Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Bishnupur

WB Municipal Election 2022: বিষ্ণুপুরের প্রতিটি অলিন্দে জেগে আছে অনন্ত জীবনের সংরাগ, বাংলার নিজস্ব টেরাকোটার কাব্যগাথা

সময়টা ১৯৪০, বিষ্ণুপুরের তৎকালীন মহকুমাশাসক যতীন্দ্রনাথ মিত্র মুস্তাফি লিখে ফেললেন মাত্র ১৬ পৃষ্ঠার একটি পুস্তিকা ‘দ্য রুইনস অব বিষ্ণুপুর’। 

রাসমঞ্চ।

রাসমঞ্চ। —নিজস্ব চিত্র।

অরিজিৎ চক্রবর্তী
অরিজিৎ চক্রবর্তী
শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৬:৫৭
Share: Save:

রূপ-লাবণ্যের বহতা ধারা আমাদের ফেলে আসা দিনের সৌকর্যকে মোহময় করেছে। ধর্মীয় স্থাপত্য ও শিল্পকলার রূপকে রসিক খুঁটিয়ে দেখলে জীবনবোধের এক তন্ময় জগৎ গড়ে ওঠে। বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুর আমার কাছে আজও সেই বিস্ময়ের অবলোকনে অন্তর-বাহির পরম্পরাকে ছুঁয়ে যায়। তাই পেরিয়ে আসা কয়েক শতকে মল্লরাজাদের পর্যায়ক্রমিক উন্মেষ নিরীক্ষণ করলেই সমাজ-সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের হদিশও অনুভূত হয়। শিল্পরূপের খোঁজে তৈরি হয় মল্লভূম জনপদের আত্মপরিচয়ের কাহিনি।

সময়টা ১৯৪০, বিষ্ণুপুরের তৎকালীন মহকুমাশাসক যতীন্দ্রনাথ মিত্র মুস্তাফি লিখে ফেললেন মাত্র ১৬ পৃষ্ঠার একটি পুস্তিকা ‘দ্য রুইনস অব বিষ্ণুপুর’। ছ’টি অধ্যায়ে বিভক্ত এই বইটিতে স্থানীয় শিল্প, বাঁধগুলির বিবরণ, মন্দির-সহ কামানের বিবরণ, তখনকার জনজীবন ইত্যাদি লিপিবদ্ধ করেছিলেন তিনি। ১৯৪০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি জন আর্থার সাহেবের হাতে প্রকাশিত হয়েছিল বইটি। পরবর্তী সময়ে বিষ্ণুপুরের ইতিহাস রচনার কাজে যার গুরুত্ব অপরিসীম।

শহরে ঢোকার পথে। কৃষ্ণবাঁধের কাছে।

শহরে ঢোকার পথে। কৃষ্ণবাঁধের কাছে। —নিজস্ব চিত্র।

এক সময় বিষ্ণুপুর মল্লভূমির রাজধানী মল্লভূম হিসেবে চিহ্নিত হত যার অন্তর্ভুক্ত ছিল সমগ্ৰ বাঁকুড়া, মেদিনীপুরের এক ব্যাপক অঞ্চল এবং বর্ধমান। এ ছাড়া এটি ছিল প্রাচীন বঙ্গীয় শিল্প ও সংস্কৃতির অন্যতম শ্রেষ্ঠ কেন্দ্র। গ্ৰামীণ হস্তশিল্প, ধাতুশিল্প, মৃৎশিল্প, বালুচরি শিল্পের জন্য বিষ্ণুপুর আজও বিখ্যাত। এ ছাড়া এখানে নিজস্ব গায়কী পদ্ধতির উদ্ভব হয়েছিল যা বিষ্ণুপুর ঘরানা নামে আজও প্রসিদ্ধ। ভাবতে অবাক লাগে একটি ছোট্ট জনপদ বিষ্ণুপুরের শিরা-উপশিরা জুড়ে অদ্ভুত ভাবে জড়িয়ে আছে এই ইতিহাস আর সৃজনের স্পন্দিত মূর্ছনা। সমগ্ৰ পশ্চিমবঙ্গের ভিতর একমাত্র এই বিষ্ণুপুরেই এত অসংখ্য বৈচিত্র্যময় মন্দির স্থাপত্যরীতির সমাবেশ ও সমারোহ।

তবু কোথাও যেন আজকের বিষ্ণুপুর সময়ের জাগতিক উৎকর্ষতায় কিছুটা পিছিয়ে। পর্যটন শিল্পের যে বিপুল সম্ভাবনা এই শহরকে নিয়ে হওয়া দরকার ছিল, তা এখনও হয়ে ওঠেনি। যে রকম ভারতের অন্যান্য ঐতিহ্যমন্ডিত ঐতিহাসিক শহরে হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে হাম্পি, অজন্তা ইত্যাদি নাম মনে আসে। এখানকার রাসমঞ্চ, জোড়বাংলা, মদনমোহন ইত্যাদি মন্দিরগুলি টেরাকোটা শিল্পের জন্য আজও ট্যুরিস্ট, গবেষক ও শিল্পীদের কাছে বিস্ময়ের।

বর্তমানে লালবাঁধের সংস্কার, পোড়ামাটির হাট বিষ্ণুপুরের মুকুটে পালক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। রাস্তাঘাট আগের তুলনায় মসৃণ ও পরিচ্ছন্ন হয়েছে। অলিতে-গলিতে জ্বলেছে আলোর রোশনাই। তবু বিষ্ণুপুরকে নিয়ে আরও অনেক কিছু ভাবার আছে। শহরের অনতিদূরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে তৈরি অ্যারোড্রামটি নিয়ে নতুন কিছু ভাবা দরকার। কারণ, পর্যটকদের কাছে এই জঙ্গলঘেরা এলাকাটি খুবই পছন্দের। এখানে প্রশাসনিক উদ্দোগে জঙ্গল সাফারি, প্যারাগ্লাইডিংয়ের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। রাসমঞ্চে লাইট-অ্যান্ড-সাউন্ডের ভাবনাও ভাবা যায়।

কিন্তু পোড়ামাটির তৈরি জিনিসপত্র, লন্ঠন, বালুচরি এবং পর্যটন ছাড়াও তরুণ প্রজন্মের কর্মসংস্থানের কথা মাথায় রেখে বিষ্ণুপুরস্থিত ইন্ডারস্টিয়্যাল বেল্ট দ্বারিকা অঞ্চলটি নিয়ে ভাবা দরকার। যা আজ ডগ্নপ্রায় আলোহীনতায় আক্রান্ত। বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রিগুলো ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে।

আসলে আমার শহরের কাছে আমার প্রত্যাশা অনেক। কারণ এই শহরটার প্রতিটি অলিন্দে জেগে আছে অনন্ত জীবনের সংরাগ ! বাংলার নিজস্ব টেরাকোটা শৈলীর কাব্যগাথা।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy