বিষ্ণুপুরের ২ নম্বর ওয়ার্ডের শ্যামবাঁধ পাটপুর সাঁওতালপাড়ায়। নিজস্ব চিত্র
সন্তান নিয়ে পলিথিনের তাঁবুতে রাত কাটান মমতা ক্ষেত্রপাল। বৃষ্টির দাপট বাড়লে পাশের বাড়ির দরজায় কড়া নাড়তে হয়। অভিযোগ, বারবার তদ্বির করেও ‘সকলের জন্য বাড়ি প্রকল্প’ থেকে সুবিধা পাননি তৃণমূল পরিচালিত বিষ্ণুপুর পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মনোপাড়ার বাসিন্দা মমতাদেবী। তিনি একা নন, প্রকল্পের বাড়ি না পেয়ে ক্ষুব্ধ তাঁর মতো অনেকেই। গৃহহীনদের একাংশের অভিযোগ, বাড়ি নির্মাণ নিয়ে ‘স্বজনপোষণ’ চলছে এলাকায়।
দরজায় কড়া নাড়ছে পুরভোট। ঠিক এই সময়ে আবাস যোজনা নিয়ে শহরবাসীর একাংশের মধ্যে ক্ষোভ ছড়ানোয় ‘অস্বস্তি’তে শাসকদল তৃণমূল। সেই ক্ষোভকে রাজনৈতিক হাতিয়ার করে ময়দানে নেমেছে বিরোধীরা। যদিও বিষ্ণুপুরের তৃণমূল পুরপ্রধান শ্যাম মুখোপাধ্যায়ের আশ্বাস, ‘‘সবাই বাড়ি পাবেন। ২০২২ সালের মধ্যে সাত হাজার বাড়ি তৈরি হবে। একটিও কাঁচা বাড়ি থাকবে না।’’
বিজেপির বিষ্ণুপুর নগর মণ্ডল সভাপতি উত্তম সরকারের অভিযোগ, ‘‘আখের গোছাতে ব্যস্ত বেশির ভাগ কাউন্সিলরই। প্রকৃত দাবিদার বাড়ি পাচ্ছেন না। আবাস যোজনা প্রকল্পে উপভোক্তা নির্বাচনে অস্বচ্ছতা রয়েছে।’’ বিষ্ণুপুরের প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক তথা দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য. স্বপন ঘোষের কটাক্ষ, ‘‘যাঁদের আর্থিক অবস্থা ভাল, তারা বাড়ি পাচ্ছেন। অথচ, যাঁদের প্রয়োজন, তাঁরা পাচ্ছেন না।’’ পুরবোর্ডকে খোঁচা দিতে ছাড়েনি কংগ্রেসও। দলের জেলা সম্পাদক দেবু চট্টোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘‘তোষণ চলছে। কাউন্সিলরদের কাছের লোক হলে তবে বাড়ি মিলবে।’’ যদিও পুরপ্রধানের দাবি, ‘‘নির্মাণ নিয়ে কোনও অভিযোগ থাকার কথা নয়। এখানে উপভোক্তাদের প্রাথমিক পর্যায়ে ২৫ হাজার টাকা দিতে হয় না। দরিদ্র মজুরেরা বাড়ি তৈরি করতে পারেন না। উপভোক্তাদের অনুমতি নিয়েই পুরপ্রতিনিধিরা তদারক করে বাড়ি তৈরি করিয়ে দেন।’’
গৃহহীনদের বড় অংশের অভিযোগ, ‘‘যাঁদের বাড়ি খুবই প্রয়োজন, তাঁরা পাননি। অথচ যাঁদের বাড়ি রয়েছে, তাঁরা পুরনো বাড়ি ভেঙে নতুন বাড়ি তৈরির সুযোগ পাচ্ছেন।’’ আরও অভিযোগ, ‘‘কাউন্সিলরদের একাংশ বাড়ি নির্মাণ নিয়ে স্বজনপোষণ করছেন।’’
পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাটানধার, নামোপাড়া এলাকায় আবাস যোজনায় সে ভাবে বাড়ি নির্মিত হয়নি বলে দাবি স্থানীয়দের। ওই এলাকার বাসিন্দা মমতাদেবী তাঁর ছেলেকে নিয়ে পলিথিনের তাঁবুতে রাত কাটান। তাঁর অভিযোগ, “বার বার ফটো তুলে নিয়ে গেছে অফিসারেরা। কী ভাবে থাকে তা কাউন্সিলর দেখতে পান। তিন বছর ধরে শুনছি, বাড়ি দেওয়া হবে। ঝড় বৃষ্টি হলে রাত কাটাতে পাশের বাড়িতে আশ্রয় নিই।’’
ওই ওয়ার্ডের খড়বাংলা, মেটেপাড়া ও লোহারপাড়ার অনেক পরিবারও ঘর থেকে বঞ্চিত বলে অভিযোগ। শম্ভু মিদ্যা, রঞ্জিত মণ্ডল, বেলা লোহার, মালতি মিদ্যার মতো অনেকের অভিযোগ, ‘‘যাঁদের বাড়ি রয়েছে, তাঁদের অনেকে নেতাদের সঙ্গে ঘুরছেন বলে বাড়ি পেয়েছেন।’’ অভিযোগ মানেননি ওই ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর রাখি ক্ষেত্রপাল। তাঁর বক্তব্য, “যা বরাদ্দ হচ্ছে, তা প্রয়োজন অনুযায়ী বিলি করছি।’’
পুরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের রাজু টুডু, গণেশ টুডু, শিবুলাল টুডু্, রবীন্দ্রনাথ হেমব্রমের মতো অনেকের অভিযোগ, তাঁরা আবেদন করেও বাড়ি পাননি। ওই ওয়ার্ডের শ্যামবাঁধ পাটপুর এলাকায় ১৪টি আদিবাসী পরিবারের বাস। এলাকায় ভোটারের সংখ্যা মাত্র ৩৩। স্থানীয় বাসিন্দা জগন্নাথ টুডুর দাবি, “আমাদের এলাকার বাসিন্দারা ভাঙাচোরা মাটির বাড়িতেই বাস করেন।’’ স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর শ্রীকান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, “শ্যামবাঁধ আদিবাসীপাড়া ও লোহার পড়া এখন অনেক উন্নত। সরকারি আবাস যোজনায় সকলেরই বাড়ি হবে। তবে ধৈর্য ধরতে হবে। আমার ওয়ার্ডে ২২টি পাড়া।”
বাড়ি না পেয়ে ক্ষুব্ধ পুরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সত্যপীরতলা এবং হাঁড়িপাড়া এলাকায় বেশ কয়েকটি পরিবার। সন্ধ্যা মাঝি, মধু সাঁতরার মতো অনেকের দাবি, “এলাকায় খুব কম বাড়ি হয়েছে। ভাঙা বাড়িতে পলিথিন টাঙিয়ে দিন কাটাই।” স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর দিব্যেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “আমার ওয়ার্ডে সাতটি বস্তি এলাকা রয়েছে। সকলের বাড়ি দরকার। অধিকাংশ মানুষের বাড়ি তৈরির মতো জমি নেই। সে কারণে কোথাও কোথাও ইচ্ছা থাকলেও বাড়ি করা যাচ্ছে না।”
পুরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডে বাড়ির জন্য আবেদন করেছিল ৫০টি পরিবার। তিনটি বাড়ি হয়েছে। পাঁচটি বাড়ি নির্মাণের কাজ চলছে। আবাস যোজনায় ‘স্বজনপোষণ’ চলছে বলে অভিযোগ ওই এলাকার বাসিন্দা মিঠু বাউরি, বিমল লোহার, তরুণ বাউরির মতো অনেকের। বাড়ি না পেয়ে ক্ষুব্ধ তেজপাল দক্ষিণপাড়ার আরতি লোহার, বন্দনা লোহারেরাও। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘ঝুঁকি নিয়ে ভাঙা বাড়িতেই থাকতে হচ্ছে।’’ স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর মমতা কুণ্ডুর বক্তব্য, ‘‘সকলের জন্য বাড়ি দেওয়া হলে ভাল হত। বরাদ্দ অনুযায়ী, দিতে হচ্ছে।”
পুরসভার ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের ডাউন কেবিনগড়া এলাকায় ৫০টি পরিবারের বাস। সেখানে আবাস যোজনায় আটটি বাড়ি হয়েছে। সারথি পাল, মঙ্গলা পাশি, সন্ধ্যা বসুদের মতো অনেকেই ভাঙা বাড়িতে বাস করছেন। স্থানীয় কাউন্সিলর রাজীবকান্তি রায়ের আশ্বাস, “সকলেই বাড়ি পাবেন। লোকসংখ্যা বেশি হওয়ায় সমস্যা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy