিতেই টান পড়েছে। কাজ পাচ্ছেন না নির্মাণ শ্রমিকেরাও। অনেক গৃহস্থ আবার পরিচারিকাদের কিছু দিন না আসতে বলেছেন।

দিন-আনা দিন-খাওয়া প্রচুর মানুষ এ ভাবেই পড়েছেন পরিস্থিতির কোপে। চিকিৎসকদের অনেকে আশঙ্কা করছেন, সতর্কতার বদলে যদি মানুষের মনে আতঙ্ক জাঁকিয়ে বসে, তা হলে এলাকার অর্থনীতি জোর ধাক্কা খেতে পারে। করোনাভাইরাসের মোকাবিলা করতে গিয়ে দেখা দিতে পারে অন্য সঙ্কট।

গত পঁয়তাল্লিশ বছর ধরে পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরের পুরনো বাসস্ট্যান্ডে ভাজা ছোলা-বাদাম বিক্রি করে আসছেন তপন সেন। জানাচ্ছেন, গত কয়েক দিনে বিক্রিবাটা অর্ধেকের নীচে নেমেছে। গরমের শুরুতে রঘুনাথপুরে ভাল আইসক্রিম বিক্রি হয় শুনে রাজস্থান থেক গত মাসে এসেছেন দীপক সিংহ। তিনি বলেন, ‘‘কয়েকদিন ধরে আইসক্রিমের ঠেলা নিয়ে ঘুরছি। নামমাত্র বিক্রি হচ্ছে।”

বাঁকুড়া শহরের টোটোচালক প্রবীর ঘোষ জানাচ্ছেন, দৈনিক যেখানে ছ’-সাতশো টাকা রোজগার হত, গত কয়েকদিনে সেটাই কমে অর্ধেক হয়ে গিয়েছে। তিনি বলেন, “দিনভর শহরের ঘুরেও যাত্রী পাচ্ছি না। পথঘাটে লোকজনই নেই। শহরের চেনা ছন্দটাই হারিয়ে গিয়েছে।” ঝালদা বাসস্ট্যান্ডের রিকশাচালক বিবেক কালিন্দি জানান, শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত মাত্র দু’জন সওয়ারি পেয়েছেন।

পুরুলিয়া শহরের বাসস্ট্যান্ডে দৈনিক কয়েকহাজার টাকার ফল বিক্রি করেন আলি হোসেন। তাঁর দাবি, শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত মেরেকেটে বারোশো টাকার বিক্রিবাটা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘অনেকেই ব্যস্ত হয়ে বাড়ি ফিরতে চাইছেন। ফলের ঠেলার দিকে ঘুরেও তাকাচ্ছেন না।” রঘুনাথপুর বাসস্ট্যান্ডে ঠেলা নিয়ে দাঁড়িয়ে আগে রোজ ৫০ থেকে ৭০ গ্লাস আখের রস বিক্রি করতেন বুলু রজক। গত কয়েকদিনে মেরেকেটে ২০ গ্লাস বিক্রি হয়েছে, দাবি তাঁর।

বাঁকুড়া শহরেরই রানিগঞ্জ মোড় সংলগ্ন সুভাষ রোডের ফুচকা বিক্রেতা মন্টু রক্ষিত প্রতিদিন হাজারের জায়গায় সাকুল্যে পাঁচশো ফুচকা বিক্রি করছেন এখন। শহরে ঘুরে ঘুরে ঝালমুড়ি বিক্রি করেন রাজু দাস। তিনি বলেন, “করোনাভাইরাসের ভয়ে শহরের মুরগির মাংস বিক্রি অনেকটাই কমে গিয়েছে। তখনও ভাবিনি, আমাদের এমন দশা হবে।’’

পুরুলিয়া শহরের ঠিকাদার সঞ্জীব দত্ত শহরে বেশ কয়েকটি ফ্ল্যাট তৈরি করছেন। তিনি জানান, প্রচুর নির্মাণশ্রমিক ওই ফ্ল্যাটগুলি তৈরির কাজ করেন। জমায়েত বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে বলে আপাতত সর্বত্র কাজ বন্ধ রেখেছেন তিনি। পুরুলিয়া শহরের রেজাউল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করছেন। তিনি জানান, গত সাত-আট দিন কোনও কাজ পাননি। তাঁর কথায়, ‘‘বিদেশ থেকে কী একটা রোগ এসেছে। তাই ফ্ল্যাট তৈরির কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন ঠিকাদারেরা। আমার মতো অনেকেরেই হাতে কাজ নেই।”

‘বাঁকুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ’-এর সাধারণ সম্পাদক মধুসূদন দরিপা বলেন, “করোনার আশঙ্কায় গোটা দেশ উদ্বিগ্ন। সার্বিক ভাবে বাঁকুড়ার ব্যবসা-পরিস্থিতি ভাল নয়। করোনা আতঙ্ক না কাটলে চৈত্র সেলের বাজার এ বার আদৌ জমে কি না, তা নিয়েই চিন্তিত আমরা।”

কোন দিকে গড়াচ্ছে পরিস্থিতি? পুরুলিয়া জেলা হাসপাতালের চিকিৎসক নয়ন মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘যাঁরা পরিষেবা দিচ্ছেন এবং যাঁরা নিচ্ছেন—দু’পক্ষই সতর্ক থাকলে মিটে যায়। হাঁচি-কাশির সময়ে মুখ ঢেকে রাখলেই হবে শুধু। কিন্তু অতিসতর্ক হতে গিয়ে যদি স্বাভাবিক কাজকর্ম বন্ধ করে দেওয়া হয়, তা হলে খুবই সমস্যা দেখা দেবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Income
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy