এবার পড়ুয়া টানতে মডেল স্কুলগুলির নিয়মে বদল আনতে চলেছে রাজ্য শিক্ষা দফতর। স্কুলগুলির পরিকাঠামোগত সমস্যা জানতে চাওয়া হয়েছে জেলার কাছে। সম্প্রতি এনিয়ে জেলায় আলাদা করে দু’টি নির্দেশিকা পাঠিয়েছে রাজ্য স্কুল শিক্ষা দফতর। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মডেল স্কুলগুলিতে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
প্রশাসনের কর্তারা জানাচ্ছেন, এতদিন মডেল স্কুলগুলিতে শুধুই ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা হতো। আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে এই নিয়ম বদলে ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা মাধ্যমেও পঠনপাঠন চালানো হবে। পড়ুয়ারা নিজেদের ইচ্ছে মতো মাধ্যম বেছে নেবে। আগে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত মডেল স্কুলে পঠনপাঠন হতো। নতুন নিয়মে পঞ্চম শ্রেণি থেকেই মডেল স্কুলে ভর্তি হওয়া যাবে। বাঁকুড়ার জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু বলেন, “প্রত্যন্ত এলাকার পড়ুয়ারা পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত বাংলা মাধ্যমে পড়ে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে সরাসরি ইংরেজি মাধ্যমে এসে কতটা গুছিয়ে নিতে পারবে তা নিয়ে অভিভাবকদের সংশয় ছিল। স্কুল শিক্ষা দফতরের এই সিদ্ধান্তে সেই সংশয় কাটবে।”
জেলার প্রত্যন্ত এলাকায় আধুনিক শিক্ষার সুযোগ করে দিতে ২০১৩ সাল থেকে মডেল স্কুল গড়ার কাজ শুরু হয়। বাঁকুড়ার মেজিয়া, ওন্দা, ছাতনা, শালতোড়া, পাত্রসায়র, হিড়বাঁধ ও রানিবাঁধ ব্লকে ইতিমধ্যেই ওই স্কুল তৈরি হয়েছে। ইঁদপুর ব্লকেও মডেল স্কুল গড়ার কাজ শুরু হয়েছে। তবে জেলার বাংলা মাধ্যম স্কুলগুলি একদিকে যখন পড়ুয়াদের ভারে নাজেহাল, তখন মডেল স্কুলগুলি ছাত্র পাচ্ছে না। পড়ুয়ারা গ্রামের মডেল স্কুলে না গিয়ে কয়েক কিলোমিটার পথ উজিয়ে ছুটছে বাংলা মাধ্যম স্কুলেই। ছাতনার কুখড়িবাসা এলাকার মডেল স্কুলে যেখানে পড়ুয়া ৫৯, কুখড়িবাসা থেকে দু’কিলোমিটার দূরে নেতাজি হাইস্কুলের পড়ুয়ার সংখ্যা দু’হাজারের বেশি। একই অবস্থা কমবেশি সর্বত্রই। পাত্রসায়র মডেল স্কুলে পড়ুয়া মাত্র চার জন, হিড়বাঁধ মডেল স্কুলে ২২, রানিবাঁধ মডেল স্কুলে ১৮, শালতোড়া মডেল স্কুলে ৪০, ওন্দা মডেল স্কুলে ৪৫, মেজিয়া মডেল স্কুলে ৮১ জন। প্রতিটি স্কুলে স্থায়ী শিক্ষকও প্রয়োজনের তুলনায় কম রয়েছেন। যদিও সম্প্রতি কয়েকটি স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে বলে জেলা প্রশাসনিক সূত্রের দাবি।
এই পরিস্থিতিতে নিয়ম বদলের পাশাপাশি মডেল স্কুলগুলির সার্বিক পরিকাঠামোগত সমস্যা জানতেও উদ্যোগী হয়েছে স্কুল শিক্ষা দফতর। গত অক্টোবরে জেলাশাসককে চিঠি দিয়ে জেলার মডেল স্কুলগুলির পরিকাঠামোর কী ধরনের উন্নয়ন দরকার, সেই তথ্য চেয়েছে স্কুল শিক্ষা দফতর। মডেল স্কুলের উন্নয়নের বিষয়ে জেলাশাসকের মতামতও চাওয়া হয়েছে। বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বীরভূম, পশ্চিম মেদিনীপুর, দার্জিলিং-এর মতো উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের মোট ১৩টি জেলার জেলাশাসককেই ওই চিঠি দেওয়া হয়েছে। বাঁকুড়ার জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু বলেন, “মডেল স্কুলগুলির পরিকাঠামোগত সমস্যা আমরা স্কুল শিক্ষা দফতরকে জানাব।”
শুধু ইংরেজি মাধ্যমই শুধু নয়, মডেল স্কুলগুলিতে পড়ুয়া না আসার পিছনে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল না হওয়াকেও দায়ী করে আসছেন স্থানীয় স্কুলের শিক্ষকেরা। কারণ, বেশিরভাগ স্কুলই বানানো হয়েছে প্রত্যন্ত এলাকা বাছাই করে। মেজিয়ার এক শিক্ষক বলেন, “মেজিয়ার মডেল স্কুলটি কালীদাসপুরের এমন একটি এলাকায় গড়া হয়েছে যেখানে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল নয়। যাতায়াতের অসুবিধার জন্য অনেক পড়ুয়াই ওই স্কুলে ভর্তি হয়েও ছেড়ে দিয়ে অন্য স্কুলে নাম লিখিয়েছে দিয়েছে।” স্কুলগুলিতে যোগাযোগ ব্যবস্থা নিয়ে সমস্যার কথা মেনে নিচ্ছে জেলা প্রশাসনও। জেলাশাসক মৌমিতাদেবী বলেন, “যোগাযোগ ব্যবস্থার সমস্যা মেটাতে স্কুলগুলিতে হস্টেল গড়া যেতে পারে। স্কুলগুলি অনেকটাই বড়। তেমন হলে কয়েকটি ক্লাস রুমকে হস্টেল হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।” বিষয়টি তিনি স্কুল শিক্ষা দফতরকে বলবেন বলেও জানিয়েছেন। জেলা সর্বশিক্ষা মিশন প্রকল্পের আধিকারিক সুপ্রভাত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “মডেল স্কুলগুলি নিয়ে জোর কদমে প্রচার চালানো হচ্ছে। আগামী শিক্ষাবর্ষে স্কুলগুলিতে ছাত্রসংখ্যা অনেকটাই বাড়বে বলে আমরা আশাবাদী।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy