Advertisement
০২ অক্টোবর ২০২৪

লাঠিসোটা হাতে দু’দল, মাঝে পুলিশ

এ দিন গোলমালের আঁচ পেয়ে আগেভাগেই বিশরী পঞ্চায়েত ভবনের কাছে মোতায়েন করা হয়েছিল পুলিশ বাহিনী।

ধুন্ধুমার: মানবাজারের বিশরী পঞ্চায়েতে। নিজস্ব চিত্র

ধুন্ধুমার: মানবাজারের বিশরী পঞ্চায়েতে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা 
মানবাজার শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৯ ০২:৪১
Share: Save:

এক দলের হাতে বাঁশের লাঠিতে জড়ানো ঝান্ডা। অন্য দলের হাতে মোটা কাঠের ডান্ডা। এক পক্ষ ‘বন্দেমাতরম’ স্লোগান দিলে অন্য পক্ষ আকাশ কাঁপিয়ে হাঁক ছাড়ছে ‘জয় শ্রীরাম’। যুযুধান তৃণমূল ও বিজেপি কর্মীদের জমায়েতের মধ্যে ব্যবধান ছিল প্রায় আড়াইশো মিটার। স্নায়ুযুদ্ধের মাঝখানে পুলিশ দাঁড়িয়ে ঠাণ্ডা মাথায় অশান্তি সামাল দিল। বুধবার মানবাজার ১ ব্লকের তৃণমূল পরিচালিত বিশরী পঞ্চায়েতে বিজেপির স্মারকলিপি দেওয়ার কর্মসূচিকে ঘিরে এমনই উত্তেজনা তৈরি হয়।

এ দিন গোলমালের আঁচ পেয়ে আগেভাগেই বিশরী পঞ্চায়েত ভবনের কাছে মোতায়েন করা হয়েছিল পুলিশ বাহিনী। মানবাজার, বোরো, পুঞ্চা থানার পুলিশ তো ছিলই। পুরুলিয়া পুলিশ লাইন থেকেও কয়েক গাড়ি বাহিনী নিয়ে আসা হয়। সব রকম পরিস্থিতির মোকাবিলায় লাঠি, ঢাল ছাড়াও পুলিশ মজুত রেখেছিল কাঁদানে গ্যাসও। তবে কিছুক্ষণ পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি ছাড়া বেশি কিছু হয়নি। পুলিশের ওই হস্তক্ষেপে শেষ পর্যন্ত ধুন্ধুমার কাণ্ড থেকে রক্ষা পেলে ওই এলাকা।

বিজেপি কর্মী প্রণব সেন, বিদ্যুৎ প্রামাণিক, দীনবন্ধু বাউরির দাবি, বিশরী পঞ্চায়েতে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা, বার্ধক্য ভাতা থেকে একশো দিনের কাজ প্রভৃতি বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। দলের মানবাজার ১ মণ্ডল সভাপতি বাণীপদ কুম্ভকার অভিযোগ, ‘‘এই পঞ্চায়েতে সরকারি প্রকল্প রূপায়ণে পক্ষপাতিত্ব করা হচ্ছে। পঞ্চায়েতে স্মারকলিপি দেওয়া হবে বলে আমাদের কর্মীরা প্রধানের সময় চেয়ে আগে আবেদনপত্র নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু পঞ্চায়েত থেকে ওই আবেদনপত্র জমা নিতে চায়নি। তাই আমরা ইমেল করে এ দিন স্মারকলিপি দিতে এসেছিলাম।’’

বিশরী পঞ্চায়েত প্রধান তৃণমূলের সজ্জিতা বেসরার পাল্টা দাবি, ‘‘পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ ঠিক নয়। ওরা স্মারকলিপি জমা দেওয়ার জন্য কোনও আবেদন জানাননি। ইমেলও পাইনি। তাহলে আমি কেন স্মারকলিপি জমা নেব?’’ দুই দলের নেতাদের এই চাপানউতোরে পরিস্থিতি ঘোরাল হয়ে ওঠে।

এসডিপিও (মানবাজার) আফজল আবরার, সিআই (মানবাজার) মনিরুল ইসলাম সরকার এবং মানবাজার, পুঞ্চা ও বোরো থানার ওসিরা দু’পক্ষের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন। স্মারকলিপি জমা নিতে না চাওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে। তখন পুলিশ আধিকারিকেরা মানবাজার পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি দিলীপ পাত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাঁর মধ্যস্থতায় ঠিক হয়, প্রধান অফিসের বাইরে গিয়ে স্মারকলিপি নেবেন। সে ভাবেই বিজেপির স্মারকলিপি গ্রহণ পর্ব মেটে।

বাণীপদবাবু বলেন, ‘‘স্মারকলিপি জমা দেওয়া গণতান্ত্রিক অধিকার। তৃণমূলের প্রধান স্মারকলিপি জমা নিতে ভয় পাচ্ছেন কেন?’’ প্রধান সজ্জিতাদেবী বলেন, ‘‘আমরা জনগণের নির্বাচনে এখানে এসেছি। তা ছাড়া সদস্যরা সবাই মহিলা। না জানিয়ে এ ভাবে স্মারকলিপি দেওয়া যায় না।’’

তবে, একপ্রকার শান্তিতে সব মেটায় পুলিশ যেমন হাঁফ ছেড়েছে, তেমনই স্বস্তি পেয়েছেন এলাকার বাসিন্দারাও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC BJP Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE