পুরুলিয়া শহরে সরকারি উদ্যোগে তৈরি সমবায়ের মিষ্টি বিপণি। নিজস্ব চিত্র
না খেলে নেই কোনও সুখ!
রসনাপ্রিয় বাঙালির ক্ষেত্রে কথাটা ষোলোআনা খাটে। আর সে কথা যদি হয় মিষ্টিমুখের, তবে কড়া ডায়েটের যুগেও বাঙালিকে টেক্কা দেওয়া ভার। এই মিঠে ভালবাসার কথা মাথায় রেখেই সরকারি উদ্যোগে সমবায়ের মাধ্যমে মিষ্টি তৈরি ও বিপণনের বন্দোবস্ত হল জঙ্গলমহলের জেলা পুরুলিয়ায়। শুধু রসগোল্লা, গোলাপজাম, ল্যাংচা, প্যাঁড়া নয়, মিলবে দুধ-দই-পনিরও।
‘পশ্চিমবঙ্গ সমবায় দুগ্ধ উৎপাদক মহাসঙ্ঘ লিমিটেড’-এর পুরুলিয়া জেলা শাখা ‘মানভূম সমবায় দুগ্ধ উৎপাদক মহাসঙ্ঘ লিমিটেড’-এর অধীনস্থ সংস্থা ‘বেনস্’-এর উদ্যোগে সদ্য আত্মপ্রকাশ করেছে ‘মিষ্টি জঙ্গলমহল’। পুরুলিয়া শহরের প্রাণকেন্দ্রে জেলাশাসকের অফিসের ঠিক উল্টো দিকে শনিবার এই মিষ্টান্ন বিপণির উদ্বোধন করেন রাজ্যের স্বনির্ভর গোষ্ঠী ও স্বনিযুক্তি প্রকল্প বিষয়ক মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো। অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বলেন, “সরকারি ব্যবস্থাপনায় রকমারি মিষ্টি ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ভাবনা এই প্রথম। আমরা দেখছি যাতে আরও বেশি স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে এই ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত করা যায়।” জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তী জানান, খাঁটি দুধে তৈরি নানা জিনিস বিপণনে পুরুলিয়ার নিজস্ব ‘ব্র্যান্ড’ তৈরিরও চেষ্টা চলছে। অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) প্রবালকান্তি মাইতি বলেন, “ভবিষ্যতে জেলার অন্য প্রান্তেও মিষ্টি জঙ্গলমহলকে ছড়িয়ে দেবার পরিকল্পনা রয়েছে।”
বেনস্-এর প্যাকেটবন্দি দুধ পুরুলিয়ার ঘরে ঘরে পরিচিত। লাগোয়া ঝাড়খণ্ডের মানুষের কাছেও বেনস্ পরিচিত নাম। পুরুলিয়া শহরের উপকন্ঠে বেলগুমা এলাকায় এই সমবায়ের রসুইঘর। সেখানেই পুঞ্চা, কাশীপুর, হুড়া, পুরুলিয়া ১ ব্লক-সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে দুধ পৌঁছয় শীতলীকরণের জন্য। জীবাণুমুক্ত করে প্যাকেট বন্দি দুধ সেখান থেকেই জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে। এই রসুইঘরেই এ বার তৈরি হবে রকমারি মিষ্টি।
হঠাৎ মিষ্টির দুনিয়ায় পা রাখার ভাবনা কেন? বেনস-এর পরিচালন অধিকর্তা পীযূষকান্তি রায় জানান, তিনি দেখেছেন পুরুলিয়ায় ভাল মিষ্টির চাহিদা আছে, কিন্তু সেই অনুপাতে জোগান নেই। বীরভূমের সিউড়ির বাসিন্দা প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের প্রাক্তন কর্মী পীযূষবাবু আদতে পুরুলিয়ার সাঁতুড়ির মানুষ। তিনি বলেন, “পুরুলিয়া বা আশপাশের অনেক দোকানেই বাইরে থেকে মিষ্টি আসে। ভেবে দেখলাম দুধ তো হাতের নাগালেই রয়েছে। মিষ্টি তৈরি করলে ভাল বাজার মিলবে।” পীযূষবাবু আরও জানালেন, এ ক্ষেত্রে সিউড়ির মোরব্বার খ্যাতি তাঁকে প্রেরণা জুগিয়েছে। তাঁর কথায়, “সিউড়ির মোরব্বার যদি এত চাহিদা থাকে, তবে জঙ্গলমহলের মিষ্টিও বাজার তৈরি করতে পারবে। শুধু সঠিক দামে ভাল মানের মিষ্টি ক্রেতার হাতে পৌঁছে দিতে হবে।”
সেই ভাবনা থেকেই বেশ কয়েকজন কারিগরকে বহরমপুরে ‘মিল্ক ট্রেনিং সেন্টার’-এ প্রশিক্ষণ নিতে পাঠান পীযূষবাবু। তারপর গত নভেম্বরে দুর্গাপুরে মিষ্টি উৎসবে প্রথম ‘বেনস্’-এর মিষ্টি পাঠানো হয়। ভাল সাড়া মেলে। পীযূষবাবুর কথায়, “এরপর আত্মবিশ্বাস তৈরি হল। বুঝলাম আমাদের মিষ্টিরও কদর রয়েছে। বিয়েবাড়ি ও অনুষ্ঠান বাড়ির অর্ডার নিয়ে রসগোল্লা ও আরও কিছু মিষ্টি বানাতে শুরু করলাম।” পুরুলিয়ার বিভিন্ন প্রান্ত তো বটেই, ঝাড়খণ্ডেও গিয়েছে সেই মিষ্টি।
এ বার সেই মিষ্টিই মিলবে দোকানে। পীযূষবাবু বলেন, “অনেকেই বলছিলেন পুরুলিয়া শহরের যদি আমাদের কোনও কাউন্টার থাকে তাহলে ভাল হয়। জেলাশাসককে সে কথা জানাতে উনি আমাদের মিষ্টি এখানে বিক্রির ব্যবস্থা করে দিলেন।” জনপ্রিয় সব মিষ্টিই মিলবে এখানে। রসগোল্লা পাওয়া যাবে ৫ টাকা ও ৭ টাকায়, গোলাপজাম, ল্যাংচা ও প্যাঁড়ার দাম ৬ টাকা করে, দই ১০০ টাকা কেজি, পনিরের দাম ২৫০ টাকা কেজি আর ঘি পাওয়া যাবে ৪০০ টাকা কেজি দরে। সাধারণ ক্রেতার কথা ভেবে ২০০ গ্রাম পনিরের ছোট প্যাকেট ৫০ টাকায় এবং ২৫০ গ্রাম ঘি ১০০ টাকায় বিক্রির ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। পীযূষবাবুর দাবি, “এই দামে বাজারচলতি মাপের থেকে অনেক বড় আকারের মিষ্টি দেব আমরা। গুণগত মান নিয়ে কোনও প্রশ্ন থাকবে না।” ভবিষ্যতে মোরব্বা ও সুগার ফ্রি সন্দেশ তৈরির ইচ্ছে আছে বলে জানান তিনি।
শনিবার উদ্বোধনের পর জঙ্গলমহলের মিষ্টি চেখে দেখেছেন মন্ত্রী নিজে। সুস্বাদু বলে তারিফও করেছে। এ বার মিষ্টিমুখের অপেক্ষায় পুরুলিয়া।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy