Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

কেমন আছেন গ্রামের মানুষ, খোঁজ ডিএমের

কেমন আছেন গ্রামের মানুষ, খয়রাশোলের একটি প্রত্যন্ত আদিবাসী গ্রামে শনিবার ঘণ্টাখানেক কাটিয়ে তাই দেখে গেলেন বীরভূমের জেলাশাসক।

খয়রাশোলের বাবুইজোড় পঞ্চায়েত এলাকায় জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু। শনিবার। নিজস্ব চিত্র

খয়রাশোলের বাবুইজোড় পঞ্চায়েত এলাকায় জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু। শনিবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
খয়রাশোল শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:৫৮
Share: Save:

কেমন আছেন গ্রামের মানুষ, খয়রাশোলের একটি প্রত্যন্ত আদিবাসী গ্রামে শনিবার ঘণ্টাখানেক কাটিয়ে তাই দেখে গেলেন বীরভূমের জেলাশাসক।

গ্রামের মানুষ সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন কিনা, রেশন ব্যবস্থা ঠিক মতো চালু রয়েছে কিনা, এলাকার সমস্যা কী, গ্রামবাসীর জীবিকা কী— এমন নানা প্রশ্নের উত্তর জানতে শনিবার দুপুরে খয়রাশোলের বাবুইজোড় পঞ্চায়েত এলাকায় আদিবাসী গ্রাম কুড়ুলিয়া পৌঁছে যান জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু। সঙ্গী ছিলেন মহকুমাশাসক (সিউড়ি) রাজীব মণ্ডল, খয়রাশোলের বিডিও সঞ্জয় দাস, যুগ্ম বিডিও শালিনী মহাপাত্র প্রমুখ। প্রথমবার জেলা প্রশাসনের সর্বোচ্চ আধিকারিককে নাগালে পেয়ে, নানা সুবিধা অসুবিধার কথা মন খুলে বলতে পেরে খুশি গ্রামের ৩৫টি আদিবাসী পরিবার।

জেলাশাসক শ’দুয়েক জনসংখ্যার ওই গ্রামে আসতে পারেন, সে কথা শোনা গিয়েছিল শুক্রবার রাতেই। খানিকটা প্রস্তুত ছিলেন স্থানীয় বাবুইজোড় পঞ্চায়েত ও কুড়ুলিয়া গ্রামের মানুষ। জেলাশাসক সপার্ষদ গ্রামে পৌঁছনো মাত্র তাঁকে মাদল, নাকড়া বাজিয়ে অদিবাসী রীতি মেনে বরণ করা হয়। গ্রামের মাঝে এক জায়গায় বসে শুরু হয় আলোচনা। বেশ কিছু মহিলা, পুরুষ ছাড়াও ছিলেন পঞ্চায়েত প্রধান নবদ্বীপ মণ্ডল, ওই সংসদের পঞ্চায়েত সদস্য চণ্ডীচরণ মণ্ডলেরা। গ্রামের মানুষের হয়ে কথা বলার জন্য ছিলেন মুন্নি মুর্মু, রমাশিস মুর্মুর মতো কয়েক জন।

জেলাশাসক প্রথমেই জানাতে চান গ্রামের সবচেয়ে বড় সমস্যা কোনটি? সমবেত উত্তর আসে জলের সমস্যা। গ্রামবাসী জানান, গ্রামের পুকুর শুকিয়ে যায়। ফলে দৈনন্দিন কাজ থেকে শুরু করে কৃষিকাজের জন্য সেচের জল পেতে সমস্যা হয়। গ্রামবাসী ও পঞ্চায়েত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে প্রস্তাব আসে গ্রামের অদূরে একটি কাঁদর রয়েছে, সেখানে চেকড্যাম করে নালার মাধ্যমে পুকুর-ভর্তি করলে সমস্যা মেটে। ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে সেটা করা যায় কিনা সেটা দেখবেন বলে আশ্বস্থ করেন মৌমিতা গোদারা বসু। এর পরে একে একে উঠে আসে গ্রামের খেলার মাঠ, কমিউনিটি সেন্টার, জাহেরের থান ঘিরে দেওয়ার মতো নানা প্রসঙ্গ।

লক্ষ্মী বাস্কি নামে এক দৃষ্টিহীন মহিলা ডিএমকে নাগালে পেয়ে জানাতে চান তিনি কী ভাবে শংসাপত্র পেতে পারেন। হলদি মুর্মু নামে এক আদিবাসী বৃদ্ধা জানান, বার্ধক্য ভাতা পান না। জেলাশাসক সমস্যা খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করার জন্য এসডিও, বিডিওকে নির্দেশ দেন। ঠিক হয়েছে, আশপাশের কয়েকটি গ্রাম নিয়ে একটি মেডিক্যাল ক্যাম্প করে প্রতিবন্ধীদের চিহ্নিত করে তাঁদের শংসাপত্র দেওয়া হবে। শুধু এক জায়গায় বসে থেকে নয়, গ্রামের পথে হেঁটে হেঁটেও আরও বেশ কিছু মহিলার সঙ্গে কথা বলেন ডিএম। এক বধূকে শিশু কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে জিজ্ঞাসা করেন, শিশুটি কোথায় জন্মেছে। টিকাকরণ হয়েছে কিনা। কোনও শিশুকে রাস্তায় দেখতে পেয়ে তার মাকে জি়জ্ঞেস করেন সে স্কুলে যায় কি না। কী ভাবে গ্রামের মানুষ বিশেষত মহিলাদের স্থায়ী জীবিকার বন্দোবস্ত করা যায়, তা নিয়েও আলোচনা করেন সঙ্গে থাকা আধিকারিক ও পঞ্চায়েত প্রধান, সদস্যদের সঙ্গে।

ওই আদিবাসী গ্রামে যাওয়া নিয়ে সংবাদমাধ্যমকে প্রতিক্রিয়া দেননি জেলাশাসক। তবে বিডিও সঞ্জয় দাস জানাচ্ছেন, গ্রামের মানুষের সঙ্গে কথা বলতে বলতে উঠে আসে ১০০ দিনের কাজ পাওয়া, আবাস যোজনায় বাড়ি পাওয়া, রেশন ব্যবস্থা ঠিক মতো চলছে কি না এমন প্রসঙ্গ। গ্রামে তিনটি স্বনির্ভর দলকে ছাগাল পালনের জন্য গোটারি বা হাঁস পালনের জন্য ডাকারি করার কথাও জানিয়েছেন জেলাশাসক। বিডিও বলছেন, ‘‘ঝাড়খণ্ড লাগোয়া গ্রামের মহিলারা কেন্দুপাতা সংগ্রহ করতে যান, সেটা নিয়ে কিছু করা যায় কিনা শ্রম দফতরের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলেছেন ডিএম ম্যাডাম।’’

জেলাশাসকের গ্রামে আসা এবং নানা সমস্যা মেটাতে তাঁর আশ্বাস পেয়ে খুশি গ্রামের বধূ মুন্নি মুর্মু, যুবক রমাশিস মুর্মুরা। তাঁরা বলছেন, ‘‘আমাদের সব কথা মন দিয়ে শুনেছেন ম্যাডাম। সমস্যা মেটাতে অত্যন্ত ইতিবাচক মনে হয়েছে তাঁর মনোভাব। আমরা আশায় থাকব।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Khoyrasol Tribal District Magistrate
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE