Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪

সীমানায় থেমে যাচ্ছে বাস

সূত্রের খবর, মেদিনীপুর থেকে ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া হয়ে পুরুলিয়ার বিশপুরিয়া রুটে চলা একটি নতুন বাসকে নিয়ে দুই জেলার বাসমালিক সমিতির দ্বন্দ্বের সূত্রপাত।

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া ও ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:৫৭
Share: Save:

দুই জেলার বাসমালিক সমিতির দ্বন্দ্বে বাস যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গিয়েছে দুই পড়শি জেলার মধ্যে। আর ভুগতে হচ্ছে বাঁকুড়া ও ঝাড়গ্রাম জেলার বাসযাত্রীদের। দুই জেলার সীমানার কিছু দূরে থেমে যাচ্ছে বাস। কিছুটা পথ ট্রেকারে চড়ে জেলা পার করে, ফের চড়তে হচ্ছে অন্য বাসে। বাঁকুড়া ও ঝাড়গ্রাম জেলার বাসমালিকদের দ্বন্দ্বে মঙ্গলবার থেকে এ ভাবেই যাতায়াত করতে হচ্ছে যাত্রীদের। একের পর এক বাস পরিবর্তন করতে গিয়ে যাত্রীদের আক্ষেপ, “যা চলছে, তাতে মনে হচ্ছে যেন পাশের জেলা নয়, এক দেশ থেকে অন্য দেশে পাড়ি দিচ্ছি!’’

সূত্রের খবর, মেদিনীপুর থেকে ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া হয়ে পুরুলিয়ার বিশপুরিয়া রুটে চলা একটি নতুন বাসকে নিয়ে দুই জেলার বাসমালিক সমিতির দ্বন্দ্বের সূত্রপাত। বাঁকুড়া জেলা আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিক (আরটিও) সঞ্জয় বিশ্বাস বলেন, “সমস্যাটি আমাদের নজরে রয়েছে। জেলার বাস মালিক সমিতিকে বলেছি, আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি

মিটিয়ে নিতে।”

ঝাড়গ্রাম জেলা ও বাঁকুড়া জেলা বাসমালিক কল্যাণ সমিতি জানাচ্ছে, মাস দু’য়েক ধরে ওই রুটে পশ্চিম মেদিনীপুরের একটি নতুন এক্সপ্রেস বাস চলাচল শুরু করে। তার সময়সূচি নিয়ে আপত্তি তোলেন বাঁকুড়ার বাস মালিকেরা। তাঁদের দাবি, বিশপুরিয়া থেকে বাসটি যে সময় মেদিনীপুরের দিকে ফিরছে, ঠিক সেই সময়েই বাঁকুড়া থেকে একটি বাস ঝাড়গ্রামের উদ্দেশে যায়। সমস্যা মেটাতে বাসটির সময়সূচি পরিবর্তন করা অথবা ফেরার সময় বাঁকুড়ার গোবিন্দনগর বাসস্ট্যান্ডে না ঢুকে বাঁকুড়া বাইপাস হয়ে বেরিয়ে যেতে হবে বলে দাবি তোলেন বাঁকুড়ার বাস মালিকেরা।

ঝাড়গ্রাম জেলা বাস মালিক সমিতির সম্পাদক দিলীপ পালের অভিযোগ, ‘‘এক্সপ্রেস বাসটি বাঁকুড়ার লোকাল বাসগুলিকে পাশ কাটিয়ে এগিয়ে যাওয়ায় যাত্রীরা সেই বাসেই বেশি চড়ছিলেন। তাতেই ওই সময়ের লোকাল বাসগুলির মালিকেরা আপত্তি তোলেন। তারপর থেকে আমাদের জেলার বাসগুলিকে হয়রান করা হত। এক্সপ্রেস বাসটিকে বাঁকুড়ার স্ট্যান্ডে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়।’’

সঙ্কট কাটাতে দুই জেলার বাস মালিকদের নিয়ে বাঁকুড়া জেলা আরটিও দফতর বৈঠকে বসে। কিন্তু সমস্যা মেটেনি। এরই মধ্যে মঙ্গলবার থেকে সরাসরি বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এই অবস্থায় বাঁকুড়ার দিক থেকে যাওয়া বাসগুলি যাত্রী নিয়ে রাইপুরের ফুলকুসমার চামট্যাবাদ মোড় পর্যন্ত গিয়ে ফিরে আসছে। সূত্রের খবর, ঝাড়গ্রামের বাসগুলিও শিলদা পর্যন্ত যাতায়াত করছে। স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, চামট্যাবাদ ও শিলদার দূরত্ব প্রায় তেরো কিলোমিটার। যাত্রীরা ওই রাস্তা ট্রেকারে যাতায়াত করছেন।

ব্যবসার কাজে প্রায় দিনই বাসে ঝাড়গ্রাম যাতায়াত করেন বাঁকুড়ার বাসিন্দা সমীর পান্ডে। তিনি বলেন, “বারবার বাস পরিবর্তন, মাঝে ট্রেকারে যাতায়াত করতে গিয়ে প্রতিদিন আমরা ভুগছি। সময়ও যেমন নষ্ট হচ্ছে, খরচও হচ্ছে বেশি। প্রশাসন দ্রুত সমস্যা মেটাতে উদ্যোগী হোক।’’ শিলদার বাসিন্দা শ্রেয়সী মণ্ডল বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। তিনি বলেন, ‘‘দু’দিকের বাসগুলি কিছুটা দূরে থেমে যাচ্ছে। ঠিক যেন ‘নো ম্যানস ল্যান্ড’ পেরিয়ে দু’দিকের বাস ধরতে হচ্ছে।’’ ঝাড়গ্রামের বাসিন্দা পূর্ণেন্দু সরকার, অমিত মাইতিরা রাইপুর ব্লকের বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষকতা করেন। সঙ্কটে তাঁদের মতো অনেকেই।

দুই জেলার বাস মালিকদের মধ্যেও চাপান-উতোর শুরু হয়েছে। দিলীপবাবুর অভিযোগ, ‘‘বাঁকুড়ার বাস মালিক সমিতির পক্ষ থেকে ঝাড়গ্রামের বাসগুলির যাত্রীদের নামিয়ে প্রায়ই খালি বাস ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ওরা নিয়মিত হয়রানি শুরু করায় আমরাও একদিন যাত্রী নামিয়ে খালি বাস ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছিলাম।’’ অন্য দিকে, বাঁকুড়া বাস মালিক কল্যাণ সমিতির সম্পাদক সুকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘ঝাড়গ্রাম বাসস্ট্যান্ডে আমাদের দু’টি বাস থেকে যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে বাসকর্মীদের ঝাড়গ্রামে ঢুকতে বারণ করে হুমকি দেওয়া হয়। তার পর থেকেই বাস যাচ্ছে না।’’

তাঁর দাবি, সমস্যা মেটাতে চেয়ে ঝাড়গ্রাম জেলার বাস মালিকদের সঙ্গে একাধিকবার তাঁদের ফোনে কথা হয়েছে। কিন্তু তাঁদের তরফেই কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি।’’ অন্য দিকে, দিলীপবাবুর পাল্টা দাবি, ‘‘ওঁরাই সমস্যা মেটাতে আগ্রহী নয়।’’ রাইপুর পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি রাজকুমার সিংহ বলেন, “খুবই ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন যাত্রীরা। সমস্যা যা-ই থাকুক, তা মিটিয়ে নিয়ে অবিলম্বে দুই জেলার মধ্যে বাস চলাচল শুরু করা দরকার। বৃহত্তর স্বার্থে দু’পক্ষকেই সুষ্ঠু সমাধান বার করতে হবে।”

অন্য বিষয়গুলি:

Jhargram Bankura Bus Service
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy