অদম্য: বিষ্ণুপুর শহরের পথে প্রচারপত্র বিলি করছেন বিষ্ণু বাউড়ি। নিজস্ব চিত্র
বাঁকুড়ার মন্দিরনগরী পথ ছেড়ে দিচ্ছে ‘বিষ্ণুর রথ’-কে। বৃদ্ধ রিকশাচালক তিন চাকায় চষে বেড়াচ্ছেন বিষ্ণুপুর। ছাউনিতে বাঁধা মাইক থেকে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ছে ভরসা। করোনা থেকে বাঁচতে-বাঁচাতে কী কী সতর্কতা নেওয়া দরকার, সেই সব লেখা প্রচারপত্র গুঁজে দিচ্ছেন মানুষের হাতে। কারও মুখে মাস্ক না থাকলে পরিয়েই ছাড়ছেন। তুঁতবাড়ি এলাকার ষাট পেরনো সেই বিষ্ণু বাউড়ির নিজের কথায়, ‘‘এক বছর ধরে দেখে যা বুঝেছি, মানুষ নিজে থেকে সচেতন না হলে করোনা থেকে মুক্তি নেই। আমি শুধু রিকশা চালাতেই জানি। এর মধ্যে দিয়ে যতটুকু পারি করার চেষ্টা করছি।’’
চেষ্টার কসুর তাঁর কখনও ছিল না। গত বছর পূর্ণ লকডাউনে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ত্রাণ নিয়ে পৌঁছচ্ছিল নিরুপায় মানুষজনের কাছে। বিনা পারিশ্রমিকে বিষ্ণুবাবু বয়ে নিয়ে গিয়েছেন সে সব। হঠাৎ বিপদে কাউকে হাসপাতাল নিয়ে যেতে প্রায়ই ডাক পড়ে তাঁর। কখনও দেখা যায়, রাস্তার ধারের দোকানে দুঃস্থ কাউকে ডেকে নিজের চায়ের ভাগ দিয়ে দিতে। স্ত্রী মামণি বাউড়ি বলেন, ‘‘এখন তো তা-ও এক রকম। তিন মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। একটা সময় গেছে, ঘরে চালটুকু নেই আর উনি অন্যের দরকারে সকাল থেকে বাড়িছাড়া। মানুষটার স্বভাবই এমন। বোঝার পরে কখনও বাধা দিইনি।’’
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসার পরে স্ত্রী গৃহ-সহায়িকার কাজ আবার হারিয়েছেন। দিন মজুর দুই ছেলের রোজগার প্রায় বন্ধ। স্ত্রী, ছেলে, বউমা, নাতি-নাতনি মিলিয়ে মোট ন’জনের সংসার আরও এক বার অনিশ্চয়তার সামনে। কিন্তু বিষ্ণুবাবুর মাথার ভিতর বেশি করে ঘুরত মানুষকে বোঝানোর গুরুত্ব। মুখে-মুখে সে কথা পৌঁছয় শহরের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কাছে। সংস্থার তরফে প্রসেনজিৎ দত্ত জানান, সচেতনতা প্রচারের কর্মসূচিতে তাঁরা এমন কাউকে চাইছিলেন, যিনি নিজে গুরুত্ব বুঝে কাজটা করবেন। বাড়ির জন্য কিছু নগদ টাকা, খাবার আর কাপড় দেওয়া হয়েছে বিষ্ণবাবুকে। দৈনিক ৫০ টাকায় ভাড়া নেওয়া রিকশায় তাঁদের ব্যানার টাঙিয়ে রবিবার থেকে সকাল-বিকেল বেরোচ্ছেন বিষ্ণুবাবু। শহর পেরিয়ে চলে যাচ্ছেন লাগোয়া গ্রামগুলিতেও।
অনেকেই তাঁর প্রচার-গাড়িকে বলছেন ‘বিষ্ণুর রথ’। পথ ছেড়ে দিচ্ছে পুলিশ। যেখানে যাচ্ছেন, মানুষ মাস্ক পরতে বাধ্য হচ্ছে। ভেঙে যাচ্ছে জটলা। চড়া রোদে হাঁপিয়ে কখনও জিরিয়ে নিচ্ছেন গাছতলায়। কখনও গৃহস্থ বেরিয়ে এসে দিচ্ছেন জল। সঙ্গে থাকা বোতলে ভরে নিচ্ছেন বিষ্ণুবাবু। বলেন, ‘‘এই সময় নিয়ম মেনে চলাটাই আসল।’’ জানান, টিকা নেওয়ার সুযোগ এখনও হয়নি। তবে নেওয়ার ইচ্ছা রয়েছে। মহকুমাশাসক (বিষ্ণুপুর) অনুমকুমার দত্ত বলেন, ‘‘বিষ্ণুবাবু সমাজের প্রকৃত বন্ধু। আমরা ওঁর
সঙ্গে আছি।’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy