বেড়সায় স্বাস্থ্যদল। নিজস্ব চিত্র
কয়েকদিন ধরে জ্বর ছাড়ছিল না বছর আটেকের ছেলেটির। নিয়ে যাওয়া হয়েছিল হাতুড়ে ও এক গুণিনের কাছে। পরে ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আনা হলে, ‘রেফার’ করা হয় পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে। সেখানে মঙ্গলবার গভীর রাতে মৃত্যু হয় পুরুলিয়ার বাঘমুণ্ডি থানার বাড়েরিয়া গ্রামের বিষ্ণু শিকারি নামে ওই ছেলেটির। মৃত্যুর কারণ হিসেবে ‘ডেথ সার্টিফিকেট’-এ এনসেফ্যালাইটিসের উল্লেখ রয়েছে। খবর পেয়ে এলাকায় সচেতনতা প্রচার করেছে ‘বিজ্ঞান মঞ্চ’ ও স্বাস্থ্য দফতর।
ছেলেটির পরিবার সূত্রে জানা যায়, কিছু দিন আগে করম পরবে বিষ্ণু বলরামপুরের বেড়শা গ্রামে মামাবাড়িতে যায়। সেখানেই তার জ্বর আসে। ছেলেটির মামিমা সীমা শিকারি জানান, প্রথমে এক গ্রামীণ ডাক্তার ও পরে এক গুণিনের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। গুণিন ডাক্তার দেখাতে বলেন। বিষ্ণুর বাবা বিকাশ শিকারি বলেন, ‘‘ছেলের জ্বর এসেছে শুনে ওকে বাড়েরিয়ায় নিয়ে আসি। জ্বর ছাড়ছিল না। সঙ্গে প্রচণ্ড কাঁপুনি, অনেকটা খিঁচুনির মতো। নেতিয়ে পড়ছিল দেখে রবিবার বাঘমুণ্ডি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাই। সেখান থেকে চিকিৎসকেরা পুরুলিয়া সদরে ‘রেফার’ করেন। সে দিনই পুরুলিয়ায় ভর্তি করি। মঙ্গলবার ছেলেটা চলে গেল!’’
এ দিকে, একই উপসর্গ নিয়ে বেড়শা গ্রামের আর একটি ছেলেকেও পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার বেড়শা গ্রামে পৌঁছন বিএমওএইচ আবীর চন্দ্র-সহ এএনএম ও আশাকর্মীরা। তাঁরা বিভিন্ন বাড়িতে জ্বরে কেউ আক্রান্ত কি না খোঁজ নেন। গ্রামে কয়েকটি পরীক্ষাও করা হয়। সেখানে পৌঁছন পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের বলরামপুর শাখার কর্মীরাও। প্রশ্ন উঠছে, যে ছেলেটির মৃত্যু হয়েছে, তাকে এনসেফ্যালাইটিসের টিকা দেওয়া হয়েছে কি না।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে যদিও জানা যায়, গত ২০১৫ সালে বিশেষ শিবির করে ন’মাস থেকে ১৫ বছর বয়সের সমস্ত নাবালককেই এনসেফ্যালাইটিসের টিকা দেওয়া হয়েছিল। সেই মোতাবেক মৃত ছেলেটিরও টিকা পাওয়ার কথা। যদিও বিষ্ণুর বাবা বিকাশের বক্তব্য, ‘‘স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ওই টিকা দেওয়া হয়েছিল কি না, জানা নেই।’’ জেলার উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গুরুদাস পাত্র বলেন, ‘‘ওই ছেলেটিকে তখন ‘জেই’ (জাপানি এনসেফ্যালাইটিস)-র টিকা দেওয়া হয়েছিল কি না, খতিয়ে দেখা হবে। বলরামপুরের একটি গ্রামের ওই ছেলেটির জ্বর হয়েছিল বলে শুনেছি। দু’জায়গাতেই বাড়ি-বাড়ি আর কারও জ্বর রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। বেড়শা গ্রামের যে ছেলেটিকে একই উপসর্গ নিয়ে বুধবার ভর্তি করা হয়েছে, তার ‘সেরিব্রো স্পাইনাল ফ্লুইড’ সংগ্রহ করা হয়েছে। রক্তের নমুনাও সংগ্রহ হয়েছে। ছেলেটি কোনও ভাইরাসে আক্রান্ত কি না, তা এই পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যাবে।’’
পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের জেলা সম্পাদক নয়ন মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিষ্ণুকে গুণিনের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বলে আমরা খবর পেয়েছি। বিষ্ণুর বাবা ও মামাবাড়ির সদস্যেরাও তা স্বীকার করেছেন।’’ বিজ্ঞান মঞ্চের বলরামপুরের কর্মী দিলীপ ঝা-ও জানান, গ্রামে কোনও আশাকর্মী নেই বলে বাসিন্দারা জানিয়েছেন। কিন্তু জ্বরে ওঝার কাছে নিয়ে যাওয়া মানে যে আক্রান্তকে আরও সমস্যায় ফেলে দেওয়া, তা গ্রামে গিয়ে মানুষজনকে বোঝানো হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy