ঐতিহাসিক পুরশহর বিষ্ণুপুর প্রায় হাজার বছরের ইতিহাস বুকে নিয়ে নিরবে দাঁড়িয়ে বিকাশের প্রতীক্ষায়। বন বিষ্ণুপুরের নগরায়ন শুরু হয়েছিল সেই কবে আচার্য প্রভুর সাংস্কৃতিক বিজয়ের পর থেকে। সেই নগরায়নের পিছনে ছিল মন্দির সংস্কৃতির প্রভাব। দেবার্চনার জন্য প্রয়োজনীয় নতুন বস্ত্র, সিল্ক বস্ত্রের জন্য তন্তুবায়, কাঁসার বাসনপত্র, ঘণ্টা ইত্যাদির জন্য কামার, শঙ্খ ও শাঁখার জন্য শাঁখার-সহ অন্যান্য কুটিরশিল্প জনজাতি অধ্যুষিত জনপদ গড়ে উঠতে থাকে বিষ্ণুপুরে। সেই পুরাতন বিষ্ণুপুরের বেড়ে ওঠা ছিল পরিকল্পনাহীন। আজকের কলা নগরী বিষ্ণুপুর কেমন আছে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে চোখে পড়ে যে সমস্যাগুলি—
কুটিরশিল্পীদের ঘন জনবসতি মাধবগঞ্জ, কৃষ্ণগঞ্জ, শাঁখারী বাজার, বৈষ্ণব পাড়া মনোহরতলা-সহ শহরের প্রায় ৮০ ভাগ রাস্তা অপ্রশস্ত।
ইতিহাসের আকর ছড়িয়ে আছে এই সব এলাকায়। বাইরের পর্যটক যখন গাড়ি নিয়ে এ সব এলাকায় পরিদর্শনে আসেন তখন এই বেহাল দৃশ্য দেখে হতাশ হন অনেকেই।
শহরের মূল জীবন প্রবাহিত হয় যে সড়কগুলি ধরে তার মধ্যে অন্যতম রসিকগঞ্জ থেকে গোপালগঞ্জ বোলতলা হয়ে চকবাজার সড়ক। এই সড়কের মূল সমস্যা যানজট। যানজটে নাকাল হন শহরবাসী শুরু করি পর্যটকেরা। কিন্তু কেন এমনটা হয়? কারণ এই শহরের নতুন বিস্তার পরিকল্পনাহীন। নির্মাণের সময় যে অনুমোদিত নকশা তার প্রয়োগ হয় না। রাস্তার অনেকখানি দখল করে নেয় বাড়ি।
শহরে পানীয় জল সরবরাহের একটি ব্যবস্থা চালু আছে— দিনান্তে দু’বার। উপভোক্তার সংখ্যার তুলনায় তা যে যথেষ্ট নয় তা বোঝা যায় নিয়মিত জল কলহের চিত্রপট দেখে। বাড়িতে বাড়িতে জল সরবরাহের প্রকল্প বেশ কয়েক বছর পূর্বে শুরু হলেও এখনও সব বাড়িতে তা পৌঁছয়নি। সরবরাহও নিয়মিত নয়। এ বিষয়ে উপভোগ তাদের ক্ষোভ আছে যথেষ্ট । এত দুর্লভ পানীয় জল অপচয়ের দৃশ্যও চোখে পড়ে এ শহরের যত্রতত্র। কলের মুখ খোলা, পানীয় জল নর্দমা বেয়ে ডোবায় পড়ছে এই ছবি দেখা যায় প্রায়শই। শহর জুড়ে নাগরিক চেতনার অভাব সুস্পষ্ট।
নিকাশি ব্যবস্থা দুর্বল। নাগরিক সুযোগ-সুবিধা অপ্রতুল হওয়াতে শহরের নাগরিকগণ অনেকটা অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন। মানিয়ে নিয়েছেন এই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে সঙ্গে। প্রাচীন জল নিকাশি যে প্রণালী সেগুলির উপর নির্মাণ হয়ে যায় কংক্রিটের প্রাসাদ। বর্ষার জল থমকে দাঁড়িয়ে প্লাবিত হয় অগোছালো ভাবে বেড়ে ওঠা পল্লিগুলি। পুরআইন অনুযায়ী পুরসভাকে এ বিষয়ে আরও কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ভবিষ্যতের কথা ভেবে শহরের জল নিকাশের জন্য একটি মেগা ড্রেনেজ প্রজেক্ট গ্রহণ করতে হবে।
পর্যটনের শহর বিষ্ণুপুরে দেশ-বিদেশ থেকে পর্যটকেরা আসেন। অথচ এই শহরের পর্যটন কেন্দ্রগুলির আশেপাশে নেই প্রয়োজনীয় শৌচালয়। সুলভ শৌচালয় নির্মাণ ও সেগুলি সঠিক পরিচালনার ব্যবস্থা করে সমস্যা নিরসনের চেষ্টা পুরসভাকে করতে হবে।
কঠিন বর্জ্যের চাপ ক্রমশই বাড়ছে পুরসভার উপর। কিন্তু পুরসভার বর্জ্য ফেলার নির্দিষ্ট কোন বড়সড় ক্ষেত্র না থাকায় সমস্যাটি ক্রমেই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে। হাসপাতাল চত্বরে বর্জ্যের পাহাড় আজ বেশ বড় হয়ে উঠেছে। প্রয়োজনে সরকারি জমি জোগাড় করে অথবা করে উপযুক্ত ডাম্পিং গ্রাউন্ড তৈরি করতে হবে। আধুনিক পদ্ধতিতে সেই বর্জ্যকে রূপান্তরিত করে কাজে লাগানোর পথেও হাঁটতে হবে পুরসভাকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy