Advertisement
২৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Bankura

আশ্রমের সামনে রক্তাক্ত দেহ

প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, দোতলায় খুন করা হয়েছে। তার পরে, সিঁড়ি দিয়ে টানতে টানতে দেহ আনা হয় নীচে। মূল দরজার নীচের ফাঁকা অংশ দিয়ে টেনে বের করে দেহ ফেলে দেওয়া হয় সামনের ফাঁকা জায়গায়।

তদন্তে: আশ্রম চত্বরে পড়ে রক্ত। (ইনসেটে) নিহত সোমনাথ। নিজস্ব চিত্র।

তদন্তে: আশ্রম চত্বরে পড়ে রক্ত। (ইনসেটে) নিহত সোমনাথ। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা 
শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২০ ০৫:১৯
Share: Save:

যুবকের রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার হল একটি নির্মীয়মাণ আশ্রমের সামনে থেকে। বাঁকুড়া শহরের কাছে, গন্ধেশ্বরী নদী সংলগ্ন কেশিয়াকোল এলাকায় শুক্রবার সকালের ঘটনা। পুলিশ জানিয়েছে, দেহটি সোমনাথ দে-র (৩৫) বাঁকুড়া শহরের রক্ষাকালীতলার বাসিন্দা। তিনি বাড়ির কাছেই একটি পান-গুমটি চালাতেন। বাঁকুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) বিবেক বর্মা বলেন, “ঘটনার তদন্ত চলছে। মৃতদেহের মাথায় ক্ষত রয়েছে। সেটি বন্দুকের গুলির না ধারালো অস্ত্রের, সেই ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করছি আমরা।” এ দিন সন্ধ্যায় মৃতের দাদা শঙ্কর দে বাঁকুড়া সদর থানায় খুনের মামলা দায়ের করেছেন।

মা বেণুদেবী জানান, বৃহস্পতিবার রাত ৯টা নাগাদ গুমটি বন্ধ করে মোটরবাইক নিয়ে বেরিয়েছিলেন সোমনাথ। আর ফেরেননি। তিনি বলেন, “রাতে অনেক বার ফোন করেছি। রিং হয়েছে। কিন্তু ধরেনি। ভেবেছিলাম, কোথাও হয়তো কাজে আটকে গিয়েছে। সকালে লোকের মুখে খবর পেলাম, ওকে খুন করা হয়েছে।” তিনি দাবি করেছেন, বাড়ি থেকে বেরনোর সময়ে সোমনাথের হাতে চারটি আংটি ও দু’কানে সোনার দুল ছিল। এ ছাড়া, গলায় ছিল রুপোর হার। এ দিন উদ্ধার হওয়া দেহে সেগুলি ছিল না। সোমনাথের মোটরবাইক ও স্মার্টফোনের হদিসও মেলেনি। বেণুদেবী বলেন, “আমাদের মনে হচ্ছে, গয়না, মোটরবাইক আর টাকাকড়ি ছিনিয়ে নেওয়ার জন্যই খুন করা হয়েছে। পুলিশ সব দিক খতিয়ে তদন্ত করে দুষ্কৃতীদের ধরুক।”

কেশিয়াকোলের বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, বছর চারেক আগে ওই আশ্রম নির্মাণ শুরু হয়েছিল। বেশ কিছু দিন ধরে কাজ বন্ধ রয়েছে। এলাকার কিছু লোকজনের অভিযোগ, নির্মীয়মাণ আশ্রমে রাতে নেশার ঠেক বসে। অনেক রাত পর্যন্ত লোকজনের যাতায়াত লেগে থাকে। পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের ধারণা, নেশার ঠেকে গোলমালের জেরে এই ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। জায়গাটির তিরিশ মিটারের মধ্যে একটি বাড়ি আছে। তবে কেউ সেখানে থাকেন না। এলাকাটি বেশ শুনশান। একশো মিটার দূরে বেশ কিছু বাড়ি রয়েছে। সেখানে কেউ রাতে গুলি চলার আওয়াজ পাননি বলে দাবি করেছেন।

শুক্রবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, নির্মীয়মাণ আশ্রম চত্বরে পড়ে রয়েছে দিশি মদের বোতল। চারপাশে পাঁচিল আছে। তবে মূল দরজার ডান দিকে পাঁচিলের অনেকটাই ভাঙা। লোকজন সেখান দিয়ে সহজেই ভিতরে ঢুকতে পারে। মূল দরজার নীচে ফাঁক আটকাতে লাগানো জালের অনেকটা কাটা। সেখান দিয়েও গলে আসা-যাওয়া করা যায়। এ দিন আশ্রমের তরফে কারও দেখা মেলেনি। মূল দরজাও ছিল তালাবন্ধ। পুলিশকর্মীরাও দেওয়াল টপকেই ভিতরে ঢুকে তদন্ত করছিলেন।

নির্মীয়মাণ আশ্রমের নীচের তলায় থাকার মতো ঘর গড়া হয়েছে। দোতলা মন্দিরের আদলে গড়া হচ্ছে। আশ্রম প্রাঙ্গণ থেকে মন্দিরে ওঠে গিয়েছে সিঁড়ি। ঘটনাস্থলে দেখা গেল, তদন্তে আসা ফরেন্সিক দল আশ্রম চত্বরের ঘাস ও মাটির নমুনা সংগ্রহ করছেন। সিঁড়িতে রক্তের দাগ রয়েছে। দোতলায় উঠে দেখা গেল, মেঝেতেও চারদিকে রক্তের দাগ।

প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, দোতলায় খুন করা হয়েছে। তার পরে, সিঁড়ি দিয়ে টানতে টানতে দেহ আনা হয় নীচে। মূল দরজার নীচের ফাঁকা অংশ দিয়ে টেনে বের করে দেহ ফেলে দেওয়া হয় সামনের ফাঁকা জায়গায়। পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন বিকেল পর্যন্ত এই ঘটনায় কাউকে আটক বা গ্রেফতার করা হয়নি। তবে সোমনাথের কয়েকজন বন্ধুকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। পুলিশ জানাচ্ছে, আশ্রমটি কাদের তা জানার চেষ্টা চলছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Bankura Corpse
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy