Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪

ক্লাবে বিস্ফোরণ, ধৃত ক্লাব সদস্যই

ধৃত যুবককে সোমবার রামপুরহাট এসিজেএম আদালতে হাজির করানো হলে ভারপ্রাপ্ত বিচারক সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়চৌধুরী ৫ দিনের পুলিশ হেফাজত মঞ্জুর করেন।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রামপুরহাট শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৯ ০০:৫১
Share: Save:

মল্লারপুরে ক্লাবে বিস্ফোরণের ঘটনায় ক্লাব সদস্যকেই গ্রেফতার করল পুলিশ। গত ২৯ জুন গভীর রাতে মল্লারপুর বাজারে তিন তলা ক্লাবের নীচের তলায় বিস্ফোরণ ঘটে। ওই ঘটনার ৯ দিন পরে প্রথম গ্রেফতারি হল। পুলিশ জানায়, ধৃত যুবকের নাম মিঠু শেখ। পেশায় রাজমিস্ত্রির জোগাড়ে মিঠুর বাড়ি মল্লারপুর রেলপাড় এলাকায়। যদিও মিঠুকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে বলে অভিযোগ তাঁর পরিবারের।

ধৃত যুবককে সোমবার রামপুরহাট এসিজেএম আদালতে হাজির করানো হলে ভারপ্রাপ্ত বিচারক সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়চৌধুরী ৫ দিনের পুলিশ হেফাজত মঞ্জুর করেন। সরকারি আইনজীবি সৈকত হাতি বলেন, প্রাথমিক তদন্তের পরে বিস্ফোরক মজুত রাখার সন্দেহে পুলিশ মিঠু শেখকে গ্রেফতার করেছে। ঘটনায় আরও কয়েক জন জড়িত আছে বলে পুলিশের অনুমান। সেই কারণেই ধৃতকে বিশদে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য পুলিশ ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছিল। বিচারক সব দিক বিবেচনা করে ৫ দিনের হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।’’

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃতের বিরুদ্ধে আগুন লাগানো এবং দাহ্য পদার্থ নিয়ে অবহেলার অভিযোগে মামলা হয়েছে। পুলিশের দাবি, ২০০৯ সালে মল্লারপুরে একটি গণ্ডগোলের সময় মিঠুর বিরুদ্ধে বোমা মজুত রাখার অভিযোগ উঠেছিল। পুলিশ সেই কারণে মিঠুকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য শনিবার আটক করে। রবিবার তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। তদন্তে শুরু থেকেই পুলিশ সন্দেহ করছিল, বিস্ফোরক মজুত ছিল ক্লাবের নীচতলার ঘরেই কোথাও। এবং এর সঙ্গে ক্লাবের ভিতরের কেউ জড়িত। এর আগে পুলিশ ক্লাবের সদস্যদের একাধিক বার জিজ্ঞাসাবাদও করেছে।

তবে, কী ধরনের বিস্ফোরক রাখা ছিল, কী ভাবে বিস্ফোরণ ঘটল— এ সব নিয়ে প্রথম থেকেই মুখে কুলুপ এঁটেছে পুলিশ। তাদের দাবি, ফরেন্সিক তদন্তের রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত তদন্তের স্বার্থেই কিছু বলা যাবে না। সোমবারও বীরভূমের পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহ বলেন, ‘‘তদন্তের স্বার্থে বেশি কিছু বলা যাবে না। তবে, বিস্ফোরণে আরও অনেকে জড়িত আছে।’’ এই ‘আরও অনেকে’ বলতে বহিরাগত কেউ কিনা, সে প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার জানান, তারা কেউ বাইরের নয়। ঘটনা হল, বিস্ফোরণের পরেই রামপুরহাটে এসে জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল বিস্ফোরণের ঘটনায় বহিরাগত তত্ত্ব টেনেছিলেন। তাঁর অভিযোগ ছিল, ‘‘মল্লারপুরের ওই ক্লাবটা বিজেপি নিয়ন্ত্রণ করে। ওই ক্লাবে ঝাড়খণ্ড থেকে এনে বোমা মজুত করা ছিল। মল্লারপুর রেল স্টেশনের পাশেই ক্লাব। তাই মজুত করতে সুবিধা হত।’’ এই অভিযোগ অবশ্য বিজেপি নেতৃত্ব এবং ক্লাব কর্তৃপক্ষ বরাবর অস্বীকার করেছেন। শুধু তাই নয়, বিস্ফোরণ-কাণ্ডে পুলিশি তদন্তের উপর ভরসা না করে এনআইএ তদন্তের দাবিতে কিছুদিন আগেই বড় মিছিল করেছেন মল্লারপুরের মানুষ। এ বার ওই ক্লাবেরই সদস্য মিঠুকে গ্রেফতার করার খবর জানাজানি হতে এলাকার বাসিন্দাদের মনে নানা প্রশ্ন উঠেছে। যে ক্লাবে বিস্ফোরণ ঘটেছে, সেটির উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য শেখর গুপ্ত বলেন, ‘‘আমরা মিঠুকে ভাল ছেলে বলেই জানি। দিনমজুরি করে সংসার চালায়। আর যাই হোক বোমা বিস্ফোরণের সঙ্গে ওই যুবক যুক্ত নয়, এটা বলতে পারি।’’

মিঠুর বাড়িতে রয়েছেন তাঁর স্ত্রী, তিন ছেলে ও ঠাকুরমা। মিঠুর স্ত্রী মঞ্জিলা বিবির দাবি, ‘‘আমার স্বামী নির্দোষ। রাজমিস্ত্রির কাজ করে রোজ ৩২০ টাকা পায়। কোনও মতে সংসার চলে। পুলিশ মিথ্যা মামলায় স্বামীকে ফাঁসিয়েছে। যদি ও দোষ করে থাকে, তা হলে বিস্ফোরণের পরে বাড়িতে কেন থাকবে?’’ তাঁর দাবি, মাঝরাতে ঘুম থেকে তুলে পুলিশ মিঠুকে নিয়ে যায়। পরে তিনি জানতে পারেন, তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিন নাবালক ছেলেকে নিয়ে কী করবেন, তা বুঝতে পারছেন না মঞ্জিলা।

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Violence Explosion
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy