এই বাড়ির সামনেই হয় বোমাবাজি (চিহ্নিত)। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী
লোকসভা ভোটের পর থেকেই ফের রাজনৈতিক হিংসায় তপ্ত পাড়ুই।
কয়েকদিন আগেই পাড়ুই থানার জিনাইপুর ও গদাধরপুর গ্রাম তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল। সোমবার রাতে সিউড়ি ২ নম্বর ব্লকের পাড়ুই থানার অন্তর্গত ইমাদপুর গ্রামে তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতির বাড়ি লক্ষ্য করে বোমাবাজির অভিযোগ উঠেছে বিজেপি-র বিরুদ্ধে। ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়েছে। বিজেপি অভিযোগ অস্বীকার করেছে। সোমবার রাতেই তৃণমূল এবং বিজেপির বিবাদের জেরে বোমাবাজিকে ঘিরে উত্তেজনা ছড়ায় দুবরাজপুর থানার খোসনগর গ্রামে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাতেই ঘটনাস্থলে যায় বিশাল পুলিশ বাহিনী।
ইমাদপুর গ্রামে বাড়ি তৃণমূলের অবিনাশপুর অঞ্চলের সভাপতি রাজু মুখোপাধ্যায়ের। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার বেশি রাতে গ্রামের ব্রাহ্মণপাড়ায় রাজুর বাড়ি লক্ষ্য করে আচমকাই বোমাবাজি শুরু করে কয়েক জন দুষ্কৃতী। সভাপতির বাড়ি লক্ষ্য করে মোট তিনটি বোমা ফাটানো হয়েছে। বাড়ির জানলার পাশে, দরজার গেটে এবং দেওয়ালে একটি করে বোমা ফাটানো হয়েছে বলে অভিযোগ। কোনও বড় ক্ষয়ক্ষতি না হলেও ঘটনায় আতঙ্কও ছড়িয়েছে গ্রামে। মঙ্গলবার ইমাদপুর গ্রামে ঢুকতেই দেখা গেল চারদিকে থমথমে পরিবেশ। অঞ্চল সভাপতির বাড়ির পাশে ও রাস্তায় পড়ে রয়েছে পোড়া বোমার সুতলি। বাড়িতে বোমা ছোড়ার দাগও স্পষ্ট।
তৃণমূলের দাবি, সোমবার রাতে বোলপুর-সিউড়ি রাস্তার দিক থেকে মাঠের পথ ধরে ইমাদপুর গ্রামে ঢুকেছিল বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। তৃণমূল নেতা রাজুর দাবি, ‘‘বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীরা আমাকে প্রাণে মেরে ফেলার ষড়যন্ত্র করেছিল। তাই রাতের অন্ধকারে আমার বাড়ি লক্ষ্য করে বোমাবাজি করেছে। পুরো ঘটনাটি পুলিশকে জানিয়েছি।’’ সিউড়ি ২ ব্লক তৃণমূলের সভাপতি নুরুল ইসলাম বলেন, ‘‘পশ্চিমবাংলার সর্বত্র বিজেপি অশান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছে। একই ভাবে ইমাদপুর গ্রামে রাতের অন্ধকারে আমাদের অঞ্চল সভাপতির বাড়ি লক্ষ্য করে বোমাবাজি করেছে। যারা এই ঘটনার সাথে যুক্ত, তাদের বিরুদ্ধে পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।’’ তৃণমূলের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে বিজেপি। পাড়ুইয়ের বিজেপি নেতা শেখ সামাদের পাল্টা দাবি, ‘‘গোটা ঘটনা শাসক দলের চক্রান্ত। বিজেপি-কে ফাঁসানোর জন্য এ সব নিজেরাই করেছে। ঘটনার সঙ্গে বিজেপির কোনও যোগ নেই। উল্টে তৃণমূলের লোকজনেরাই ওই গ্রামে বিজেপি-র বেশ কিছু কর্মীর বাড়িতে লুটপাট ও ভাঙচুর চালিয়েছে।’’
ঘটনার পর থেকেই এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। নতুন করে আর যেন গ্রামে অশান্তি না চলায়, সে বিষয়টিও নজরে পুলিশকর্তারা নজরে রাখছেন। পুলিশ সূত্রের খবর, বোমাবাজির ঘটনায় জনা পাঁচ-ছয়েকের নামে লিখিত অভিযোগ হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে যুক্ত সন্দেহে দেবনাথ ওরফে বাপ্পা মুখোপাধ্যায় এবং পতিত পাবন ডোম নামে দু’জনকে গ্রেফতার করেছে পাড়ুই থানার পুলিশ।
দুবরাজপুরের খোসনগরও তৃণমূল-বিজেপি দ্বন্দ্বে তেতে রয়েছে। দু’পক্ষের তরফে লিখিত অভিযোগ না হলেও উত্তেজনা ছড়ানোর জন্য একে অন্যকে দায়ী করেছে যুযুধান দুই রাজনৈতিক দল। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার রাতে ওই গ্রামে একটি বৈঠক করছিলেন তৃণমূলের স্থানীয় নেতারা। অভিযোগ, সেই সময় হাতের নাগালে পেয়ে তৃণমূলের কিছু কর্মী স্থানীয় এক বিজেপি নেতার ছেলেকে হেনস্থা করেন। ওই ঘটনাকে ঘিরে দু’দলের প্রথমে বিবাদ বাধে। পরে হাতাহাতি ও গালিগালাজ শুরু হয়। তার পরই গ্রামের বাইরে বেশ কয়েকটি বোমা ফাটে।
খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ বাহিনী। বিজেপির জেলা সভাপতি রামকৃষ্ণ রায়ের দাবি, ‘‘কেন বিজেপি-কে এলাকার মানুষ ভোট দিয়েছেন, এই নিয়ে ক্ষোভ থেকেই এলাকায় সন্ত্রাস ছড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে শাসকদল। শুধু খোসনগরে নয়, আশপাশের গ্রামগুলিতে বোমা ফাটিয়েছে ওরা।’’ অভিযোগ অস্বীকার করে এলাকা অশান্ত করার দায় বিজেপি-র উপরেই চাপিয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। তবে এ ধরনের কোনও ঘটনার কথা তিনি শোনেননি বলে দাবি করেছেন তৃণমূলের দুবরাজপুর ব্লক সভাপতি ভোলানাথ মিত্র । গ্রামের মানুষ বলছে, ‘‘রাজনৈতিক দল যে যা করছেন করুন, কিন্তু আমরা এলাকায় শান্তি চাই। প্রশাসন সেটা দেখুক।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy