সন্ধ্যায় আমোদপুরের বাজার। মঙ্গলবার। —নিজস্ব চিত্র।
ছিনতাইয়ের আশঙ্কায় সন্ধ্যার পরে ক্রেতার দেখা নেই আমোদপুরের বাজারে। ফলে, পুজোর ভরা মরসুমে ব্যবসা মার খাচ্ছে। এমনই দাবি ব্যবসায়ীদের।
পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি এক দিনের ব্যবধানে লাভপুর এবং সাঁইথিয়া থানা এলাকায় দুই ব্যক্তির নলিকাটা দেহ উদ্ধার হয়। খুনের অভিযোগে আমোদপুর সংলগ্ন এলাকা থেকে তিন জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। নেশার টাকা যোগাড়ের জন্য ছিনতাইয়ের পরে দু'জনকে একই ভাবে খুন করা হয়েছে বলে পুলিশের দাবি। নিহতদের বাড়ি দু’টি আলাদা থানা এলাকা হলেও এদের মধ্যে দূরত্ব তিন কিলোমিটারের মতো। দু’জনেই আমোদপুর বাজারে গিয়ে আর বাড়ি ফেরেননি।
ব্যবসায়ী ও স্থানীয়েরা জানান, দু’টি খুনের পর থেকেই আমোদপুরে সন্ধ্যার পরে বাজার করতে আসতে ভয় পাচ্ছেন এলাকার বাসিন্দারা। ফলে, মার খাচ্ছে পুজোর বাজার। কারণ, স্থানীয় প্রায় ৩০-৪০ টি গ্রামের বাসিন্দাদের পুজোর বাজার করার অন্যতম জায়গা হল আমোদপুর। সাধারণত বাড়ির কাজ সেরে দুপুরের পরে বাজার করতে আসেন তাঁরা। ফেরেন সন্ধ্যার পরে। এ বারে সেই চেনা ছবিটা হারিয়ে গিয়েছে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার পর কার্যত শুনশান হয়ে পড়ছে বাজার এলাকা।
আমোদপুরের বাজারে প্রায় ৭০ বছরের পুরনো কাপড়ের দোকান রয়েছে পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায়দের। তিন পুরুষের মণিহারি দোকান রয়েছে কৈলাস সাহানীদের। তাঁরা বলেন, ‘‘অন্য বছর এতদিন পুজোর বাজার জমজমাট হয়ে উঠত। সকাল থেকে রাত সাড়ে দশটা-এগারোটা পর্যন্ত খদ্দের সামলাতে হিমশিম খেতাম। ওই খুন দু’টি হওয়ার পর থেকে সন্ধ্যা হতে না হতেই বাজার শুনশান হয়ে পড়ছে। এ ভাবে চললে পুজোর বাজার ডাহা মার খাবে।’’ একই আশঙ্কা ছোট ব্যবসায়ীদেরও। বাবুপাড়ায় ২০ বছরের ফুচকার স্টল রয়েছে দুলাল সাহানীর। চৌরঙ্গী মোড়ের কাছে দীর্ঘ দিনের মোমোর দোকান অরুণ প্রসাদের। তাঁরা বলেন, ‘‘পুজোর বাজার করতে এসে অনেকেই খেয়ে যান। বাড়ির জন্য খাবার নিয়েও যান। সেই বিক্রিবাটা করেই আমাদের পুজোর খরচের সংস্থান হয়। এ বারে সেই সম্ভাবনা নেই। এত দিন ধরে দোকান চালাচ্ছি। এর আগে এ রকম পরিস্থিতি দেখিনি।’’
শুধু পুজোর বাজারেই নয়, অন্যত্রও প্রভাব পড়েছে। কুসুমযাত্রার ভোলানাথ দাস, আমোদপুরের সুপ্রিয়া রায়েরা বলেন, ‘‘আমাদের ছেলে-মেয়েরা রাতে টিউশানি পড়তে যায়। ওই ঘটনার পর থেকে তারা না ফেরা পর্যন্ত খুব দুশ্চিন্তায় থাকি।’’ স্কুলের শিক্ষক প্রসেনজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সাহাপুর থেকে এক ব্যক্তি আমার আত্মীয়ের বাড়িতে রান্না করতে আসতেন। ওই ঘটনার পরে তিনি রাতে রান্না করতে আসছেন না।’’
আমোদপুর ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক রাজেন্দ্রনাথ দত্ত বলেন, ‘‘জোড়া খুনের পর থেকে সত্যিই এলাকায় অভূতপূর্ব পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশ প্রশাসনকে বিষয়টি জানিয়েছি। পুলিশ নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়েছে।’’ জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘ভয়ের কোনও কারণ নেই। জোড়া খুনের ঘটনায় যাঁরা জড়িত তাঁরা পেশাদার খুনি নন। নেশার টাকা জোগাড়ের জন্য ছিনতাইয়ের পরে খুন করে। দলে তিন জনই ছিল। তিন জনকেই গ্রেফতার করা হয়েছে। এলাকায় পুলিশি টহলও জোরদার করা হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy