Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

২০ জনে কি বাস চলবে, চিন্তায় মালিক

মুখ্যমন্ত্রীর বাস চালানোর ঘোষণায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন জেলার বাস মালিকেরা

সিউড়ির বেসরকারি বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকা বাসে জীবাণুনাশক স্প্রে করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়

সিউড়ির বেসরকারি বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকা বাসে জীবাণুনাশক স্প্রে করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০১ মে ২০২০ ০৪:৪৩
Share: Save:

মুখ্যমন্ত্রীর বাস চালানোর ঘোষণায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন জেলার বাস মালিকেরা। ২০ জন যাত্রী নিয়ে কী করে বাস চালাবেন, ভেবে পাচ্ছেন না তাঁরা।

মুখ্যমন্ত্রী গ্রিন জোন হিসেবে চিহ্নিত এলাকায় সোমবার থেকে লকডাউনের আওতার বাইরে বেশ কিছু ক্ষেত্রে ছাড়ের পাশাপাশি আন্তঃজেলা বাস পরিবহণ চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বাসে ২০ জনের বেশি যাত্রী নেওয়া যাবে না বলে লক্ষ্যমাত্রাও বেঁধে দেওয়া হয়েছে। ওই ঘোষণা ঘুম ছুটিয়ে দিয়েছে বাস মালিকদের। সেই নিয়ম মেনে বাস চালাতে হলে ‘ঢাকের দায়ে মনসা বিকিয়ে’ যাবে বলে তাঁদের অভিমত।

জেলা বাস মালিক সমিতি সূত্রেই জানা গিয়েছে, বীরভূমে বাস ও মিনিবাস রয়েছে প্রায় ৮০০টি। তার মধ্যে জেলার ভিতরে চলাচল করে প্রায় ৬০০টি। ২০ কিমি রুটের একটি বাস দিনে চার বার যাওয়া-আসা করতে পারে। ২০ কিমির জন্য যাত্রীপিছু ভাড়া প্রায় ২০ টাকা। সেই হিসেবে ১৬০০ টাকা পাওয়া যেতে পারে।

অন্য দিকে, চালক, কন্ডাক্টর এবং দু’জন খালাসিকে খাওয়া খরচ সহ দৈনিক বেতন বাবদ দিতে হয় প্রায় ৫০০ টাকা। ২০ কিমিতে দৈনিক ডিজেল লাগে গড়ে ১৭০০ টাকার। টায়ার ভাড়া এবং সংগঠনের চাঁদা বাবদ খরচ পড়ে প্রায় ৪০০ টাকা। তার পরেও অন্য খরচ রয়েছে।

এই হিসেব করেই ঘুম ছুটেছে বাস মালিকদের। জেলার মধ্যে ৪টি বাস চলাচল করে মহম্মদবাজারের অরিজিৎ হালদারের। ২টি বাস রয়েছে ময়ূরেশ্বরের কবিরুল শেখের। তাঁরা বলছেন, ‘‘ওই শর্ত মেনে বাস চালাতে হলে ঢাকের দামে মনসা বিক্রি হয়ে যাবে।’’ তার পরেও সমস্যা রয়েছে। লকডাউন চলাকালীন সময়ে বহু বাসের বিমা এবং ট্যাক্সের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গিয়েছে। বাস চালাতে হলে আগে বিমা এবং ট্যাক্সের টাকা জমা দেওয়া জরুরি। বিমা বাবদ জমা দিতে হবে ৫৫/৬৫ হাজার টাকা। চার মাসের ট্যাক্স বাবদ দিতে হবে ১৫০০/ ৩৫০০ টাকা। সাঁইথিয়া জেলা বাসমালিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি পতিতপাবন দে জানান, দীর্ঘ দিন বাস বন্ধ থাকায় অধিকাংশ মালিকের এই মুহূর্তে বিমা এবং ট্যাক্সের টাকা জমা দেওয়ার সামর্থ্য নেই। অনেকে ফাইন্যান্সের কিস্তিও দিতে পারেননি।

নির্দেশিকা অনুসারে বাস চালাতে গিয়ে যাত্রীদের ক্ষোভের মুখে পড়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দিতে পারছেন না বাস মালিকেরা। স্বাধীন সাধু, প্রণতি দে মনে করছেন, ‘‘ওই নির্দেশ অনুসারে বাস চালাতে গেলে ঝামেলা অনিবার্য। যদি কোনও ক্ষেত্রে ১৯ তম যাত্রীর পরে স্বামী-স্ত্রী দু’জন অথবা দুই সন্তান সহ মা আসেন তা হলে আমরা কাকে ফেলে কাকে নেব?’’ বীরভূম ডিস্ট্রিক্ট বাস ও মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আজিম বলছেন, ‘‘নির্দেশ অনুসারে বাস চালাতে হলে বাসমালিকদের সমস্যার মধ্যে পড়তে হবে। বিষয়টি জেলা পরিবহণ দফতরকে জানাব।’’

তবে ওই ঘোষণায় বাসকর্মীদের মুখে হাসি ফুটেছে। জেলার বাসকর্মীরা সাধারণত ‘নো ওয়ার্ক, নো পে’ চুক্তিতে কাজ করেন। লকডাউনের জেরে বাস বন্ধ থাকায় তাঁদের জীবিকা বিপন্ন হয়ে পড়েছিল। বাস চালু হওয়া ঘোষণায় তাঁরা এ দিন থেকেই টায়ারের হাওয়া, যন্ত্রাংশ পরীক্ষা করতে শুরু করে দিয়েছে। কীর্ণাহারের প্রশান্ত মেটে, ধীরাজ পালরা জানান, বাসের উপরেই নির্ভর করে সংসার চলে। এত দিন খুব দুশ্চিন্তায় ছিলেন। সেটা ঘুচতে চলেছে।

জেলা পরিবহণ আধিকারিক মৃন্ময় মজুমদার বলেন, ‘‘সরকারি নির্দেশ সকলকেই মানতে হবে। তবে বাস মালিকদের সমস্যার বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসন স্তরে আলোচনা হতে পারে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

green zone mamata banerjee lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy