তাণ্ডব: সাঁতুড়ির মধুকুণ্ডায় যুব তৃণমূল নেতার বাড়ি ও গাড়িতে ভাঙচুর চলল। নিজস্ব চিত্র
পঞ্চায়েত সমিতির বিজেপির এক সদস্যকে অপহরণের অভিযোগকে ঘিরে মঙ্গলবার তেতে উঠল সাঁতুড়ির মধুকুণ্ডা। পাল্টা তৃণমূল নেতার বাড়ি ও পার্টি অফিস ভাঙচুর, এমনকী শাসকদলের দুই নেতাকে হেনস্থার অভিযোগও উঠল। তবে দিনের শেষে পুরুলিয়ায় বিজেপির সেই পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য প্রধান দাশগুপ্ত তৃণমূলে যোগ দিয়ে দাবি করেন, তাঁকে অপহরণ করা হয়নি। স্বেচ্ছায় তিনি দলবদল করেছেন। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার আকাশ মাঘারিয়া বলেন, ‘‘দু’পক্ষই অভিযোগ করেছে। আমরা সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে তদন্ত শুরু করেছি।’’
জেলার অধিকাংশ পঞ্চায়েত সমিতিতে বোর্ড গঠন হয়ে গেলেও গোলামালের জেরে সাঁতুড়িতে তা স্থগিত হয়ে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে দলীয় সদস্যদের ভয় ও প্রলোভন দেখিয়ে শাসকদল নিজেদের দিকে টানার চেষ্টা চালাবে বলে আগেই অভিযোগ তুলেছিল বিজেপি। এ দিন সকালে মধুকুণ্ডা স্টেশন বাজার এলাকায় বোমা ফাটিয়ে বিজেপির সাঁতুড়ি পঞ্চায়েত সমিতির ওই সদস্য প্রধানের মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা তুলে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ ওঠে।
সেই খবর ছড়িয়ে পড়তেই বিজেপির কর্মীরা সাঁতুড়ির যুব তৃণমূল সভাপতি বাপ্পা মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে পাল্টা হামলা চালায় বলে অভিযোগ। তৃণমূলের দাবি, ওই নেতার বাড়ি, গাড়ি ভাঙা হয়। একটি ঘরে আগুনও লাগিয়ে দেওয়া হয়। মধুকুণ্ডায় তৃণমূলের পার্টি অফিসেও ভাঙচুর চলে। তৃণমূলের জেলা পরিষদের সাঁতুড়ির প্রাক্তন সদস্য তথা আদিবাসী নেতা বড়কারাম টুডুকে মারধর করে তাঁর হাতে জোর করে বিজেপির পতাকা ধরিয়ে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। দীর্ঘক্ষণ ধরে ঘেরাও করে রাখা হয় স্থানীয় পঞ্চায়েতের তৃণমূলের প্রধান কালীদাস সরকার ও জেলা পরিষদের সাঁতুড়ির তৃণমূলের সদস্য চৈতালী রায়কে।
তৃণমূলে ‘অপহৃত’। নিজস্ব চিত্র
পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। কিন্তু, পুলিশ গেলেও মধুকুণ্ডায় ঢুকতে বাধা পায়। বিকালে বড়সড় বাহিনী পৌঁছলে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। যদিও সাঁতুড়ির মণ্ডল সভাপতি অরূপ আচার্যের দাবি, ‘‘যা হয়েছে সবটাই জনরোষ। বিজেপি এখানে কিছু করেনি।’’ আবার বিজেপির পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যকে অপহরণের অভিযোগও মানতে চায়নি শাসকদল। রঘুনাথপুরের তৃণমূল বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউরির দাবি, ‘‘নিজেদের অন্তর্দ্বন্দ্বের জেরেই সমিতির বিজেপির সদস্যকে অপহরণ করিয়েছিল ওরা।’’
পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠনকে ঘিরে রঘুনাথপুর মহকুমার অন্যান্য এলাকার মতোই সাঁতুড়িতেও যথেষ্ট উত্তেজনা ছিল। এখানে বিজেপি ও তৃণমূল ছ’টি করে আসন পেয়েছিল। কিন্তু, সিপিএমের এক মাত্র সদস্য বিজেপিতে যোগ দেওয়ায় চাপে পড়ে যায় শাসকদল। ৬ সেপ্টেম্বর সাঁতুড়ি সমিতিতে বোর্ড গঠনের দিন সেখানে দু’পক্ষের সমর্থকদের গোলমাল বাধে। স্থগিত হয়ে যায় বোর্ড গঠন।
বিজেপির অভিযোগ, তারা সংখ্যা গরিষ্ঠ হওয়ায় তাদের অন্তত এক জন সদস্যকে দলে টানতে মরিয়া হয়ে উঠেছিল তৃণমূল। সে কারণেই বালিতোড়া পঞ্চায়েত এলাকা থেকে জেতা বিজেপি সদস্য প্রধানকে অপরহণ করা হয়। এ দিন দুপুরে প্রধানের মা জ্যোৎস্না দাশগুপ্ত সাঁতুড়ি থানায় ছেলেকে অপহরণের অভিযোগ দায়ের করেন। তিনি তৃণমূলের লোকজনের বিরুদ্ধেই অভিযোগ করেছেন।
এ দিন সকাল ৯টা নাগাদ সুনুড়ি গ্রাম থেকে এক বন্ধুর সঙ্গে মধুকুণ্ডা স্টেশনে ট্রেন ধরতে যাচ্ছিলেন প্রধান। অভিযোগ, স্টেশন লাগায়ো বাজারে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা তাঁর মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে তাকে গাড়িতে তোলে। স্থানীয়েরা বাধা দিতে গেলে কয়েকটি বোমা ছুড়ে প্রধানকে নিয়ে পালায় দুষ্কৃতীরা। জুলাই মাসেও সাঁতুড়ি পঞ্চায়েত সমিতির বিজেপির এক সদস্যকে অপহরণ করে কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল বলে অভিযোগ ওঠে। গাড়ি থেকে পালিয়ে পানাগড় সেনাছাউনিতে ঢুকে পড়ে তিনি রেহাই পান বলে পরে দাবি করেন।
প্রধানকে ‘অপহরণের’ খবর ছড়াতেই বিজেপির কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ মধুকুণ্ডা স্টেশন লাগোয়া যুব তৃণমূল সভাপতি বাপ্পার বাড়িতে হামলা চালায়। বাপ্পা তখন বাড়িতে ছিলেন না। তাঁর অভিযোগ, ‘‘বিজেপির লোকজন বিনা কারণে আমার বাড়িতে তাণ্ডব চালায়। কোনওরকমে স্ত্রী ও ছেলেমেয়েরা পালিয়ে বেঁচেছে।”
সাঁতুড়ির ল্যাম্পসে বসেছিলেন তৃণমূল নেতা বড়কারাম টুডু। অভিযোগ, তাঁকে সেখান থেকে তুলে বিজেপির কার্যালয়ে নিয়ে গিয়ে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। রঘুনাথপুর সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করতে হয়। বালিতোড়া গ্রামে একটি ছোট বেসরকারি স্কুল চালান বালিতোড়া পঞ্চায়েতের তৃণমূলের প্রধান কালীদাস সরকার। অভিযোগ, তাঁকে স্কুলের মধ্যেই দীর্ঘসময় ঘেরাও করে আটকে রাখেন বিজেপির লোকজন।
সাঁতুড়ির বিভিন্ন এলাকায় গোলমাল ছড়িয়ে পড়লেও পর্যাপ্ত পুলিশ না পৌঁছনোয় কয়েক ঘণ্টা সাঁতুড়ি থানার পুলিশ সেই সব এলাকা। ঢুকতে পারেনি। বিকেলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার চন্দ্রশেখর বর্ধন, এসডিপিও (রঘুনাথপুর) সত্যব্রত চক্রবর্তী, সিআই (রঘুনাপুর) সুকান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ কয়েকটি থানার ওসিরা বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন। তারপরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy